রাত ১০:৩৬ | শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মুরগির দামে স্বস্তি মিললেও মাছের বাজারে অস্থিরতা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
১৮ এপ্রিল ২০২৫

 

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে মুরগির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও মাছের বাজারে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা। বাজার সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিপ্রতি দুইশ টাকার নিচে নামলেও মাছের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এবং বনশ্রী এলাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে মাছ-মাংসের দামের এ চিত্র দেখা গেছে। ভোক্তারা বলছেন, গরু ও খাসির মাংস আগেই নাগালের বাইরে ছিল, এখন মাছের দামও বেড়ে যাওয়ায় বাজারে গিয়ে পড়তে হচ্ছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে—কোনটা কিনবেন আর কোনটা ছাড়বেন।

বাজারে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে দেশি জাতের মাছের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে চিংড়ি, শিং, টেংরা, শোল ও পুঁটির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। দেশি চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৮০০–৯০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৭০০–৮৫০ টাকা। চাষের চিংড়ির দামও বেড়ে হয়েছে ৬৫০–৭৫০ টাকা। টেংরা ও শিং মাছ ৬০০–৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, আগে যা ছিল ৫০০–৬০০ টাকার মধ্যে। শোল মাছের দাম বেড়ে ৮৫০ টাকায় পৌঁছেছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭৫০–৮০০ টাকা। রুই ও কাতলা মাছেও বেড়েছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে তেলাপিয়া ও পাঙাশের মতো সাধারণ মাছের দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল রয়েছে—২০০–২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মুরগির বাজারে স্বস্তি

অন্যদিকে মুরগির বাজারে তুলনামূলক স্বস্তি লক্ষ্য করা গেছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৮০ টাকায় নেমে এসেছে। সোনালি মুরগি ২৫০–২৭০ টাকায় এবং দেশি মুরগি ৬৫০–৬৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগের চেয়ে ২০–৩০ টাকা কম।

গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল, তবু নাগালের বাইরে

গরু ও খাসির মাংসের দামে তেমন পরিবর্তন না থাকলেও সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে রয়ে গেছে। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০–৮০০ টাকা কেজিতে, খাসির মাংস ১,২৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস ১,১০০ টাকা।

বাজার মনিটরিং জোরদারের আহ্বান ভোক্তাদের

মাছ কিনতে আসা চাকরিজীবী মইনুল হোসেন বলেন, “গত সপ্তাহে রুই মাছ ৩২০ টাকায় কিনেছি, আজ সেটাই ৩৭০–৩৮০ টাকায়। গরু-খাসির মাংস তো আগেই ছুঁয়ে দেখার বাইরে ছিল, এখন মাছও কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে।”

গৃহিণী সানজিদা হক বলেন, “মাছের দিকে ঝুঁকেছিলাম, এখন সেটাও হাতের বাইরে। সপ্তাহে একদিন মাছ খাওয়া হয়ত সামর্থ্যের মধ্যে থাকবে।”

ভোক্তারা সরকারের প্রতি বাজার মনিটরিং জোরদার ও সরবরাহ ব্যবস্থা কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মাছ-মাংস-ডিমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্যের দাম না কমলে সাধারণ মানুষের পুষ্টি ও জীবনযাত্রা দুটোই ঝুঁকির মুখে পড়বে।

বিক্রেতারা কী বলছেন?

রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “চাহিদা রয়েছে, কিন্তু সরবরাহ নেই। উৎস এলাকা থেকে মাছ সংগ্রহের খরচ বেড়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়াতে হচ্ছে।”

বনশ্রী বাজারের মুরগি বিক্রেতা মাহফুজ আলী বলেন, “ঈদের পর মানুষ আবার মুরগির দিকে ফিরছে। চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম একটু কমিয়ে বিক্রি করছি।”

রামপুরা বাজারের হাসান শেখ বলেন, “মাছের দাম দেখে অনেকেই আবার মুরগির দিকে ঝুঁকছে। এখন বাজারে অস্থিরতা কম।”

মাংস ব্যবসায়ী শাহাবুদ্দিন জানান, “দাম আগের মতোই আছে, তবে বিক্রি কিছুটা কম। মানুষ মাছ কিনতে গিয়ে দাম শুনে হতাশ হয়ে মাংস কিনতে আসছে, কিন্তু এখানেও দাম শুনে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে।”

 

 

টি আই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *