নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
ঢাকাসহ সারাদেশে চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বৃদ্ধি প্রশাসনের সমন্বয়হীনতার কারনেই বলে অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী। আজ সোমবার সকালে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির তুলে ধরে এই মন্তব্য করেন।
রিজভী বলেন, আজকে সাড়ে চার মাস হতে চললো, কেনো ছিনতাইকারী বেড়ে যাবে? ছিনতাইকারীর ছুরিতে ৯ জন লোক ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকায় মারা গেলো কেনো? কেনো আজকে পাড়ায়-মহল্লায় ছিনতাইয়ের প্রকোপ বেড়েছে। প্রত্যেকটি জায়গায় চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই বেড়ে গেছে। তাহলে কিভাবে প্রশাসন চলছে?
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তি কামনায় এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। গত কয়েকদিন ধরে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’য় অসুস্থ। এই অসুস্থতার কারণে ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ তিনি যেতে পারবেন না বলে ওই সমাবেশ স্থগিত করা হয়।
রিজভী বলেন, অনেকে বঞ্চিত ছিলেন,প্রমোশন হয়েছে। অনেক কিছুই হয়েছে। তাহলে কেন অথোরিটি আইন প্রয়োগ করতে পারছে না, প্রশাসনের কর্তৃত্ব আপনি বজায় রাখতে পারছেন না। তার মানে প্রশাসনের যে কো-অডিনেশন সেই কো-অডিনেশনটা, সেই সমন্বয়নটা ঠিক মতো হচ্ছে না। তিনি বলেন, আপনাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) কাছে প্রত্যাশা হচ্ছে একটা শান্তির শহর হবে। কারণ এখন তো আর ছাত্রলীগ নাই, এখন তো যুবলীগ নাই, তাহলে এটা হবে কেনো? এই পরিস্থিতি আসবে কেনো?
উপদেষ্টাদের সমালোচনা করে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, উপদেষ্টারা অনেক কথা বলছেন, অনেক বড় বড় কথা বলছেন এবং আমরা যদি কিছু বলি, আমাদেরকে উল্টো সবক দিচ্ছে। আপনারা ৫৩/৫৪ বছর কিছু করতে পারেননি…এখন আমরা করছি। আরে বাবা, সারা পৃথিবীর অর্জন তো রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়েছে, যুদ্ধ তো হচ্ছে পলিটিক্যাল মুভমেন্টের এক্সনেটনশন। যে স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে, এটাও তো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই অর্থে একজন মেজর ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরে সরকার গঠন হয়েছে, জিয়াউর রহমানরা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
প্রতিবেশী দেশ ভারত অনেক গুমের সহযোগী ছিলো অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এই যে গুম কমিশনের কাছ থেকে অনেক তথ্য পাচ্ছি। অনেক গুমের সহযোগী ছিলো ভারত। আজকে অনেক লোককে ওখান থেকে ছাড়ছে, এখন এটার ব্যাপারে তো একটা তদন্ত হওয়া উচিত। এই যে লোকগুলোকে ছাড়ছে তাহলে কি এরা ভারতে গুম ছিলো?
রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার গুমের সহযোগী ছিলো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তার প্রমাণ তো আমাদের স্থায়ী কমিটির মেম্বার সালাহউদ্দিন আহমেদ। বাংলাদেশে সে দুই মাস গুম থাকলো তারপরে তাকে পাওয়া গেলো ভারতে। মানে বন্ধুত্ব, প্রেম, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা এতো নিবিড় ছিলো যে, শেখ হাসিনার অনেক অপকর্মের দায় ভারত নিজেই নিয়েছে এবং এই দায় নিতে গিয়ে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র শূণ্য করা, বিরোধী দল শূণ্য করার ক্ষেত্রে ভারতের কর্তৃপক্ষের যে দায় নেই এটা অস্বীকার করা যাবে না।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করেছে তাদের নিয়ে আপনারা কাজ করুন। পার্শ্ববর্তী দেশ কিন্তু বসে নেই। তারা নানা ধরনের একটা পর একটা দাবার চাল দিতে থাকবে এবং দাবার চাল যদি বুঝতে না পারেন তাহলে দেশের কিন্তু অনেক ক্ষতি হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, কোনো কোনো উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচন নিয়ে এত তাড়া কীসের? এত তাড়া তো নেই। শেখ হাসিনা অনেক লম্বা করেছেন, ১৫ বছর লাগিয়েছেন। আপনারাও যদি তাদের সঙ্গে আরও অনেক বছর যোগ করতে চান তাহলে তো জনগণের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেবে, পার্থক্য কোথায়?
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার তো কোনো বিষয় না, এটি একটি ছোট্ট ঘটনা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে আদেশ দেবেন, সেটি যদি প্রশাসন না করে এটাই তো সংস্কার। এর চেয়ে বড় কোনো সংস্কার আর হয় না। অর্থাৎ ওই আদর্শ যদি আইনসংগত না হয়, ডিসি, এসপি , প্রশাসনিক লোক যদি সেই আদেশকে না বলে, এটাই সংস্কার। এখন যদি বিচারককে অবৈধ নির্দেশ দেন, অমুককে জেলে ঢোকান, অমুককে সাজা দিন। যদি বিচারক না বলে, এটাই তো সংস্কার, এর চেয়ে সংস্কার আর কী হতে পারে? আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা যদি নিশ্চিত করতে হয়, তাহলে একটা পরিবেশ তৈরি করুন। যে পরিবেশে বিচারকরা নির্বাহী বিভাগের অন্যায় আদেশকে না বলতে পারে। এই একটি শব্দের ভেতরেই শত সংস্কার বিদ্ধ আছে। যেটা শেখ হাসিনার আমলে সম্ভব হয়নি।
দোয়া মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ রন্ঙ্গানের মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য রাখেন।
জা ই / এনজি