রাত ৪:৩৭ | বৃহস্পতিবার | ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

৬৫ শতাংশ মানুষ আগে স্থানীয় নির্বাচন চান : নির্দলীয় সরকারের অধীনে রাজনৈতিক প্রভাব কম থাকে

বিশেষ প্রতিবেদন

 

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

 

 

নির্বাচন ইস্যুতে সরগরম পুরো দেশ। সর্র্বত্র একটিই আলোচনা। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলো যেকোনো আলোচনায় প্রাধাণ্য দিচ্ছেন নির্বাচনের বিষয়টিকে। সংস্কার আগে না নির্বাচন আগে, এ নিয়ে কথার ফুলঝুরি এখনো চলছে। এর মধ্যে আরেকটা ঝগড়া ঢুকে গেছে, আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, নাকি সংসদ নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনে যারা সরকার গঠন করার ব্যাপারে আশা রাখেন, তারা চান সংসদ নির্বাচন হোক আগে। নির্বাচিত সরকারের অধীন হোক স্থানীয় সরকার নির্বাচন। রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, নির্দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে দলীয় প্রার্থীদের দাপট কম থাকে। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রভাব খাটানো যায় না। সেই সুযোগে অনেক ভালো মানুষের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

উদাহরণ হিসেবে রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংসদ নির্বাচনের আগে উপজেলা নির্বাচন করতে চেয়েছিল। বড় দলগুলো, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এতে রাজি হয়নি। ফল যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে হলো জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে উপজেলা নির্বাচনের আয়োজন করে। মারদাঙ্গা করে বেশির ভাগ উপজেলায় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত প্রার্থীরা ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জিতে যান। নির্বাচন কমিশন অসহায়ভাবে চেয়ে চেয়ে দেখে। কমিশনের প্রধান এ টি এম শামসুল হুদা সে সময় একটি মন্তব্য করেছিলেন, দলীয় সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। শেখ হাসিনার রাজত্বে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের নিয়ম চালু হয়। হাসিনার স্তাবকেরা যুক্তি দাঁড় করান, অমুক অমুক দেশে তো এই ব্যবস্থা আছে, তাহলে এ দেশে এ রকম হলে অসুবিধা কোথায়? তো দলীয় ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আয়োজন করে স্থানীয় সরকারব্যবস্থার বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। দলবাজি পৌঁছে গেছে ঘরে ঘরে।

সূত্র মতে, গেল বছরে ছাত্র-জনতার গণ অভূত্থানের পর সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, জেলা ও উপজেলা পরিষদের মেয়র ও চেয়ারম্যানদের অপসারণ করে তাদের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক। সিটি করপোরেশনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলমান রাখতে কাজ করছেন সরকারের নিয়োগ করা প্রশাসকরা। কাউন্সিলর অফিস থেকে নাগরিক সেবার কার্যক্রম সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে আঞ্চলিক অফিসগুলোতে। এই রদবদলে অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে বিভিন্ন নাগরিক সেবা। থমকে গেছে উন্নয়নকাজও। এই অবস্থায় নাগরিক সেবা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে অনেকেই স্থানীয় নির্বাচনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন।

সম্প্রতি রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা বলেছেন, ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দিলে কিংবা চেয়ারম্যানদের অপসারণ করলে প্রান্তিক পর্যায়ে সরকারি সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। যেসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাতক নন,সেগুলোও যে খুব ভালো চলছে তা বলার সুযোগ নেই। কারণ সবার মধ্যে একটা আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তা কাজ করছে। পক্ষান্তেরে আমলারা স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কেমন চালাচ্ছেন তার চেয়ে বড় প্রশ্ন, কেন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো আমলারা চালাবেন? সংবিধানের ৫৯ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচিত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানসমূহের উপর প্রজাতন্ত্রের প্রত্যেক প্রশাসনিক একাংশের স্থানীয় শাসনের ভার প্রদান করা হইবে।’ তার মানে এখন স্থানীয় সরকারপ্রতিষ্ঠানে যে অনির্বাচিত আমলাদের বসিয়ে দেয়া হলো, সেটি সংবিধানের এই বিধানের লঙ্ঘন। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশাসক নিয়োগের পক্ষে অনেক যুক্তিতর্ক এমনকি আইনি বিধিবিধান ও সংবিধানের ফাঁক-ফোকরের দোহাই দেয়া যাবে। কিন্তু দেশের অবস্থা যাই হোক না কেন, একসঙ্গে প্রায় সকল স্থানীয় সরকারপ্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে সেখানে সরকারি কর্মচারীদের বসিয়ে দেয়া কোনোভাবেই কাম্য নয়, কাঙ্ক্ষিত নয়, যৌক্তিকও নয়।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন উপায় একটিই। সেটি হলো দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রশাসকমুক্ত করা এবং সেই নির্বাচনটি হতে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই। শুধুমাত্র মানুষের দৈনন্দিন যাবতীয় সেবা নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করাই নয়, বরং আরও কিছু কারণে জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করছেন তারা। যেমন, স্থানীয় নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না। ফলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নির্দলীয় প্রার্থীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। দলীয় প্রার্থী হলেই তিনি খারাপ আর নির্দলীয় প্রার্থী মানেই ভালো, এই সরলীকরণের সুযোগ নেই এটা যেমন সত্য, তেমনি এটিও সত্য যে, দলীয় মাস্তান এবং টাকাওয়ালা মাসলম্যানদের দাপটে নির্দলীয় বা দলীয় দাস নন এমন অনেক ভালো মানুষের ইচ্ছা থাকলেও তারা নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সাহস পান না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক জায়গায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, স্থানীয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজকর্মী, সংগঠক, ধর্মীয় নেতা যারা সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয় মানুষেরা যাদেরকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেখতে চান বা যারা জনপ্রতিনিধি হলে দুর্নীতিমুক্ত থেকে গণমুখী কাজ করবেন বলে বিশ্বাস করা হয়, সেরকম প্রার্থীদেরও নির্বাচনে রাজি করানো যায় না শুধুমাত্র দলীয় প্রার্থীদের দাপট অথবা দলীয় সরকারের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে। কেননা স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা অন্য যে কোনো প্রার্থীর চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন। তার একটি বড় কারণ স্থানীয় প্রশাসন তার পক্ষে থাকে বা থাকতে বাধ্য হয়। কিন্তু নির্দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে তখন এই দলীয় প্রার্থীদের দাপট কম থাকে। সেই সুযোগ অনেক ভালো মানুষের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সুতরাং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সম্পন্ন করা যায়, তাহলে বিরাট সংখ্যক সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদে নির্দলীয় তথা দলীয় আনুগত্য নেই এমন অনেক প্রার্থী জয়ী হবেন। টাকা ও পেশিশক্তি না থাকলেও সমাজে ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতরা নির্বাচিত হতে পারবেন।

এছঅড়া জাতীয় সংসদের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠ পর্যায়ে নিজেদের ক্ষমতা জনসম্পৃক্ততারও একটা পরীক্ষা করতে পারবে। যেহেতু দেশে একটা বিরাট রাজনৈতিক অভ্যুত্থান হয়ে গেলো এবং শুধু ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগই নয় বরং এই ঘটনাটি যেহেতু সকল রাজনৈতিক দলের জন্যই একটি বিরাট শিক্ষা। অতএব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জনগণের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তারা কী প্রতিশ্রুতি দেয় এবং জনগণ তাদের ওপর কতটা আস্থা রাখে, সেটি বোঝার জন্যও স্থানীয় নির্বাচনটি আগে হওয়া দরকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব উঠে আসে। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন দল কেমন প্রার্থী দেবে এবং নেতৃত্বে আদৌ কোনো গুণগত পরিবর্তন আসবে কি না, তারও একটা মহড়া হয়ে যাবে।

জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ারের সঙ্গে আলোচনার সময় জানান, তার সরকার জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার একইসঙ্গে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে যেন স্থানীয় সরকার সত্যিই স্থানিক থাকে এবং একটি সরকার নিশ্চিত করা যায়।

এর আগে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি চান স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দ্রুত হোক। রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে এবং সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত হলে দ্রুত স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। আসিফ মাহমুদ বলেন, জনপ্রতিনিধি ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের দিয়ে যে নাগরিক সেবার প্রয়োজন, সেগুলো সঠিকভাবে দেওয়া সম্ভব হয় না। নাগরিকরা অনেক ধরনের হয়রানির শিকার হয়, সময় ক্ষেপণ হয় এবং নাগরিক সেবা ঠিকমতো পায় না। এই চ্যালেঞ্জটা আমাদের এখন ফেস করতে হচ্ছে।

গত ৬ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদও বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন দ্রুত করার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তাড়া থাকলেও ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় নির্বাচন করার ওপরও গুরুত্ব দিচ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যেও একই রকম মতামত আসছে। কেননা মানুষ বলছে, আমরা একটা শূন্যতার মধ্যে আছি। সেবা পাচ্ছি না। আমরা কার কাছে যাব বুঝতে পারছি না। যার ফলে এখন লোকাল নির্বাচনটা হয়ে যাওয়া উচিত।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রয়োজনীয় তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি যে দলেরই হোন না কেন বা তিনি মানুষ হিসেবে যেমনই হোন না কেন, জনগণের সঙ্গে তার একটা সরাসরি যোগাযোগ থাকে। ভোটারের কাছে তাকে যেতে হয়। কমিউনিটির মানুষের সঙ্গে তার ওঠবস করতে হয়। কারণ তিনি ওই কমিউনিটিরই মানুষ। এসব কারণে মেয়র বা চেয়ারম্যান যে দলেরই হোন না কেন, তিনি একধরনের জবাবদিহির মধ্যে থাকেন। কিন্তু যখন মেয়র ও চেয়ারম্যানদের চেয়ারে প্রশাসক বসে যান, তার সঙ্গে ওই কমিউনিটির মানুষের কোনো যোগসূত্র তৈরি হয় না। একজন চেয়ারম্যানের রুমে যত সহজে একজন সাধারণ মানুষ ঢুকে যেতে পারেন, স্যুটেট বুটেড একজন ডিসি, ইউএনও বা প্রশাসকের রুমে সেভাবে ঢুকে যেতে পারেন না। যার বাড়ি বগুড়ায়, তাকে প্রশাসক বানানো হয়েছে বরিশালে। যার বাড়ি বরিশাল তিনি হয়তো জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মন ও পালস তিনি কতটা বোঝেন, বুঝতে পারেন বা বুঝতে চান সেটি বিরাট প্রশ্ন।

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সম্প্রতি বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দরকার। দেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সরকারের সেবা থেকে বঞ্চিত। এই নির্বাচন যত দ্রুত করা যায়, সেটি দরকার। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনও দরকার। কিন্তু এর আগে এখানে কিছু সংস্কার করতে করতে হবে। সংস্কার করতে হবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনি আইনেও।
সূত্র মতে, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, এর মধ্যে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন অন্যতম। ৬ জানুয়ারি এ কমিশনের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বলা হয়, জাতীয় পর্যায়ে সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হলেও ঢাকার বাইরের মতামতে স্থানীয় নির্বাচন প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ধরনের বক্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কোন নির্বাচন আগে হচ্ছে, জাতীয় নাকি স্থানীয় সরকার?

অতি সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, দেশের ৬৫ শতাংশ মানুষ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন চান। তবে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আগে জাতীয় নির্বাচন চায়। দলগুলো মনে করে, এ মুহূর্তে জাতীয় অগ্রাধিকার হচ্ছে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের অনুপস্থিতিতে নাগরিক সেবা থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষ স্থানীয় সরকারের নির্বাচন আগে চাইতে পারেন। কিন্তু এই মত এ সময়ের জন্য মোটেও বাস্তবভিত্তিক নয়। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্র্ব্তী সরকারের অধীনই স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার পক্ষে রয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন ও দল। তারা বিবিএসের জরিপের ফলাফলকে যৌক্তিক বলে মনে করছে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়ে গত ডিসেম্বর মাসের ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে জনমত জরিপ পরিচালনা করে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদের সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকারের সব স্তরের নির্বাচন করার পক্ষে মত দিয়েছেন ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ মানুষ। বিপরীতে ২৯ শতাংশ মানুষ জাতীয় নির্বাচনের পরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন চান। এ ছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা আগে সংসদ নির্বাচন চাই। আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না। কারণ, এখন তো পুরো দেশের, পুরো জাতির ফোকাসটা হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচন হতে পারেনি। মানুষ সে জন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথটাকে পূরণ করতে চায়।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে তারপরই নির্বাচন করা উচিত হবে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার জানিয়েছেন, সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনে তাদের সমর্থন রয়েছে। কমিশনকে জামায়াত পরামর্শ দিয়েছে, জনগণ চায় স্থানীয় নির্বাচন আগে হোক। জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান ও সমর্থন জানায় জামায়াত।

 

জা ই / এনজি

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *