নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ নভেম্বর ২০২৪

খোদ যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার উপলব্ধি। ওপরের কথাটা তারই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১৭ নভেম্বর, রোববার মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিসিবির পুনর্গঠন করতে না পারার কারণ ব্যাখ্যা করে ক্রীড়া উপদেষ্টা গঠনতন্ত্রের বাধ্যবাধকতার কথা জানান। ‘গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে নতুন পরিচালক নিতে হবে। সেটাতেও সমস্যা আছে। বিভিন্ন জেলা ক্রীড়া সংস্থা গঠনের কাজ চলছে। সেগুলো হলে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে আরও পরিচালক আসবেন। বিসিবির বিভিন্ন বিভাগও পুনর্গঠিত হবে। এর মাধ্যমে বিসিবির কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আসবে’- এমন আশাবাদ ব্যক্ত হয় তার কণ্ঠে।
ক্রীড়া উপদেষ্টার এমন মন্তব্যের পর ক্রীড়াঙ্গন ও ক্রিকেট পাড়ায় জেগেছে প্রশ্ন, বিসিবি কেন এখনও জোড়াতালি দিয়ে চলছে? বোর্ড কার্যক্রমে কেন গতি ফিরে আসছে না? এ প্রশ্ন শুধুই ক্রীড়া উপদেষ্টারই নয়, ক্রিকেটপ্রেমীদেরও।
শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিসিবির পর্ষদের প্রায় ৭০ ভাগ পরিচালক লোকচক্ষুর আড়ালে। তারা কে কোথায় আছেন, তা এখনো অজানা।
কাজেই নাজমুল হাসান পাপন বোর্ড প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ফারুক আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার আগেই বোর্ডের ১৪-১৫ পরিচালক অন্তরালে অবস্থান করছিলেন। তারা আর বোর্ডে আসেননি।
একটানা বোর্ডের তিনটি নির্ধারিত সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণে ওই পরিচালকদের ১১ জন (নাজমুল হাসান পাপন, আ জ ম নাসির, শেখ সোহেল, মঞ্জুর কাদের, আহমেদ নজিব, ইসমাইল হায়দার মল্লিক, অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, সফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, তানভির আহমেদ টিটু, ওবায়েদ নিজাম ও গাজী গোলাম মোর্তজা পাপ্পা) এরই মধ্যে হয়েছেন পদচ্যুত।
আর পদত্যাগ করে সরে দাঁড়িয়েছেন এনায়েত হোসেন সিরাজ, খালেদ মাহমুদ সুজন ও নাইমুর রহমান দুর্জয়। এছাড়া পরিবর্তন হয়েছে দুটি পরিচালক পদে। জালাল ইউনুস এবং আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি ছিলেন এনএসসি কোটায়। তাদের দু’জনের পরিবর্তে বোর্ডে এসেছেন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদিন ফাহিম। ফারুক আহমেদ এখন সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
সবমিলিয়ে ২৫ জনের পরিষদের ১৪ জন এখন আর বোর্ডের সাথে নেই। এছাড়া বরিশাল জেলা ক্রীড়া সংস্থার মনোনীত প্রার্থী হয়ে বোর্ডে থাকা পরিচালক আলমগীর খান আলো ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আগেই পরলোক গমন করেছেন। তার জায়গাও ছিল খালি।
এখন ফারুক আহমেদের অধীনে বোর্ডের পরিচালক আছেন মাত্র ১০ জন (ফারুক আহমেদ, নাজমুল আবেদিন ফাহিম, মাহবুব আনাম, আকরাম খান, ইফতিখার রহমান মিঠু, ফাহিম সিনহা, মঞ্জুরুল আলম, কাজী ইনাম, সালাউদ্দীন চৌধুরী ও সাইফুল আলম চৌধুরী স্বপন)।
শতাংশের বিচারে বোর্ডের আকার এখন ৪০ ভাগে নেমে এসেছে। নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বাধীন বোর্ডের বিপক্ষে অনিয়ম, অস্বচ্ছতা, দুর্নীতির অভিযোগ আছে প্রচুর। পেশাদারিত্বে কমতি, ঘাটতিও চোখে পড়ছে অহরহ। ঘরোয়া ক্রিকেট অবকাঠামোয় বড় ধরনের ধস নামানোর বড় অভিযোগেও অভিযুক্ত আগের বোর্ড।
এর বাইরে দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে দূরদর্শী কার্যক্রম হাতে নিতে না পারা, কার্যকর ও যুগোপযোগী লক্ষ্য-পরিকল্পনা প্রনয়নে ব্যর্থতার অভিযোগেও দুষ্ট আগের বোর্ড। কিন্তু তারপরও ২৫ জনের বোর্ড পরিচালক পর্ষদের অন্তত ১৫-১৬ জনকে ছুটোছুটি করতে দেখা যেত।
সেখানে ওই সংখ্যাটা এখন ২৫ থেকে নেমে ১০-এ দাঁড়িয়েছে। তারাও আবার সবাই সক্রিয় নন। এখন বাস্তবক্ষেত্রে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে মাত্র দু’জনকে; সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং নতুন পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম। যে কোনো সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজ-কর্মেই দেখা যাচ্ছে বর্তমান সভাপতি ফারুক ও তার সাথে এনএসসির কোটায় পরিচালক হওয়া ফাহিমকে।
খাালি চোখে বিসিবি প্রধান ফারুক আহমেদ আর নাজমুল আবেদিন ফাহিমকেই ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। বোর্ডের প্রায় সকল কর্মকাণ্ডে তাদেরকেই চোখে পড়ছে। এর বাইরে মাহবুব আনাম, ফাহিম সিনহা, ইফতিখার রহমান মিঠুকেও মাঝে মধ্যে দেখা যাচ্ছে। বাকিদের অস্তিত্বও তেমন বোঝা যাচ্ছে না।
বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ, পরিচালক নাজমুল আবেদিন ফাহিম ও ফাহিম সিনহা এবং সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন ছাড়া কারো কাজই দৃশ্যমান নয়।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যাচ্ছে লোকবল ও জনবল কমে যাওয়ায় বোর্ডের কর্ম তৎপরায়ও ভাটা চলে এসেছে। পরিচালক সংখ্যা অর্ধেকের কমে নেমে আসায় বোর্ড সভাপতিকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধানের ভূমিকায় অবতীর্ন হতে হয়েছে। যেমন ফারুক আহমেদই বিপিএলের এবারের গভর্নিং কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। আর নাজমুল আবেদিন ফাহিম হয়েছেন বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব।
এর বাইরে ক্রিকেট অপারেশন্স, গেম ডেভেলপমেন্ট, টুর্নামেন্ট, মিডিয়া, কমার্শিয়াল, ফ্যাসিলিটিজ, ফিন্যান্স, সিসিডিএমসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ট্যান্ডিং কমিটি এখন পদশূন্য। এই তিন চার বা পাঁচজনের পক্ষে বিসিবির মত গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন পরিচালনা এবং কাজের গতি ফিরিয়ে আনা কঠিন। সোজা বললে অসম্ভব।
এমন চার-পাঁচজন সদস্য নিয়ে একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশে ক্রিকেট বোর্ড চলতে পারে না।
টি আই/ এনজি