সকাল ৭:০৭ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

১৫ মিনিটের ঘোষণা থাকলেও ২০ ঘন্টায়ও ঢাকায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছেনা

জাফর ইকবাল

১৩ জুলাই ২০২৪

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র বলেছিলেন, যতই বৃষ্টি হোক না কেন মাত্র ১৫ মিনিটের মধ্যে পানি নিষ্ক্শান হয়ে যাবে। রাজধানীবাসীকে পানিবদ্ধতার জন্য কোনো দুর্ভোগ আর পোহাতে হবে না। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৬০ মিলিমিটার। এরপরও অবশ্য হয়েছে, তবে তা ভারী বৃষ্টি ছিল না। কিন্তু সকালের বৃষ্টিতেই ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, গ্রিন রোড, নিউমার্কেট, মতিঝিল, আরামবাগ, ফকিরাপুল, কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, দক্ষিণখান, কল্যাণপুর, বিজয় সরণি, মালিবাগ, মৌচাক, মিরপুরসহ রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার সড়ক ডুবে যায়। অনেক বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। কোথাও পানি ছিল হাঁটুসমান, কোথাও প্রায় কোমরসমান। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাত্র ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিতে যদি পুরো রাজধানী পানিতে তলিয়ে যায়, তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো কি করেছে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবছরই শত শত কোটি টাকা পানিবদ্ধতা নিরসনের নামে ব্যয় দেখাচ্ছে। জানা গেছে, গত চার বছরে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন শুধু পানিবদ্ধতা নিরসনে কমপক্ষে ৭৩০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু এর সুফল কতটা পাওয়া গেছে, তা শুক্রবার সকালের বৃষ্টি দেখিয়ে দিয়েছে।
সূত্র মতে, বর্ষা মওসুম আসার আগে দুই সিটির মেয়র, রাজউক, ওয়াসাসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো নানা ধরণের উদ্যোগের কথা বলে। কিন্তু বুষ্টি হলেই তলিয়ে যায় পুরো শহর। তাদের কথায় আর কাজের নূন্যতম কোনো মিল পাওয়া যায়না। অবস্থা এমন যে, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর যায়, যুগের পর যুগ, মন্ত্রী-মেয়রের পরিবর্তন হয়, কিন্তু বৃষ্টির মওসুমে রাজধানী ঢাকার পানিবদ্ধতা পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয় না। টানা কিছুক্ষণ ভারী বৃষ্টি হলে ঢাকার অধিকাংশ এলাকাই প্লাবিত হয়ে যায়। এটি যেন এখন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
শুক্রবারের পানিবদ্ধতা কেমন ছিল সেটি বুজা যায় সামাজিচক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত ছবি, জনগণের মন্তব্য থেকেই। অবস্থা এমন হয়েছে যে, শুক্রবার রাত আটটায়ও আরামবাগ এলাকার প্রধান সড়কের বেশির ভাগ অংশ হাঁটুপানিতে ডুবে ছিল। বিষয়টি ফেসবুকে ‘লাইভ’ (সরাসরি প্রচার) করেন অনেকে। একইভাবে নয়াপল্টনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক সন্ধ্যার পরও পানিতে ডুবে থাকার বিষয়টি ফেসবুকে লাইভ করেন অনেকে। ডুবে যাওয়া সড়কের ছবি ও ভিডিওর সঙ্গে নানা ধরনের মন্তব্য লিখে ফেসবুকে পোস্ট দেন কেউকেউ। এ রকম একটি পোস্টে মাহমুদ সুজন নামের একজন পানিবদ্ধতার ছবি দিয়ে লেখেন, ‘শান্তিনগর হয়ে উঠেছে বুড়িগঙ্গা নদী।’ তার দেওয়া ছবির নিচে একজন লিখেছেন, ‘শাহজাহানপুরেরও একই অবস্থা’। ইকবাল নামের একজন লিখেছেন, বাচ্চাদের সাঁতার শিখিয়ে নিন। এনামুল হক নামের আরেকজন ফেসবুকে মিরপুর এলাকার ছবি দিয়ে লিখেছেন ‘ভেনিস, মিরপুর ব্রাঞ্চ’। নিউমার্কেট এলাকায় ডুবে যাওয়া সড়কে এক পথশিশুর সাঁতার কাটার ছবি দিয়ে একজন লিখেছেন, ‘এ বছর আর কক্সাজার যাব না। বেঁচে থাকলে আগামী বছর।
রণি নামে একজন বলেন, ঢাকায় যদি চলতি হয়, তবে একটি পরিবারের একটা গাড়ির পাশাপাশি নৌকা থাকা জরুরি। কারণ বৃষ্টির দিনে এই নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাবে না। একটু টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই এমন দুর্ভোগে পড়তে হয় আমাদের। এর জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার পদক্ষেপ কারও দেখি না।
ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, নিউ মার্কেটে ভারী বৃষ্টি হলেই তলায় যায়। এতে ক্ষতি হয়। কোথাও যেতে পারবো না। এখানে পরিবেশ একটা তৈরি হয়ে গেছে। এর জন্য আদৌ কেউ ব্যবস্থা নেবে কি না! সেটা আমরা জানি না।
অন্যদিনে পানিবদ্ধতায় মানুষের চাপ থাকলেও শুক্রবার অবশ্য সেটি ছিলনা। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে যানবাহন ও মানুষের চাপ কম ছিল। কিন্তু ডুবে যাওয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে বিকল হয়ে পড়ে ছিল সিএনজিচালিত অটোরিকশা, বাস ও প্রাইভেট কার। যে কারণে দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ ঢাকাবাসীকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে বের হওয়ার অনুরোধ জানায়। গণমাধ্যমে প্রচারের জন্য ডিএমপির বার্তায় বলা হয়, প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ডুবে গিয়ে রাস্তায় অনেক গাড়ি বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করেছে। পুলিশ তাদের বার্তায় বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া রাজধানীর ২২টি এলাকার কথা উল্লেখ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, বংশাল, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কেল রোড, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্য ভবন, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড ও মিরপুর মাজার রোড। তবে প্রকৃতপক্ষে তখন রাজধানীতে ডুবে যাওয়ার এলাকার সংখ্যা আরও অনেক বেশি ছিল।
জানা গেছে, ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় যাতে পানিবদ্ধতা না হয়, সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। দক্ষিণ সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্র এটি নিশ্চিত করেছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ বলছে, পানিবদ্ধতা নিরসনে চার বছরে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। দুই সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে ঢাকার পানিবদ্ধতা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির জন্য মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ, পলিথিনজাতীয় বর্জ্য নির্বিচার নর্দমা ও খালে ফেলা হয়।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, পানিবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট, গত শুক্রবারের ঘটনা তা আবারও প্রমাণ করল। দুই সিটি যা করছে, তা সাময়িক ব্যবস্থা। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা মহাপরিকল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু টাকা খরচ করছে তারা। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার পানিবদ্ধতার সমাধান হবে না।
পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। মেয়র হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের চার বছর পার হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পানিবদ্ধতা দূর করার বিষয়ে তিনি নানা ধরনের আশ্বাস দিয়েছিলেন। যেমন গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার ওয়ারীতে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলেও ১৫ মিনিটের মধ্যে পানিনিষ্কাশিত হবে। সবশেষ গত ১৯ মে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র তাপস বলেছিলেন, ঢাকার পানিবদ্ধতার সমস্যা ৭০ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। বাস্তবতা ভিন্ন। শুক্রবারের বৃষ্টিতে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনেক এলাকার পানি ১২ ঘণ্টায়ও সরেনি। সকালের বৃষ্টিতে তলিয়ে যাওয়া মতিঝিল, কমলাপুর, গ্রিন রোড ও ঢাকা কলেজ এলাকায় সন্ধ্যার পরও পানি ছিল বলে স্বীকার করেছেন দক্ষিণ সিটির কর্মকর্তারাই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান সন্ধ্যা সাতটার দিকে পলাশী এলাকায় ছিলেন। তিনি বলেন, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনের সড়কে পানি জমে আছে। নিউমার্কেট এলাকাতেও পানিবদ্ধতা। গ্রিন রোডের কমফোর্ট হাসপাতাল থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতাল পর্যন্ত সড়ক সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিতে ডুবে ছিল। হাসপাতালগুলোতে রোগী নিয়ে যাতায়াত করতে দুর্ভোগে পড়েন অনেকে। পানি জমে সেন্ট্রাল রোড ও কলাবাগান এলাকায়। বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় কল্যাণপুর প্রধান সড়ক। কল্যাণপুর নতুন বাজার মোড় থেকে কল্যাণপুর গার্লস স্কুল পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক পুরো পানির নিচে ছিল। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে পুরান ঢাকার সামসাবাদ এলাকার বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে ডুবে ছিল। এই এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, সকাল থেকেই বাসার চারপাশের সড়কে পানি জমে আছে।
২০২১ সালের আগে ঢাকার পানিবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব ছিল ঢাকা ওয়াসার। তখন বৃষ্টির পানিতে রাস্তা ডুবে গেলে সিটি করপোরেশন ঢাকা ওয়াসার ওপর দায় চাপাত। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ঢাকা ওয়াসা আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা শহরের পানিবদ্ধতা নিরসনের মূল দায়িত্ব (খাল ও ড্রেনেজ) দেওয়া হয় ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে। কিন্তু অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন গত চার বছরে ব্যয় করেছে প্রায় ৭৩০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরেও (২০২৩-২৪) দুই সিটি করপোরেশন প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিল পানিবদ্ধতা নিরসনের কাজে। ঢাকা ওয়াসা ও দুই সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, গত এক যুগে পানিবদ্ধতা নিরসনে সব মিলিয়ে কমপক্ষে তিন হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তা দ্রুত সময়ে নিষ্কাশন করার সক্ষমতা তাদের রয়েছে। এর বেশি বৃষ্টি হলে তারা নিরুপায়। তারা বলেন, বিগত সময়ে তারা কেবল খাল থেকে ভাসমান বর্জ্য অপসারণ করেছেন। তাই কাংখিত ফল পাচ্ছেন না।
পানিবদ্ধতার ভয়াবহতা দেখে ২০১৭ সালে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছিলেন, আমি প্রমিজ (অঙ্গীকার) করছি, সামনের বছর থেকে আর পানিবদ্ধতা দেখবেন না। ওই বছর ঢাকার ধানমন্ডি ২৭ নম্বর, শান্তিনগর, বংশাল এলাকায় সামান্য বৃষ্টিতেও তীব্র পানিবদ্ধতা তৈরি হয়। এসব এলাকায় শুক্রবারও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানিবদ্ধতা ছিল।
জানা গেছে, শান্তিনগর ও এর আশপাশের এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি প্রায় ১০০ কোটি টাকা খরচ করে। কিন্তু পরিস্থিতি খুব একটা বদলায়নি। শুক্রবারের বৃষ্টিতে শান্তিনগর এলাকা তলিয়ে যায়। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের দুই বছর আগে প্রায় ২১ কোটি টাকা খরচ করেছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। অথচ বৃষ্টিতে প্রায় ৮ ঘণ্টা ডুবে ছিল এই এলাকা।
ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে বুঝে পাওয়ার পর খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ করছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ। তবে নগরবিদেরা বলছেন, শুধু খাল পরিষ্কার রাখলেই পানিবদ্ধতার সমাধান হবে না। বৃষ্টির পানি নর্দমা হয়ে খালের মাধ্যমে নদীতে যাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ আছে। এসব জায়গায়ও নজর দিতে হবে। প্রকৌশলীরা বলছেন, বৃষ্টির পানি ক্যাচপিটের (নালার ওপরের ছিদ্রযুক্ত ঢাকনা) মাধ্যমে সড়কের নিচে পানিনিষ্কাশনের নালায় যায়। বহু ক্যাচপিট এবং নালার মুখ বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি সড়কের নিচের অংশের নালা হয়ে খাল ও নদীতে গিয়ে পড়ে। সেই নালার অবস্থা করুণ। খালের তলায় মাটি জমে গভীরতা কমে যাওয়ায় পানির ধারণক্ষমতা কমে গেছে। দুই সিটি করপোরেশনকে খালের গভীরতা বাড়াতে জোর দিতে হবে।
নগর পরিকল্পনাবিদ আকতার মাহমুদবলেন, ঢাকার পানিবদ্ধতার দায় এখন সিটি করপোরেশনকেই নিতে হবে। পানিবদ্ধতা নিরসনে কিছু নিয়মিত ও ছোট কাজ আছে, যেমন খাল ও নালা পরিষ্কার করা। এটি পানিবদ্ধতা নিরসনের একেবারে প্রাথমিক কাজ। সিটি করপোরেশন এটুকুই করছে। ঢাকার পানিবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে তাদের উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান নয়। পানিবদ্ধতা দূর করতে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত বিবেচনা করে সেভাবে ড্রেনেজ (নালা) ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। কিন্তু বিগত বছরগুলোতে এর কিছুই হয়নি।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) তথ্য বলছেন, ১৯৯৫ সালে ঢাকা শহরের কেন্দ্রিয় অঞ্চলে জলাশয়ের পরিমাণ ছিল ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ। আর ২০২৩ সালে জলশায়ের পরিমাণ এসে দাড়িয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থ্যাৎ গত ২৮ বছরে জলাশয়ের পরিমান কমেছে ১৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির পরিসংখ্যান বলছে, একই সময়ের ব্যবধান এই নগরীতে সবুজের পরিমাণ কমেছে ১৩ শতাংশ। ঢাকার সবুজের পরিমাণ বর্তমানে ৯ শতাংশ। এর আগে ১৯৯৫ সালে ছিল ১৩ শতাংশ।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, প্রতি বছর আমরা শুনি, আগামী বর্ষায় পানিবদ্ধতা থাকবে না।’এতে আমরা আশান্বিত হই। আমরা দৃশ্যমান কিছু কাজও দেখি। কিন্তু এটার কোনও বাস্তবতা নেই। কারণ, ঢাকার ড্রেনের (নর্দমা) প্রাকৃতিক যে সংযোগটা ছিল তা নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এখন এমন কোনও জলাশয় ও সংযোগ ব্যবস্থা নেই যা ঢাকাকে পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষা করতে পারে। অনেক জলাশয় দখল হয়, সেসব রক্ষাও হয় এটা সত্য। কিন্তু কখনও শোনা যায় না যে জলাশয় দখলে কারও কারদণ্ড হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভিশন বা লক্ষ্য নিয়ে কাজগুলো যদি করা হয়। সবুজের পরিমাণ, জলাশয়ের পরিমাণ ও সংযোগ ব্যবস্থা যদি সঠিক থাকে, তবেই ঢাকা পানিবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। নয়তো এটি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

 

জা/ই : এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *