সকাল ৬:২৪ | বুধবার | ১৬ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১৭ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করতে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে — মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ মার্চ ২০২৫

 

সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করতে ‘দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ষড়যন্ত্র হচ্ছে’ উল্লেখ সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘‘ আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি জোর দিয়ে বলেছি যে, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই আমাদেরকে গণতন্ত্রে যেতে হবে… সেইটা হচ্ছে এ টু জেড ডেমোক্রেসি। এই ডেমোক্রেসি ছাড়া আমরা মনে করি না যে, আর কোনো সিষ্টেম আছে যে সিষ্টেমে জনগনের কল্যাণ করতে পারে।”

‘‘ কিন্তু আজকে নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যেন এই প্রক্রিয়া(নির্বাচন) পিছিয়ে যায়, বিলম্বিত হয়, অন্য কারো সাহায্য করা যায় দেশে একটা অনৈরাজ্য সৃষ্টি করা যায় সেই কাজগুলো শুরু হয়েছে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন সোশ্যাল মিডিয়া… সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু নতুন নতুন … আমি বলি, ‘কুতুব’ আবির্ভূত হয়েছে তারা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চা্ন জানি না।”

‘‘ তাদের ভাষা, তাদের বাক্য, তাদের কথা, তাদের বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশকে একটা নৈরাজ্যের দিকে নিয়ে যেতে চায়, তারা গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে চায় না। আজকে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে, সর্তক থাকতে হবে। কারণ বিএনপি একমাত্র দল যে প্রতিবার, প্রতিটি বিপদে-আপদে এসে তারা রুখে দাঁড়িয়েছে, তারা সবসময় রক্ষা করেছে বিপদ থেকে। বিএনপি সেই দল যারা বাংলাদেশকে সমস্ত সংকট থেকে উদ্ধার করেছে।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

আলোচনার শুরুতে বিএনপি মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ শুরু এবং এর ২৫ মার্চ কালো রাত্রিতে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার কথা তুলে ধরেন।

‘সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা মানব না’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকেও সেই সময় এসেছে, যে সংকট আজকে সৃষ্টি হচ্ছে এমন সংকট যে, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী তাকে পর্যন্ত আজকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে… যা আমরা কোনো মতেই মেনে নিতে পারি না।”

‘‘যারা আমাদেরকে দেশকে রক্ষা করে, যারা সংকটের সময়ে আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় তাদেরকে আমরা কখনই বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।”

‘বিপ্লব হঠাৎ করে ঘটেনি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা অবশ্যই ২০২৪ সালে যারা প্রাণ দিয়েছেন.. শহীদ হয়েছে তাদের প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা আমরা জানাই, সব সময় জানাই।আহত হয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই। সেই আন্দোলনেরও আমাদেরও প্রায় ৮‘শ মতো ছাত্র-যুবক তারা শহীদ হয়েছেন। ১৫ বছর আমরা লড়াই করেছি্, আমাদের নেতা-কর্মীরা কেউ বাড়িতে ঘুমাতে পারেনি। ৬০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হয়েছে। আমাদের ছেলেরা এখনো তারা মোটর সাইকেল চালায়, হকারি করে।”

‘‘এরপরেও আমাদেরকে শুনতে হয় যে, বিএনপি কি করেছে? বিএনপিই তো আন্দোলন শুরু করেছে, বিএনপিই তো এতো ত্যাগ স্বীকার করেছে, বিএনপি তো ভিত্তি তৈরি করেছে। আজকে হঠাৎ করে বিপ্লব ঘটেনি। বিপ্লবের ভিত্তি তৈরি করতে হয়েছে, এই ভিত্তি তৈরি করেছে বিএনপি।”

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ তাই আপনাদের দলকে ছোট করার কোনো কারণ নেই। সব সময় বুক উঁচু করে বেড়াবেন… এই বিপ্লব এই পরিবর্তনের আপনারাই হচ্ছে হোতা, আপনারাই সামনের দিয়ে নিয়ে যাবেন।”

‘খারাপ কাজ করা যাবে না’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনুন এবং ভালোভাবে শুনুন… এমন কথা যেন আমাদেরকে না শুনতে হয় যে, বিএনপি খারাপ কাজ করছে।”

‘‘ তাহলে যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সেই সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়ে যাবে। এখানে(আলোচনা সভা) ঢাকার নেতারা, ঢাকার বিভিন্ন শ্রেনীর নেতারা আছেন…আপনারা আপনাদের নেতৃবৃন্দ সবাইকে নিয়ে এ বিষয়গুলো সবসময় খেয়াল করবেন।আর মনে রাখবেন, আপনাদের ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ, আপনাদের ওপর নির্ভর করছেন ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ, আপনাদের ওপরই নির্ভর করছেন ভবিষ্যতে বৈষ্যমবিরোধী বাংলাদেশ।”

‘ওরা কি করবে আমরা ভালো বুঝি’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যারা এক‘শ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পিং করতে যায় তারা কি করবে সেটা আমরা ভালো বুঝি।”

‘‘ বিএনপি জনগনের সঙ্গে আছে, অতীতে ছিলো, থাকবে এবং বিএনপি অবশ্যই তারা জয়যুক্ত হবে ইনশাল্লাহ। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্দেশ দিয়েছেন যে, আপনারা সঠিকভাবে সুন্দর ভাবে… জনগন যেন ভালোবেসে আপনাদেরকে সেই কাজগুলো(জনকল্যাণমূলক) করতে থাকুন। জনগন যাতে বিএনপিকে ভালোবাসে, বিএনপির কাছে আসে সেই কাজগুলো আমরা করি।”

‘অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের বিশাল পাহাড়’

সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কারের কথা উল্লেখ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেব দেশে প্রথম সংস্কার করেছে… আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ৩১ দফা দিয়েছেন। সংস্কার নতুন জিনিস নয়।”

‘‘ আজকে অন্তবর্তীকালীন সরকার সংস্কারের অনেকগুলো বিশাল পাহাড় নিয়ে এসেছেন।।অনেকগুলো বিষয়ের অবতারণা করেছেন যে, বিষয়গুলো আমাদের জনগন বুঝেও না, বুঝতেও পারে না। আমরা সেজন্য আমাদের দল থেকে তাদের সংস্কারে প্রতিটি বিষয়ের উত্তর দিয়েছি… গতকাল(সোমবার) সেগুলো পরিপূর্ণভাবে দিয়েছি… যেসব বিষয় আমরা একমত নই সেটাও আমরা তাদেরকে জানিয়েছি।আমরা খুব পরিস্কার করে বলেছি, বাংলাদেশের জনগনের কাছে যেটা গ্রহনযোগ্য সেই বিষয়গুলো করা দরকার।”

‘ষড়যন্ত্র রুখতে দ্রুত নির্বাচনের দিনক্ষন দিন’

প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘ আমরা বলতে চাই, অতি দ্রুত নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করা হয় তাহলে জনগন নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে এবং নির্বাচনমুখী জনগনের সামনে যেকোনো রকমের ষড়যন্ত্র ঠিকতে পারবে না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস. জনগনেই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করবে।”

‘‘ দেশের স্বার্থে, জনগনের স্বার্থে, দেশের আইনশৃঙ্খলার স্বার্থে, অর্থনীতির স্বার্থে এবং বর্তমান যে সরকার এই সরকারের স্বার্থে আমরা আজকে স্বাধীনতা দিবসে আহ্বান জানাতে চাই, দাবি করতে চাই, অনতিবিলম্বে কোনো ধরনের উছিলা, কারো কোনো আবদার এই গুলোর দিকে আপনারা লক্ষ্য না করে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করেন … জনগনই ঠিক করে নেবে ষড়যন্ত্র যারা করে, সমস্যা যারা সৃষ্টি করে তার বিরুদ্ধে জনগনই দায়িত্ব নিয়ে সমাধান করবে।”

‘আমাদের গণতন্ত্র আবার বাধার মুখে পড়তে যাচ্ছে’

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘ স্বৈরাচার পতনের পরে যেখানে গণতন্ত্র উত্তরণের কথা ছিলো যে জন্য দীর্ঘ ১৬ বছর আন্দোলন হয়েছে এই উত্তরণে কোনো বাধা সৃষ্টি হওয়ার কারণ ছিলো না। কারণ এখানে সমস্ত জাতি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই করে তাকে বিতাড়িত করেছি… যেখানে জনগনের বিজয়ের পরে আবার আমাদের গণতন্ত্র বাধাগ্রস্থ হতে যাচ্ছে।”

‘‘ বিগত দিনের গণতন্ত্র, জনগনের মালিকানা, জনগনের ভোটাধিকার, জনগনের বাক স্বাধীনতা, জনগনের মানবাধিকার সব কিছু আবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। আমরা জানি যে, আগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এবং ক্ষমতা দখল করার জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো বিভিন্ন স্বৈরাচাররা গ্রহন করেছে, আমরা তো ভেবে ছিলাম আমরা সেখান থেকে মুক্ত হয়ে গেছি এবং একটা মুক্ত পরিবেশে দেশের মানুষ তার মালিকানা ভোগ করবে, একটি মুক্ত নির্বাচন এবং নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে আসবে সেটা আজকে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা এখন সর্তক থাকতে হবে।”

প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান ও নুরুল ইসলাম মনি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্ অধ্যাপক কামরুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য্ অধ্যাপক মামুন আহমেদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য্ অধ্যাপক লুৎফর রহমান এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু বক্তব্য রাখেন।

 

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *