বিকাল ৩:৩৮ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন প্রবাসী আয় জুলাইয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক
০১ আগস্ট ২০২৪

দেশে প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। সদ্যবিদায়ী জুলাই মাসে যে আয় এসেছে, তা গত ১০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ১৯১ কোটি মার্কিন ডলার। এর আগে সবশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রবাসী আয়সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারি ও সাধারণ ছুটি মিলিয়ে গত ১৯ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল। এ ছাড়া টানা ৫ দিন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ও ১০ দিন মোবাইলে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এ কারণে দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈদেশিক লেনদেন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

জানা যায়, গত মাসের প্রথম ৩ সপ্তাহে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। এর মধ্যে ১ থেকে ২০ জুলাই এসেছে ১৪২ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। আর ২১ থেকে ৩১ জুলাই আয় এসেছে ৪৭ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে গতকাল ৩১ জুলাই এক দিনেই এসেছে ১২ কোটি ডলার।

জানা যায়, গত জুনে ২৫৪ কোটি ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। জুনে দেশে যে পরিমাণ প্রবাসী আয় এসেছিল, তা ছিল একক মাস হিসেবে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সবশেষ ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২৫৯ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কেউ বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়ে থাকলে ব্যাংকগুলো তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিতরণ করতে বাধ্য। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দেশের প্রবাসী আয় প্রেরণকারী রেমিট্যান্স হাউসগুলো যদি এ আয় ধরে রাখে, তাহলে তা দেশে আসতে কিছুটা সময় লাগে। তবে এ ক্ষেত্রে সাধারণত দুই-তিন দিনের বেশি সময় লাগে না।

এদিকে প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় দেশের শীর্ষস্থানীয় ১২ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ডেকে প্রবাসী আয় বাড়াতে জোর দেওয়ার তাগিদ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় সংগ্রহে প্রতি ডলার ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায় সংগ্রহ করে আসছিল। প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার তাদের কিছুটা বাড়তি দাম দিয়ে হলেও বৈধ পথে আয় বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। ফলে প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম ১২০ টাকায় উঠেছে।

দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার-সংকট চলছে। এ সংকট কাটাতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুত বাড়াতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তদারকি কমিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি যেকোনো ধরনের অর্থ বৈধ পথে দেশে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা শিথিল করেছে। গত কয়েক মাসে যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল প্রবাসী আয় দেশে আসার ক্ষেত্রে। গত মাসে সেই ধারায় কিছুটা ছন্দপতন হয়েছে।

এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন প্রতি মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার কারণে একপর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর পণ্য আমদানির খরচ বেড়ে যায়। দেখা দেয় ডলার-সংকট। এ সংকট এখনো কাটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ১৬১ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ডলার।

 

 

টি আই/ এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *