রাত ১:০৬ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দৈনিক সংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ডা. শফিকুর রহমান : সাংবাদিকরা সেনাপতি হয়ে সত্য প্রকাশে সর্বদা অবিচল থাকতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জানুয়ারি ২০২৫

 

 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট আমলে সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের ওপর জুলুম চালানো হয়েছিল। সেই সময় সংবাদ মাধ্যম যদি সত্যকে পুরোপুরি তুলে ধরতে পারতো তাহলে ফ্যাসিস্টরা চেপে বসতে পারতো না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের সেনাপতি হয়ে সত্য প্রকাশে সর্বদা অবিচল থাকতে হবে। পরিস্থিতি যেমনই হোক সত্য প্রকাশে পিছপা না হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
আজ সোমবার সকালে মগবাজারে দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ে আয়োজিত দৈনিক সংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্পাদক আযম মীর শহীদুল আহসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও নায়েবে আমীর ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মো: তাহের, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের আমীর মোঃ নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, । বাংলাদেশ পাবলিকেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুর রব, সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও বিপিএল এর ভাইস চেয়ারম্যান মো: মোবারক হোসাইন।

সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবে সভাপতি ও কালের কন্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাষ্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আব্দুল হাই শিকদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ,, দৈনিক নয়াদিগন্তের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সালাহ উদ্দিন বাবর, দৈনিক সাতমাথা সম্পাদক মো: সাহাবুদ্দিন, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার চেয়ারম্যান একেএম রফিকুন্নবী, চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান, লেবার পার্টির সভাপতি ডা মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা’র সহসভাপতি রাশেদ প্রধান, সামাজিক অধিকার আদায়ের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করেন কারী বেলাল হোসেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ.টি.এম. মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ এর মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, ইসলামী ব্যাংক মৌচাক শাখার ব্যবস্থাপক ও ইভিপি ড. মো. আশরাফ আলী, গণঅধিকার পরিষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের প্রচার সম্পাদক এ.এইচ রনি কে রুহী প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন, নয়া দিগন্তের নির্বাহী সম্পাদক মাসুমুর রহমান খলিলী, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, এনটিভির সিএনই ফখরুল আলম কাঞ্চন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে’র সহকারী মহাসচিব বাছির জামিল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, ডিইউজের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম, পার্লামেন্ট জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি হারুন জামিল, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ সভাপতি এডভোকেট হারুন অর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতিকুর রহমান। আরও যারা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আবু সালেহ আকন ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, বাংলাদেশ ক্রইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সহ সভাপতি উমর ফারুক আল হাদী, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব এডভোকেট গোবিন্দ্র চন্দ্র প্রমাণিক, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ইন্দ্রজিৎ কুমার ঘোষ ও সহ সভাপতি নাসিম শিকদার, সাব এডিটর কান্সিলের সভাপতি মুক্তাদির অনিক ও সেক্রেটারি জাওহার ইকবাল এবং সহকারী সেক্রেটারী মনির আহমেদ জারিফ প্রমুখ ।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠন ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। সবমিলিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় দৈনিক সংগ্রামের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দৈনিক সংগ্রামের নামের সাথেই তার পরিচয়টা লেগে আছে। আসলে দৈনিক সংগ্রামের বয়স পঞ্চাশ নয়, বয়স আরো অনেক বেশি। দৈনিক সংগ্রামের পুর্নজন্ম থেকে বয়সটা আজকে ধরা হয়েছে। এবং কেন সেই পুর্নজন্ম হয়েছে ? আপনারা জানেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই সংবাদপত্রের উপর চরম নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছিল। সবগুলো মিডিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত মাত্র চারটি মিডিয়া ছিল। এই তলোয়ারের মধ্যে যারা পড়েছিলেন, সংগ্রামও তার মধ্যে একটি ছিল। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে সেই যাত্রা আবার শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, এই সংগ্রামের সূচনালগ্নে মালিক হিসেবে যার নাম ছিল, আজকে তাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। পরবর্তী পর্যায়ে সংগ্রাম তার সংগ্রামী যাত্রা অব্যাহত রাখতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রচন্ড বাধার মুখে পড়েছে। সর্বশেষ সাড়ে ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদ সংগ্রামের উপর আক্রোশ ঝেড়েছে। তাতের ছোতা ছিল, অন্যায়ভাবে যাদেরকে বিচারের নামে দুনিয়া থেকে বিদায় করেছিল, এ ধরনের একজন জাতীয় নেতাকে শহীদ বলেছিল। সংগ্রাম শহীদ বলতে গেল কেন ? নতুন করে শহীদের সংজ্ঞা তারা সংজ্ঞায়িত করলো। তারা যাকে শহীদ বলবে রাষ্ট্রে তাকে শহীদ বলতে হবে, তারা যাকে শহীদ বলবে না তিনি শহীদ হলেও তাকে শহীদ বলা যাবে না। সেই দিন দৈনিক সংগ্রামের উপর কী তান্ডব হয়েছে তা আপনারা জানেন।

তিনি আরো বলেন, দৈনিক সংগ্রাম মিডিয়া পরিবারের সদস্য ছিল। সেই দিন যদি আপনারা সবাই পাশে আসতেন, দৈনিক আমারদেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক বলে গেলেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। তাহলে পরবর্তী পর্যায়ে অনেক মিডিয়ার উপর অত্যাচার নির্যাতন কমে যেত। এর আগের পর্বটা গিয়েছিল মাহমুদুর রহমান সাহেবের উপর দিয়ে। এই দুইজনই কেবল শুধু নির্যাতিত নয়, নির্যাতনের শিকার হয়ে কেউ কেউ দুনিয়া থেকে চলে গেছে। কাউকে আবার বাংলাদেশের সীমানায় গিয়ে ছুড়ে ফেলা হয়েছে। জাতির উপর তারা যেমন তান্ডব চালিয়েছিল, সংবাদ জগতের উপরও তান্ডব চালিয়েছিল। একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক বলে গেছেন, সেই সময় অনেকে সত্যকে সত্য হিসেবে তুলে না ধরে ফ্যাসিবাদের সাথে আপস করেছিল। সত্য মেনে নেয়ার মাঝেই সৌন্দর্য্য। যদি জাতির র্দপন হিসেবে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরা ভূমিকা পালন করতেন, তাহলে ফ্যাসিবাদি শাসন এভাবে জাতির উপর ঝেকে বসতে পারতো না।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভ গঠনতান্ত্রিকভাবে স্বীকৃত আর সিভিল কনভেনশন হিসেবে মিডিয়াকে রাষ্ট্রের চতুর্থ সম্ভ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। একটি ঘরের চারটি পিলারের মধ্যে একটি যদি বিধ্বংস্ত থাকে তাহলে ঘর তো টিকবে না। এই একটি কারণেই ভেঙ্গে পড়বে। চারটি পিলার শক্তভাবে দাড়িয়ে থাকলে ঘরটি ভালোভাবে দাড়িঁয়ে থাকবে। আমাদের সমাজটা ভেঙ্গে পড়ার এটাও একটি কারণ কি না, এ বিবেচনা করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি তিনি আহবান জানান।

তিনি আরো বলেন, জাতি হিসেবে যারা এগিয়ে যেতে চায়, তারা পেছন নিয়ে কামড়া কামড়ি করে না। পেছনের কোন দু:স্বপ্ন বা দু:শাসন যদি জাতিকে তাড়া করে এটি স্মরণ করিয়ে দেয়া সাংবাদিকদের দায়িত্ব। একটি সংবাদ মাধ্যমের দুইটি অংশ থাকে একটি হচ্ছে নিউজ আরেকটি হচ্ছে ভিউজ। নিউজটি একেবারেই সরাসরি সাদাকে সাদা বলবে এবং কালোকে কালো বলবে। এখানে সাংবাদিকের কোন বক্তব্য সংযোজন হবে না এবং সত্য থেকে বিয়োজনও হবে না। যিনি যেভাবে বলেছেন, যিনি যেভাবে লিখেছেন হুবহু সেভাবেই তুলে ধরতে হবে। ফ্যাসিবাদী আমলে এটি একেবারেই হয়নি। এখনো তার কিছু কালো ছায়া রয়ে গেছে। কারণ রোগ যখন পুরনো হয়ে যায়, তখন এটাকে ক্রনিক ডিজিজ বলে। ক্রনিক ডিজিজ কিন্তু সহজে সারে না, কিন্তু সারে, সময় লাগবে। আমরা আশা করি এটি সারবে, থাকবে না।

তিনি বলেন, সংগ্রামের একটি আদর্শ লক্ষ্য আছে এটা আমরা সবাই জানি। সংগ্রাম তার আদর্শের ক্ষেত্রে কখনো আপস করেনি, মাথা নত করেনি। বিশেষ করে স্বাধীন বাংলাদেশে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জনস্বার্থের বিষয়ে সংগ্রাম তার নিজস্ব জায়গার পরিসর যতই ক্ষুদ্র হোক, সেখান থেকে সংগ্রাম করেই চলেছে। এ ক্ষেত্রে এখানে সংগ্রাম শ্রদ্ধা পাওয়ার উপযুক্ত। তার মানে এটা নয় যে, সংগ্রাম সকল সেক্টরের সংবাদ প্রকাশে স্বয়ংসম্পূর্ণ সংবাদ মাধ্যম এটা আমি বলবো না। সকল জায়গায়ই কিছু ঘাটতি থাকে, সংগ্রামেরও কিছু ঘাটতি রয়েছে। সংগ্রামের ভালোটাকে ভালো বলবো, কিন্তু দুর্বলতা চোকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে, তাহলে সংগ্রাম আগামীর পথ চলায় দেশ ও জাতির জন্য আরো ভালো কিছু করতে পারবে।

তিনি নির্যাতিত সাংবাদিকদের কথা উল্লেখ করে বলেন, মাহমুদুর রহমান ও আবুল আসাদসহ সাংবাদিক নির্যাতনের প্রত্যেক ঘটনার আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সাথে এই নির্যাতিত সাংবাদিকদের পাশে আমরা আছি, গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে থাকবো। তাদের প্রতি নিবেদন থাকবে, এ লড়াইয়ে সেনাপতি হিসেবে আপনারা আপনাদের দায়িত্ব অব্যাহত রাখবেন। জাতি একদিন আপনাদেরকেই স্মরণ করবে। আপনারা দুনিয়াতে না থাকলেও আপনাদের কৃতি থেকে যাবে। আপনাদের অনুসারীরা আপনাদেরকে অনুকরণীয় হিসেবে নিবে। দুরাচার ও স্বৈরাচারের কাছে সবাই মাথানত করেনি। কিছু সেনাপতি ছিলেন তারা নেতৃত্বে দিয়েছিলেন।
সংগ্রাম পরিবারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংগ্রাম পরিবারের প্রতি আমাদের ভালোবাসা আল্লাহ তায়ালা কবুল করুক। তারা চরম দুর্দিনে ছিলেন। কিছু কিছু জানতাম, কিন্তু বড় কিছু করতে পারি নাই। সমস্ত বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হলো। প্রাইভেট বিজ্ঞাপন যাতে না দেয়া হয়, যারা বিজ্ঞাপন দিতেন তাদের শাসানো হতো। একটি সংবাদমাধ্যম যদি বিজ্ঞাপন না পায়, তাহলে এটি চলবে কি করে? এটি তো একটি শ্বেতহস্তি, তার খাবার আসতে কোথা থেকে? সে সময়ে সংগ্রামের সাথে যারা ছিলেন, তারা খেয়ে না খেয়ে যুদ্ধটা করেছেন। আজকের এ পরিবেশ থেকে হয়ত তারা অতীতের কষ্টের কথা আশা করি ভুলে যাবেন। তারা সেদিন যে কষ্ট করে যুদ্ধ ও সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন, আগামীতে যদি আল্লাহ না করুক কোন অন্ধকার এ জাতির উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, সেদিনের জন্য সংগ্রাম তার কলমের মাধ্যমে গর্জন করে উঠবে সেই দোয়া করি। আল্লাহ তাদের যাত্রা অব্যাহত রাখুক। এবং জাতির খেদমতে সংগ্রামকে আল্লাহ তায়ালা কবুল করুক।
স্বাগত বক্তব্যে দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শহীদুল আহসান বলেন, ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর দেশ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে একটি উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য। দৈনিক সংগ্রাম সেই উন্নত বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ-এর ভূমিকা পালন করছে। দৈনিক সংগ্রামের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আয়োজনের এই সময়ে আবার মনে করিয়ে দিতে চাই সংগ্রাম পত্রিকার পথচলা কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, এখনও নেই। কারণ দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা তার ৫০ বছরের পথচলার ইতিহাসে অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে এবং বরাবরই সংগ্রাম সত্য প্রকাশে ছিল আপোষহীন। গত ১৬ বছর আওয়ামী শাসনকালে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা অনেক জুলুমের শিকার হয়েছে। সংগ্রাম হলুদ সাংবাদিকতার গড্ডলিকা প্রবাহে কখনো গা ভাসিয়ে দেয়নি বরং সব সময় সত্যের অনুসন্ধিৎসায় দৃঢ় প্রত্যয়ী থেকেছে এবং আগামী দিনে তার ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখবে বলে আমরা আস্থাশীল।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, দৈনিক সংগ্রাম ৭১ এর পর অন্ধকার বাংলাদেশে আলোকবর্তিকা ছিল। গত ৫০ বছর দৈনিক সংগ্রাম সত্যের পক্ষে লড়াই সংগ্রামে ছিল অবিচল। সংবাদ কে একটু ছোট করে বেশি সংবাদ দেয়ার চেষ্টা করা উচিত সংগ্রামের। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা আগামী দিনে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে ও এবং সবার কথা বলবে ইনশাআল্লাহ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, দৈনিক সংগ্রামের জন্য সবার কাছে দোয়া চাই। দৈনিক সংগ্রাম সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ও ইসলাম কায়েম করার জন্য এককাতারে কাজ করে যাচ্ছে। সত্যের জন্য দৈনিক সংগ্রাম অতীতে লড়াই করেছে, বর্তমানেও লড়াই করছে ভবিষ্যতে লড়াই করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
মাহমুদুর রহমান বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলাম আমি। আজ অনেক দিন পরে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা কতৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যখন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করে দেয় তখন আমার দেশ পত্রিকা সংগ্রামের প্রেসে ছাপা হয়। আমি তখন ডিবি হেফাজতে বন্দী এবং অনশন করি আমার মা এবং দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়ার কারণে। দৈনিক আমার দেশ ও দৈনিক সংগ্রামের দুর্দিনে সাংবাদিক সমাজ নিরব ছিল। দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো সাংবাদিককে গ্রেফতার করা যাবে না। উল্লেখ্য যে, দৈনিক সংগ্রাম পরিবারের পক্ষ থেকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করা হয়।

সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে হাসান হাফিজ বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকাকে গলাটিপে মেরে ফেলতে চেয়েছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রামের প্রতীক। অনেক আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা ফ্যাসিস্ট মুক্ত হয়েছি। আমাদের ভুলের কারণে যেন আর ফ্যাসিস্টরা ফিরে না আসতে পারে এইজন্য সোচ্ছার থাকতে হবে।

এম আবদুল্লাহ বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের মূল স্তম্ভ। ৫ আগস্টের পর স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ তৈরি হয়েছে। এটিকে ধরে রাখতে সাংবাদিকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ৬৫ জন সাংবাদিককে হত্যা, অনেককেই আহত এবং অনেক মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার অফিসে হামলা করা হয়েছে এবং প্রবীণ সম্পাদক ও বুদ্ধিজীবি আবুল আসাদকে জেলে বন্দি করা হয়েছে এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লগি সরকার কিন্তু সেদিন আমরা সেভাবে প্রতিবাদ জানাতে পারিনি। তিনি স্বাধীন সাংবাদিকতাকে গণতন্ত্রের মূলস্তম্ভ উল্লেখ করে সাংবাদিকদের জাতির বিবেক হিসেবে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, গত ১৬ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসন জুলুমের শিকার হয়েছে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা। দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদ দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন।
এম এ আজিজ বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ও জামায়াত মজলুম হয়েছে গত ১৬ বছরে আওয়ামী দুঃশাসনের কবলে পড়ে। সবার মত তোলার জন্য আহ্বান জানাবো দৈনিক সংগ্রামকে।

কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ঐতিহ্যবাহী পত্রিকা দৈনিক সংগ্রাম। শত নির্যাতনের মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে ছিল। নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে সংগ্রাম পত্রিকা আপোষ করেনি। দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদে টেনে হিচড়ে জেলে নিয়ে যায় ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লগি সরকার। আমাদের কে ঐক্য বদ্ধ হয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। শত শত শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমরা আর হারাতে দিব না। আমরা পেশাজীবিরা ঐক্যবদ্ধ ভাবে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।

জামায়াত নেতৃবৃন্দের মধ্যে রফিকুল ইসলাম খান বলেন, দৈনিক সংগ্রাম দেশের অন্যতম প্রধান ও পুরনো পত্রিকা। ফ্যাসিবাদের সময়ে দৈনিক সংগ্রামের উপর টর্নেডো বয়ে গেছে। তাতেও ন্যায় ও সত্যের মধ্যে অবিচল ছিল। ভবিষ্যতেও ন্যায় ও সত্যের পথে এগিয়ে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সংগ্রাম পত্রিকার সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞা, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। বিগত পঞ্চাশ বছরে নানা চড়াই উৎরাই ও নির্যাতন উপেক্ষা করে সংগ্রাম নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পেরেছে। সংগ্রাম ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরোয়অ নাকে সত্যের প্রচার অব্যাহত রেখেছে। কোন রক্তচক্ষুর কাছে মাথা নত করেনি। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করে গেছে।

তিনি বলেন, বিগত ৫০ বছরে দৈনিক সংগ্রাম যে সকল সংবাদকর্মী তৈরী করেছে তা মিডিয়া অঙ্গনে জায়গা করে নিয়েছে। নতুন বাংলাদেশ বির্নিমানে কারো রক্ত চক্ষু পরোয়া না করে সত্য প্রচার অব্যাহত রাখবে। তিনি নিপীরিত দৈনিক সংগ্রাম পরিবারের প্রতি শুভেচ্ছা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন।

এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, সুদীর্ঘ ৫০ বছর পার করে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা। গত ৫০ বছর সংগ্রাম পত্রিকা আপোষহীন ছিল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা আপোষহীন থাকবে এই প্রত্যাশা আমাদের সবাই। অতীতের মতো আগামীদিনে সত্য প্রকাশ ও প্রচারে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা তার লড়াই সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে।

আব্দুর রব বলেন, সংগ্রাম সংগ্রাম করেই অর্ধশত বছর পার করেছে। সত্য খবর প্রকাশে সংগ্রাম ছিল অবিচল। এখনও সেইধারা অব্যাহত আছে। সত্য প্রকাশে অতীতের মতোই সংগ্রাম আপোষহীন থাকবে এই প্রত্যাশা আমাদের।

অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, দৈনিক সংগ্রাম কিছু জনশক্তি তৈরী করেছেন। এ জন্য সংগ্রামের প্রতি কৃতজ্ঞ। জাতির জন্য দৈনিক সংগ্রাম অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে এবং অবদান রেখেছে। অনুকূল পরিবেশ কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যতে আরো বেশি অবদান রাখার জন্য তিনি আহবান জানান।

ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ২৪ গণ-অভ্যুত্থানের সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের পাশাপাশি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা অনেক অবদান ছিল। অনেক কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ৫০ বছর পার করেছে। দেশের স্বার্থে জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিশেষ করে বিএনপি-জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধ দেখতে চাই। তাই আর ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা মাথাচড়া দিয়ে উঠতে পারবে না।

রাশেদ প্রধান বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আমার দলের পক্ষে সংগ্রামী অভিনন্দন। সংগ্রাম পত্রিকা মাথা নত করেনি সত্য তুলে ধরা ক্ষেত্রে। ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা।

সামাজিক অধিকার আদায়ের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ এর প্রধান সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও গুম হওয়া সব মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি এই আক্ষেপ করেন তিনি। ‘অনেক ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আমরা ৫ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। অনেক আশা করেছিলাম, শেখ হাসিনা চলে গেছেন, তার শাসনামলের অপকর্মগুলো বন্ধ হচ্ছে! কিন্তু তার পরবর্তী সময়ে দেখলাম আমাদের আশঙ্কাগুলো আরও বেশি বেড়ে যাচ্ছে। কারণ প্রতিটি দিন যাচ্ছে, কিন্তু আমরা গুম হওয়া ব্যক্তিদের কোনও সন্ধান পাচ্ছি না।
তিনি আরও বলেন, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা গত ১৬ বছর পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের অনেক জুলুম নির্যাতনের শিকার হয়েছে। তারপরও দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা আমাদের পাশে ছিল সাহসীকতার সাথে গুম হওয়া মানুষের সংবাদ প্রকাশ করেছে। আজকের এই দিনে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার ভূমিকার কথা স্বীকার করছি এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠান শেষে মো: মোবারক হোসাইন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, সংবাদপত্র জগতের সিনিয়র অনেকে এসেছেন এবং বক্তব্য রেখেছেন। সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি। দৈনিক সংগ্রম পরিবারের সদস্যরা এ অনুষ্ঠান সফল করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাদের সবাইকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি।

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *