সকাল ১০:৩৭ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বস্তায় বস্তায় ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ, দুদকের জালে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালসহ ছয়জন

নিজস্ব  প্রতিবেদন
১৫ আগস্ট ২০২৪

সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন কায়দায় ঘুস লেনদেন ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

বৃহস্পতিবার সংস্থার প্রধান কার্যালয় থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উপ-পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে একটি অনুসন্ধান টিম। দুদকের উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যরা হলেন- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক মন্ত্রীর পিএসের দায়িত্ব পালন করা বহুল আলোচিত অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন, সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে অভিযোগ আছে-সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই বেশুমার ঘুস বাণিজ্যে মেতে ওঠেন। কথিত আছে ঘুস হিসাবে তিনি বস্তাভর্তি টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এই টাকা আদায় করে পৌঁছে দেওয়া হতো ধানমন্ডি ও ফার্মগেটের বাসায়। প্রতি রাতে এসব সংস্থার কর্মকর্তাদের আনাগোনা ছিল তার বাসায়।

তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট গড়ে তোলা হয়েছিল। সিন্ডিকেটের অন্য ধনঞ্জয়, মনির হোসেন, শরীফ মাহমুদ অপু, মোল্লা ইব্রাহিম হোসেনের মাধ্যমে ঘুসের টাকা লেনদেন করতেন।

নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও বিভিন্ন কাজের কমিশন বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এই কামাল-হারুন সিন্ডিকেট। হারুন অর রশীদ অবসরে যাওয়ার পরও এই সিন্ডিকেট ছাড়েনি।
ঘুসের টাকার বড় অংশ বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিত এই চক্র। এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না।

দুদক অভিযোগ পেয়েছে, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসাবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্ল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসাবে পদায়ন করা হয়।

এর মাস খানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্ল্যা নজরুল। পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের কমিশনার হিসাবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। এ সময় আগের দেওয়া চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্ল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার আরেকটি চেক দেন। পরে বাকি টাকাও দেওয়া হয়। এসব টাকা বস্তায় ভরে পৌঁছে দেওয়া হতো আসাদুজ্জামান খান কামালের ফার্মগেটের বাসায়।

সূত্র জানায়, এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থা থেকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা নিত কামাল সিন্ডিকেট। এর মধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে।

তারপরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেওয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।

আরও অভিযোগ আছে, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো। তালিকাভুক্তদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করা হতো। ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর ফায়ার সার্ভিসে ৫৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৪৩৬ পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক ছিলেন।

নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস। নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮-১২ লাখ টাকা নেয় সিন্ডিকেট সদস্যরা।

 

ফা আ / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *