সকাল ৮:০৯ | শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জুতা পাঞ্জাবি টুপি সুগন্ধির দোকানে ভিড় : শেষ মূহুত্বের ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত রাজধানীবাসী

বিশেষ প্রতিবেদন

 

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

২৮ মার্চ ২০২৫

 

 

মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতিবছরই জমে ওঠে ঈদের কেনাকাটা। ঈদের আগে হাতে আছে আর মাত্র এক অথবা দুই দিন। তাই শেষ মুহূর্তের কেনাবেচা চলছে শপিংমল ও কাপড়ের দোকানগুলোতে। এছাড়া আতর, সুগন্ধি ও টুপির দোকানে ভিড় ছিল লক্ষণীয়। সকাল থেকেই ক্রেতাদের উপস্থিতিও ভালো। তবে ভিড় কিছুটা কমেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রতি বছরই ঈদের শেষের দিকেই বিক্রি বেড়ে যায়। এই ঈদেও তারা সেটি আশা করছেন।

শুক্রবার রাজধানীর কৃষি মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, বাড্ডার হল্যান্ড সেন্টার, সুবাস্তু ও আশপাশের ছোট-বড় মার্কেট ও ব্র্যান্ডের বিভিন্ন আউটলেট ঘুরে দেখা যায়, এসব মার্কেটে ঈদ কেনাকাটায় ব্যস্ত সব বয়সের মানুষ। তবে  মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের পোশাকের দোকানগুলোতে ক্রেতার উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। সকাল থেকে ক্রেতার উপস্থিতি যা ছিল সন্ধ্যার পর ভিড় আরও বাড়ে। মধ্য রাত পর্যন্ত কেনাকাটা চলে বলে জানান বিক্রেতারা। বাড্ডা এলাকার ক্রেতাদের বেশিরভাগ ভিড় করেন সুবাস্তুতে। এখানে নিচতলায় বিক্রি হয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড, নন ব্র্যান্ড ও চীন থেকে আমদানি করা জুতা। দ্বিতীয় তলায় কসমেটিকস আইটেম ও জুয়েলারি। তৃতীয় তলায় ছেলে ও মেয়েদের নন ব্র্যান্ডের জামা কাপড়, শাড়িসহ বিভিন্ন গার্মেন্টস আইটেম। মধ্যবিত্তদের সামর্থ্যের মধ্যেই থাকে এসব পোশাকের দাম। ফলে এই ফ্লোরে থাকে ক্রেতাদের সবচেয়ে ভিড়। চতুর্থ তলায় ব্র্যান্ডের দোকান। যেখানে পাকিস্তানি, ভারতীয়, চীনাসহ বিভিন্ন দেশের পোশাক পাওয়া যায়। তবে এখানে দাম তুলনামূলক বেশি।

শেষ সময়ে এসে ছেলেদের পোশাকের দোকানে ভিড় কেন জানতে চাইলে বিক্রেতা সোলায়মান শিকদার বলেন, ছেলেরা বেশিরভাগই শেষ দিকে এসে কেনেন। তাই শেষ ১০ রোজায় ছেলেদের পোশাক একটু বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। মেয়েদের পোশাকও বিক্রি হয়, তবে তুলনামূলক কিছুটা কম। তিনি বলেন, যেহেতু মেয়েদের রেডিমটে জামা খুবই কম থাকে, সিলাই করতে হয়, তাই আগেই কিনতে হয়। ছেলেরা অফিস ও নানান কাজে ব্যস্ত থাকেন। বাজেটের বিষয় থাকে, সব মিলিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে নিজেরা কেনেন। দোকানে নিজের জন্য জিন্সের প্যান্ট কিনছিলেন কাওছার। তিনি বলেন, রোজা রেখে অফিস করা, এরপর ইফতার, তারাবিসহ সব মিলিয়ে সময় হয়নি। এর মধ্যে অবশ্য ছেলেমেয়েদের জন্য, স্ত্রীর জন্য কেনাকাটা করেছি। মা- বাবার জন্যও কিনেছি। বাজেটেরও একটা বিষয় ছিল। শনিবার বাড়ি যাবো, তাই নিজের জন্য আর ছোট ভাইয়ের জন্য কেনাকাটা করলাম।

ছেলেদের পোশাকের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের বেশিরভাগকেই দেখা যায় পাঞ্জাবি-পাজামা ও জিনস প্যান্ট দেখছেন। শার্ট, ফরমাল প্যান্ট, পোলো টি-শার্টও অনেককে কিনতে দেখা যায়। এসব দোকানে বিক্রেতারা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ দেখাচ্ছেন, কেউ দরদাম করছেন। আবার কেউ ক্রেতাদের মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ঈদের দিন পরিবারের সবাই একই রঙের পাঞ্জাবি পরবেন বলে অনেকেই একই কালারের পাঞ্জাবি কিনছেন।

রাজধানীর যাত্রবাড়ী ও শনির আখড়া বিপণিবিতানগুলোতে বাহারি পোশাক সাজিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা। প্রতিটি মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড়। পছন্দ অনুযায়ী পোশাক কিনছেন তারা। কেরাণীগঞ্জ থেকে আসা ক্রেতা মনির হোসেন বলেন, বেতন পেয়েছি। ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন পোশাক লাগবে, তাই কিনতে এসেছি। শেষ সময়ে পোশাকের দাম বেশি। দাম একটু কম হলে ভালো হতো। তারপরও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করছি।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ছোট মেয়েদের পোশাকের পাশাপাশি জুতার দোকান ও ইমিটেশনের জুয়েলারি দোকানে উপচেপড়া ভিড়। বেশিরভাগ দোকানের বিক্রেতারা ক্রেতা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। রামপুরা থেকে পরিবার নিয়ে মার্কেটটিতে আসেন মো. হাসানুজ্জামান। তিনি বলেন, ঈদের কেনাকাটা এখনো হয়নি। আজ ছুটির দিন। তাই ছেলে, মেয়ে ও পরিবার নিয়ে মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছি। সবার পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা সম্পন্ন করবো ইনশাআল্লাহ। মার্কেটটিতে কথা হয় নদী নামের ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, থ্রি-পিস আগেই কিনেছি। আজ হাতের ও কানের কিছু অর্নামেন্ট কিনবো। পাশাপাশি এক জোড়া জুতা কেনার ইচ্ছা আছে।
বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্কেটটির ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান বলেন, ঈদ কেন্দ্রিক মূল বিক্রি শুরু হয়েছে ২-৩ দিন আগে। এবার আল্লাহর রহমতে ভালো বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ভালো ক্রেতা পাচ্ছি। ক্রেতারা মূলত আসেন বিকেলের দিকে। বিকেলে ও ইফতারের পরে ক্রেতাদের ভিড় সব থেকে বেশি থাকে। শুক্রবার ছুটির দিন হওয়া সকাল থেকেই ক্রেতারা আসছেন।

মৌচাক থেকে রাজধানী সুপার মার্কেটে গিয়েও ক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়। মার্কেটটির ব্যবসায়ী আলী হোসেন বলেন, এখন ঈদের শেষ মুহূর্তের বিক্রি চলছে। ঢাকার বাইরে যারা যাবেন, তাদের বেশিরভাগই শুক্রবার কেনাকাটা সম্পন্ন করবেন। কারণ আজই বেশিরভাগ ঢাকা ছাড়বেন। আর যারা ঢাকায় থাকবেন তারাও মূল কেনাকাটা করতে বের হয়েছেন।
জুতার ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ঈদের কেনাকাটা করতে এসে বেশিরভাগই নতুন পোশাকের পাশাপাশি নতুন জুতা কেনেন। বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিক্রি মোটামুটি। রোজার প্রথমদিকে তো বিক্রি তেমন ছিল না। কয়েকদিন ধরে বেড়েছে। এতদিন বিকেলে ও সন্ধ্যায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে ঈদ উপলক্ষে টুপি, আতর আর জায়নামাজের দোকানে আসছেন অনেকে। দোকান ও ফুটপাতে হরেক রকমের টুপি, আতরের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানিরা। বাহারি নকশা ও মানভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে এসব টুপি। রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের আশেপাশের দোকানগুলোতে সারা বছর বেচাকেনা চললেও ঈদের আগ দিয়ে এসব জিনিসের বিক্রি আরও বেড়ে যায়। ক্রেতা আকর্ষণে নতুন নতুন ডিজাইনের টুপি, জায়নামাজসহ নানা পণ্য দোকানে সংগ্রহে রাখেন বিক্রেতারা। নিজের ও স্বজনদের জন্য কিনছেন সুগন্ধি আতর, টুপি ও জায়নামাজ। পছন্দের সুগন্ধি আতরটি যাচাই করতে ক্রেতারা ঘুরে ফিরছেন এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি করা আতর, টুপি ও জায়নামাজের দাম এবার বেশ ঊর্ধ্বমুখী। কারণ এসবেও ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের প্রভাব পড়েছে। তবে দেশি ব্র্যান্ডের কদরও ভালো। বেশির ভাগ ক্রেতা সাশ্রয়ী মূল্যে দেশি ব্র্যান্ডের টুপি-জায়নামাজ কিনছেন।

দুবাই, ভারতীয়, সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির দুইশ’ ধরনের আতর বিক্রি হচ্ছে রাজধানীর দোকানগুলোতে। মানভেদে এক তোলা আতরের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা। আছে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা তোলার আতরও। এ তিন পণ্যের মধ্যে বিক্রির তালিকায় শীর্ষে আছে টুপি। ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় আছে সিন্ধি, রুমি, গুজরাটি, পাথর বাধাই সিন্ধি টুপি ও জিন্নাহ টুপি।এছাড়া তুরস্ক, সৌদি আরব, কাতার, মালয়েশিয়া থেকেও টুপি আসে। আতর-টুপির পাশাপাশি চাহিদা বেড়েছে জায়নামাজের। দেশে তৈরি জায়নামাজের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা জায়নামাজ আছে ক্রেতার পছন্দের তালিকায়।

রাজধানীর পল্টনে বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেটে আতর বিক্রেতা নজরুল ইসলাম বলেন, শেষ মুহুত্বে বেচাকেনা ভালই। যার যার পছন্দ ও দামের সাথে সঙ্গতি রেখে আতর সুগন্ধি কিণছেন ক্রেতারা। আতরের খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে জানা যায়, বাহারি সব নাম। সৌরভ ছড়ানো অনেক দামি সুগন্ধি যেমন পাওয়া যায়, তেমনি বাজেটের মধ্যেও রয়েছে বিভিন্ন নামে আতর। দেশের বাজারে সাধারণত জেসমিন, হাসনা হেনা, রজনীগন্ধ্যা, এক্সকাচি বেলি, সিলভার, চকোলেট মাক্সসুলতান, আমির আল কুয়াদিরাজা ওপেন, জান্নাতুল ফেরদৌস, রয়েল, অরেঞ্জ, সফট, লর্ডনিভিয়া মেন, রয়েল ম্যাবরেজজপি, রাসা, আল ফারিসবেস্ট, ফিগো, হাজরে আসওয়াদ নামে আতর বেশি বিক্রি হয় বলে জানালেন দোকানিরা। এগুলোর দাম প্রতি এমএল একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা। বায়তুল মোকাররম মসজিদ মার্কেট, গুলিস্তান, কাঁটাবন মসজিদ মার্কেট, কাকরাইল মসজিদ মার্কেটসহ ফুটপাথের বিভিন্ন দোকানে পাওয়া যায় এসব আতর। তবে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের নিচতলায় আতর-টুপির দোকানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিটি দোকানে সাজানো বাহারি সব টুপি-জায়নামাজ। আতর, আতরদানি, সুরমা, পাঞ্জাবি, তসবিহর আলাদা দোকান রয়েছে।

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *