সকাল ৭:৪৮ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ আগস্ট ২০২৪

 

 

শেখ হাসিনাকে আশ্রয় নিয়ে ভারত গণতন্ত্রের প্রতি যে অঙ্গীকার তা রক্ষা করছে না বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মঙ্গলবার দুপুরে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিস্ট অত্যাচারি-নিপীড়নকারী-হত্যাকারী শেখ হাসিনা দেশে ছেড়ে তার জনগনকে ছেড়ে পালিয়েছেন। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, আজকে পার্শ্বর্বতী দেশ ভারত তাকে আশ্রয় দিয়েছে। সেখান থেকে তিনি আবার বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার যে বিপ্লব সেটাকে নস্যাৎ করবার বিভিন্ন চক্রান্ত শুরু করেছে।”

‘‘ এই ব্যক্তিকে(শেখ হাসিনা) এভাবে আশ্রয় দিয়ে ভারত তার যে, কমিটমেন্ট টু ডেমোক্রেসি এটা তারা রক্ষা করেছে বলে আমার মনে হয় না। ভারতের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে, আপনারা তাকে আইনানুগভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে কাছে তু্লে দেন এবং দেশের মানুষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সিদ্ধান্ত হচ্ছে তার বিচার করার সেই বিচারের সম্মুখিন তাকে হতে দেন।”

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ এদেশের মানুষ শেখ হাসিনার যে অপরাধ সেই অপরাধকে খাটো করে দেখে না। তারা মনে করে যে, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার এই ফ্যাসিবাদী শাসন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে দূর্বল করে দিয়েছে, জাতিকে আহত করেছে।”

‘‘ আপনারা দেখেছেন, তার শাসনামলে এই জাতিকে সে ১৮ লাখ কোটি টাকার ঋণের আবদ্ধ করে গেছে… পাচার হয়ে গেছে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। সেই জাতিকে দুঃশাসন সমস্ত কিছু… ইন্সটিটিউশন সমস্ত কিছু ভেঙে দিয়েছে।”

‘অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রসঙ্গে’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা নির্বাচন নিয়ে আমাদের বক্তব্য আগেও বলেছি, এখনো বলছি যে, এই সরকার হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের পর বিপ্লবের মধ্য দিয়ে এই অন্তর্বতীকালীন সরকার এসেছে। তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে, এই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করে জনগণের প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়া।”

‘‘ তবে আমি যেটা মনে করি, যে জঞ্জাল আওয়ামী লীগ সরকার সৃষ্টি করে গেছে সেটাকে দূর করতে অবশ্যই কিছু সময় দরকার….একটি সঠিক সুন্দর নির্বাচন করার জন্য হলেও একটা সময়ের দরকার যে সময়ে নির্বাচনকালীন নতুন সরকার তারা সেই লক্ষ্যে কাজ করতে পারবে, সংস্কারগুলো করতে পারবে সেই সময় অবশ্যই এদেশের মানুষ তাদেরকে দেবে।”

অন্তবর্তীকালীন সরকার গত ১১ দিনে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তারও ভুয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি মহাসচিব।

দলের স্থায়ী কমিটির নিয়োগকৃত দুই নতুন সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে নিয়ে বেলা সাড়ে ১২টায় বিএনপি মহাসচিব শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরে আসেন। তার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং বিশেষ মোনাজাত করেন।

এ সময়ে বিএপির কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শামীমুর রহমান শামীম, যুব দলের মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন সহাস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

‘গণতন্ত্র রক্ষায় সকলকে সজাগ থাকা চাই’

হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ আমি ৩২ বছর ধরে বিএনপির সদস্য। আমাদের নীতিনির্ধারণী ফোরামে স্থান দেবা জন্যে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আগামী দিনগুলোতে বিএনপি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ অনুসরণ করে বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে এটাই আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করি।”

‘‘ গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন ১৬ বছর আগে বিএনপি শুরু ‍করেছিলো। শেষ পর্যায়ে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা তারা যোগ দিয়ে এই আন্দোলনকে বেগবান করে চূড়ান্ত লক্ষ্যে নিয়ে গিয়েছে। আজকে এই আন্দোলনে শুরু থেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যতজন শহীদ হয়েছে তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আবু সাঈদ জীবন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। মানবাধিকার এতোদিন লঙ্ঘিত ছিলো, গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র কেউ যেন ব্যাহত করতে না পারে, সাধারণ মানুষের মানবাধিকারকে কেউ যেন লঙ্ঘন করতে না পারে সেজন্য বিএনপি এবং ছাত্র-জনতা আমরা এক সাথে কাজ করবো।”

ছাত্র-জনতার আগস্ট বিপ্লবে দেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘‘ আগস্ট বিপ্লবে বাংলাদেশ সেনা বাহিনী শেষ মুহুর্তে এসে জনগনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে স্বৈরাচারকে বিতারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সেজন্য সেনা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটি সদস্যকে আমি ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আগামী দিনেও এসব বাহিনী যারা জনগনের অর্থে প্রতিপালিত তারা সব সময়ে জনগনের সাথে থাকবে, কখনো স্বৈরাচারকে স্থান দেবে না।”

‘এবারের অভ্যুত্থানে নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতার কাকে বলে জেনেছে’

অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘‘ ১৯৭৯ সালে আমি ছাত্র দলের মেম্বার ছিলাম সেখান আজ অবধি আমি বিএনপিতে কাজ করছি একজন কর্মী হিসেবে। আমি মনে করি, গণতন্ত্র পুনুরদ্ধারের আন্দোলন বিএনপি যেটা শুরু করেছিলো ২০০৯ সালের ডিসেম্বর থেকে অর্থাৎ এদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলন করতে যেয়ে যেসমস্ত গুম হয়েছে, যারা হারিয়ে গেছে, তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করব। যারা শহীদ হয়েছে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।”

‘‘ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। দেশ আজকে একটি নবতর স্বাধীনতা পেয়েছে। একবার আমরা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পেয়েছি। আর এবার সত্যিকার অর্থে ৫ আগস্ট নতুন প্রজন্ম দেখতে পেলো, স্বাদ পেলো স্বাধীনতা কাকে বলে, কথা বলার স্বাধীনতা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা কাকে বলে। মানবাধিকার ছিলো না। এক ব্যক্তির শাসন ছিলো সেখান থেকে আজ আমরা মুক্ত হয়েছি। গণতন্ত্রের যাত্রা পথের মুক্তিকে আমাদেরকে সম্মুন্নত রাখতে হবে।”

গত ১৬ আগস্ট দলের ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম এবং অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেনকে পদোন্নতি দিয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণীয় ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দেয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানান দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

 

এসএম/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *