রাত ১১:৫২ | শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

জাবি, চবি ও শাবিপ্রবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা

অনলাইন ডেস্ক
১৫ জুলাই ২০২৪

 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। রোববার দিবাগত রাতে এসব হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা আহত হয়েছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়েছেন। রোববার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এর আগে রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন। পরে তারা রাত সাড়ে ১১ টার দিকে ক্যাম্পাসের বটতলায় জড়ো হতে থাকেন। তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে দুজন আন্দোলনকারীকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এই খবর জানাজানি হলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাদের মুক্ত করার জন্য বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা হলের সামনে অবস্থান নেন।

পরে রাত দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি রাত সোয়া দুইটার দিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সামনে এলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেন এবং মুখোমুখি অবস্থান নেন। এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা আন্দোলনকারীদের জামায়াত-শিবির আখ্যা দেন ও নারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে গালাগাল করেন। এসময় তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ।

তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের অর্থসম্পাদক ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তৌহিদুল আলম বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা আমাদের হলের সামনে এসে কোটা আন্দোলনের নামে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও ছাত্রলীগকে অবমাননা করে স্লোগান দিচ্ছিল।

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে হামলা চালিয়েছেন ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। এতে তিনজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর সামনে মুখোমুখি হয়। এ সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। এতে ৩জন গুরুতর আহতসহ প্রায় ১০০জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশে পিছু হটেন কর্মীরা। এর ফলে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হল ও বঙ্গবন্ধু হলে যান। পরে গোলচত্বরে এসে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবির সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ‘আমাদের মিছিলে ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এতে আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

মিছিলে অংশ নেওয়া আরেক শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘ছাত্রলীগের হামলায় আমাদের অন্তত ১০০ জনের মতো আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩ জন গুরুতর আহত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।’

ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগকে অস্বীকার করেছেন শাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মো. খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগ তাদের উপর হামলা করে নি। তারা ছাত্রলীগের উপর মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। দুপক্ষের মিছিল মুখোমুখি অবস্থানে আসায় আমরা তাদেরকে একপাশ দিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুইজন আহত হয়েছেন। রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ক্যাম্পাসের কাটা পাহাড় সড়কে এ ঘটনা ঘটে। এতে এক নারী শিক্ষার্থীসহ দুজন আহত হয়েছেন।

রাত সোয়া ১১টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম ন্যায় বিচার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্রলীগের ৪-৫ জন নেতাকর্মী কাটা পাহাড় এলাকায় আসেন। সেখানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মাঝেই কয়েকটি বাজি ফোটান তারা। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা পিছু হটে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা কাটা পাহাড় দিয়ে শহীদ মিনারের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া করে। পরে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। সেই সময় অন্তত চার থেকে পাঁচজনকে মারধর করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা বলেন, ‘কোটা সংস্কারের আন্দোলনে হঠাৎ ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী লাঠি নিয়ে হামলা করেন।’

 

 

ফা আ/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *