আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৭ মার্চ ২০২৫
এবার বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করতে অভিনব এক পন্থা অবলম্বন করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ‘এন্টি-সেমিটিজম’ অর্থাৎ ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। সেই আদেশের আওতায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট স্ক্যান করবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর তাতে যাদেরকে হামাস সমর্থক হিসেবে মনে করা হবে, তাদের ভিসা বাতিল করা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর হামাসকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওসের প্রতিবেদন অনুসারে, হাজার হাজার ছাত্র ভিসাধারীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি, ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভের খবর, ইহুদি ছাত্রদের মামলা ও অন্যান্য প্রতিবাদমূলক কার্যক্রমের তথ্যও বিশ্লেষণ করবে কর্তৃপক্ষ।
ট্রাম্প বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘অবৈধ বিক্ষোভ’ হতে দেবে, তাদের জন্য সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর উস্কানিদাতাদের কারাগারে পাঠানো হবে অথবা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সেই সঙ্গে আমেরিকান শিক্ষার্থীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে বা গ্রেফতার করা হবে।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে আরেক মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজ জানিয়েছে, এরই মধ্যে এক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ওই শিক্ষার্থী হামাসের সমর্থনে আয়োজিত ‘অনুষ্ঠানে’ অংশগ্রহণকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এটিই ছিল যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যাওয়া কোনো শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের প্রথম পদক্ষেপ।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে মন্তব্য করেনি। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী সমর্থকদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স কার্যকর রয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইন ভঙ্গকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলকরণসহ তাদের দেশ থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট অন্য দুটি বিভাগ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে একটি নির্বাহী আদেশে অ্যান্টিসেমিটিজম মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলার পক্ষে চলমান ফিলিস্তিনপন্থি প্রতিবাদে অংশগ্রহণকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের মার্কিন ভূখণ্ড থেকে বহিষ্কার করবেন।
মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনী মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করে। তাই ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধিতা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) মঙ্গলবার এক খোলা চিঠিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোকে অনুরোধ করেছে, যেন তারা প্রশাসনের চাপে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বা অধ্যাপকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়। এসিএলইউয়ের আইনি পরিচালক সিসিলিয়া ওয়াং বলেছেন, হোয়াইট হাউজ যেভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শিক্ষাগত স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে, তা সত্যিই উদ্বেগজনক।
তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসকদের নিজেদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর এই প্রচেষ্টা ম্যাকার্থি যুগের কালো অধ্যায়ের কথা মনে করিয়ে দেয়।
শ ই/ এনজি