রাত ৯:২৩ | শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় হত্যা : ছুটি শেষে স্পেনে যাওয়া হলো না বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিনের

জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর
১২ এপ্রিল ২০২৫

 

১০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে বিএনপি কর্মী প্রবাসী সাইজ উদ্দিন দেওয়ানকে (৪০) গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় থানায় বিএনপি নেতাসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

এদিকে সাইজ উদ্দিন দেওয়ানের মৃত্যুতে তার দুই ছেলেকে নিয়ে স্ত্রী নার্গিস আক্তার অসহায় হয়ে পড়েছেন। চোখে অন্ধকার দেখছেন। ছুটি শেষে শনিবার (১২ এপ্রিল) সাইজ উদ্দিন স্পেন যাওয়ার কথা ছিল। স্পেন থেকে ভিসা পেলে স্ত্রী-সন্তানদেরও এ বছর সেখানে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ৭ এপ্রিল তাকে হত্যা করা হয়।

স্বজনদের দাবি- প্রথমে সাইজ উদ্দিনকে গুলি করা হয়েছে। পরে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে তাকে ঘণ্টাব্যাপী আটকে রাখা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়।

প্রতিবেদকের কাছে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস আক্তার, বড় ভাই হানিফ দেওয়ান, বড় ছেলে নিখন হোসেন ও ছোট ছেলে নাসিম হোসেনসহ স্বজনরা। বাড়িতে গেলে সবার সঙ্গে ছোট ছেলে নাসিমকে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে তার অপলক দৃষ্টি যেন চারপাশে বাবাকে খুঁজছিল।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাইজ উদ্দিনের স্ত্রী নার্গিস আক্তার বলেন, আমারতো এতো তাড়াতাড়ি স্বামী হারানোর কথা ছিল না। আমার ছেলেরা এতিম হয়ে গেল, তাদের দায়িত্ব নেবে কে। আমরাতো একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখছিলাম। স্পেন গিয়ে আমাদের নতুন করে জীবনযাপন শুরু করার কথা ছিল। ফারুক কবিরাজ-মেহেদী কবিরাজরা আমার স্বামীকে হত্যা করেছে। আমি হত্যাকারীদের মৃত্যুদণ্ড চাই।

সাইজ উদ্দিনের বড় ছেলে নিখন হোসেন বলেন, আব্বুর ছুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল। এজন্য নানুর বাড়ি হায়দরগঞ্জ থেকে বিদায় নিতে যায়। সেখান থেকে আসার পথে বেড়ি এলাকার মালেকের ব্রিজের কাছে গাড়ি থামিয়ে আব্বুকে ফারুক ও তার ভাই মেহেদী গুলি করে। একপর্যায়ে তাকে কুপিয়ে আহত করে। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিতে গেলে ফারুক কবিরাজের লোক আরিফ ১ ঘণ্টার মতো আটকে রাখে। এতে রক্তক্ষরণে আব্বু মারা মারা যায়।
সাইজ উদ্দিনের বড় ভাই হানিফ দেওয়ান ও চাচাতো ভাই মেজন আলী দেওয়ান বলেন, ফারুক কবিরাজের অনুসারী ফারুক গাজী রমজানে একদিন এসে সাইজ উদ্দিনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা চায়। ওই টাকা না দেওয়ায় সাইজ উদ্দিনের ওপর তারা ক্ষিপ্ত ছিল। শ্বশুর বাড়ি থেকে আসার পথে তাকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তাকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাধা দেয়। হাত-পা ধরলেও তারা ছাড়েনি। পরে থানা থেকে পুলিশ এলে তারা ছেড়ে দেয়। এরপরও ভাইকে বাঁচাতে পারিনি।

এদিকে মামলার পর ফারুক কবিরাজসহ তার অনুসারীরা আত্মগোপনে চলে গেছে। এতে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে নিহতের ভাই হানিফ দেওয়ান বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। এতে বিএনপি নেতা ফারুক কবিরাজ ও তার ভাই মেহেদী কবিরাজসহ ২৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও দলীয় সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীম ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জের ধরে দুই দফায় শামীম ও ফারুকের নেতাকর্মীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে ওই ইউনিয়ন বিএনপিসহ সকল অঙ্গসংগঠনের কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হয়।

৭ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেড়ি ও বাবুরহাট এলাকায় কৃষকদল নেতা শামীম গাজী ও ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচতি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক গাজীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন। ঘটনার সময় বিল্লাল মাঝি, আবু তাহের মাঝি, জিহাদ হোসাইনের বসতবাড়িতে শামীমের অনুসারীরা ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এর জের ধরেই ৮ এপ্রিল ফের হামলা চালিয়ে শামীম গাজীর অনুসারীরা ফারুক কবিরাজের লোকজনের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *