সকাল ৯:১৯ | শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট : জাতীয় চ্যাম্পিয়ন চরের কৈয়ারবিল

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 

দ্বীপবেষ্টিত এলাকা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া। সেই কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ সদরের ইছাঘরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ২-০ গোলে হারিয়েছে।

চর থেকে উঠে এসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না কৈয়ারবিলের। দলটির ম্যানেজার শাহিনুল ইসলাম সংগ্রামের গল্প জানালেন এভাবে, ‘চরের মধ্যেই কৈয়ারবিল স্কুল। বালুর মধ্যেই ছেলেরা খেলে। অনেক প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই স্কুল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।’

দ্বীপ এলাকায় হওয়ায় শহর কিংবা অন্য জায়গায় যেতে হলে পানিপথ পাড়ি দিতে হয়। উপজেলা, জেলা ও বিভাগ পেরিয়ে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তাই উচ্ছ্বসিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, ‘শিক্ষকতার পাশাপাশি আমিও বাচ্চাদের নিয়ে অনুশীলন করাই। উপজেলা, জেলা পর্যায়ে আমরা শিক্ষক ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় দল পরিচালনা করেছি। কখনও হাল ছাড়িনি। সবার প্রচেষ্টায় এই সাফল্য।’ শিরোপা জয়ের পাশাপশি টুর্নামেন্টসেরাও হয়েছেন কৈয়ারবিলের নাহিদ হোসেন তোহা। তার চোখেমুখেও ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন, ‘চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আমি বড় ফুটবলার হতে চাই। হামজা চৌধুরি, জামাল ভূঁইয়ার মতো বাংলাদেশের জার্সি পরতে চাই।’

জাতীয় স্টেডিয়ামে বালকের পাশাপাশি বালিকা বিভাগেরও ফাইনাল হয়েছে। সেই ফাইনালে জিতেছে পাবনার সাথিয়ার জোড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ৩-১ গোলে চট্টগ্রাম বিভাগের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে হারায় পাবনার বিদ্যালয়টি। গত আসরে পাবনার জোড়গাছা জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় হয়েছিল। এবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দলটির কোচ মিঠু মিয়া বেশ তৃপ্ত, ‘আমি পাবনার মহিলা ফুটবল নিয়ে কাজ করছি বেশ কয়েক বছর। আমার কোচিংয়ে পাবনার স্কুল চ্যাম্পিয়ন, খুব ভালো লাগছে।’

পাবনা জেলা ফুটবল দলে খেলা সাবেক এই ফুটবলার মূলত নারী ফুটবল নিয়ে কাজ করেন, ‘পাবনায় সাজানো বাগান নামে একটি ফুটবল একাডেমি রয়েছে। সেখানে নিয়মিত ফুটবল চর্চা হয়। ওখানে স্কুলের মেয়েরা অংশগ্রহণ করে।’ টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় এবং সর্বোচ্চ গোলদাতা (বালিকা গ্রুপে) হয়েছেন জোড়গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লামিয়া খাতুন। তার চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনিই একমাত্র খেলাধুলা করেন। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকেও চেনেন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া এই বালিকা। তাই বড় হয়ে লামিয়াও হতে চান সাবিনার মতোই, ‘আমি সাবিনা আপুর মতো ফুটবলার হতে চাই।’

প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৪–এর জাতীয় পর্যায়ের খেলা ২২ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ন্যাশনাল বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শুরু হয়। দেশের আটটি বিভাগের চ্যাম্পিয়ন আটটি বালক ও আটটি বালিকা দল জাতীয় পর্যায়ের এই খেলায় অংশ নেয়। সবমিলিয়ে টুর্নামেন্টে অংশ নেয় দেশের ৬৫,৩৫৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালক-বালিকা দল। ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের খেলা শেষে আজ ঢাকায় জাতীয় স্টেডিয়ামে ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছে প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। বালক বিভাগে সেই তুলনায় জাতীয় পর্যায়ে খেলোয়াড় আসছে না। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন, ‘আমরা এটি বিশ্লেষণ করে দেখব।’ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্রীড়া শিক্ষক থাকলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নেই। সেই দিকেও গুরুত্বারোপ করছেন উপদেষ্টা, ‘প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্রীড়া শিক্ষক প্রয়োজন। এতে খেলার মান উন্নত হবে। আমরা ক্রীড়া শিক্ষক নিয়োগের জন্য চেষ্টা করছি।’

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান ক্রীড়া পরিদপ্তর। এই সংস্থার ক্রীড়া অফিসাররা জেলা পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা নিয়ে কাজ করেন। ক্রীড়া অফিসারদের কাজ মূলত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদী প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরেরও কথা জানিয়েছেন, ‘ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই টুর্নামেন্টে আরও সম্পৃক্ত হতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি করতে চায়। আমাদের ক্রীড়া অফিসাররা মাধ্যমিক পর্যায়ে কাজ করছে, সেখানে যেন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সহায়তা করা যায়।’

খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ফরিদ আহাম্মদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম এনডিসি, বাফুফের সহ-সভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরি হ্যাপি।

 

 

টি আই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *