সন্ধ্যা ৭:২৫ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

স্বৈরাচারদের প্রতি উদারতার কোনো প্রশ্নই আসে না: উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

 

 

স্বৈরাচারদের প্রতি উদারতা দেখানোর কোনো প্রশ্নই আসে না। বরং পৃথিবীর বুকে নিদর্শন হয়ে থাকে, এমন কঠোর শাস্তি তাঁদের দিতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেছেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছেন, কিন্তু এখনো তাঁর দোসরেরা সরকারের ভেতরে ও বাইরে থেকে পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এগুলো প্রতিহত করতে হবে। স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের এমন কঠোর বিচারের আওতায় আনতে হবে যে পৃথিবীর বুকে এটা নিদর্শন হিসেবে থাকবে। পৃথিবীর ইতিহাসে যাতে লিপিবদ্ধ থাকে, শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি চালানো, মানবাধিকার হরণ ও স্বৈরতন্ত্র কায়েমের পরিণতি কী হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া বনানী বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থী গোলাম নাফিজের নামে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের নামফলক উন্মোচন উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, এমন নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করতে চাই যেখানে অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাগুলো প্রতিফলিত হবে, যে বাংলাদেশে আর কখনোই স্বৈরাচার ফিরে আসতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে একাত্তরে, নব্বইয়ে রক্ত দিয়েছি। নব্বইয়ে রক্ত দেওয়ার ৩০ বছর পরেই গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। বারবার কি আমরা রক্ত দেব? দেশের মানুষের সঙ্গে কি বারবার প্রতারণা করা হবে?’

গোলাম নাফিজের বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, জুলাই-আগস্ট মাসে নিষ্ঠুরতা-নির্মমতার ভেতর দিয়ে দেশের মানুষকে যেতে হয়েছে। ১৬ বছর ধরেই বাংলাদেশের চিত্র এমন ছিল। কিন্তু পুলিশ ব্যবহার করে, হামলা-মামলা, নিপীড়ন করেও স্বৈরাচার সরকারের শেষ রক্ষা হয়নি। ছাত্ররাই এ দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করেছেন। শিক্ষার্থীরা সাহসী ভূমিকা পালন করেছেন। সেই সব সাহসীর মধ্যে অন্যতম শহীদ গোলাম নাফিজ। নাফিজ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় যখন রিকশায় পড়ে ছিল, তাকে হাসপাতালে নিতেও বাধা দেওয়া হয়েছে। নাফিজের মতো অন্য শহীদদের জীবনের বিনিময়েই এই বাংলাদেশ।

শহীদ নাফিজসহ অন্য শহীদেরাই এই আন্দোলনের কারিগর ও রূপকার বলে মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও জনগণের অভ্যুত্থানের ফলেই এই বাংলাদেশের সৃষ্টি। এই অভ্যুত্থানকে কোনো দলীয়, গোষ্ঠী ও ব্যক্তির জায়গা থেকে যেন ব্যাখ্যা না করি। স্বাধীনতাসংগ্রামকে একটি দলীয় ঘটনা হিসেবে আওয়ামী লীগ ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করেছে। এমন ভুল যাতে আমরা না করি। এ অভ্যুত্থান কোনো দলের, কোনো গোষ্ঠীর মতের নয়। এই অভ্যুত্থান দেশের সব মানুষের।’

আন্দোলনে শহীদ ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সহযোগিতা করা দ্রুত শুরু হবে জানিয়ে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের তহবিলে প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এ সপ্তাহ থেকেই নিহত ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা শুরু করা হবে। যাঁরা বিশেষভাবে আহত হয়েছেন, তাঁদের দ্রুত বিদেশে পাঠানো ও দৃষ্টিশক্তি যাঁরা হারিয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসায় বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে শহীদ গোলাম নাফিজের বাবা গোলাম রহমান বলেন, ‘আমি ঘুমাতে পারি না। গুলিবিদ্ধ হয়ে নাফিজ যখন রিকশায় পড়ে ছিল, সেই ছবি বারবার চোখে ভেসে ওঠে। সে কোনো দলের ছিল না, ক্ষমতার লোভেও আন্দোলনে যায়নি। দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গিয়ে আমার ছেলে শহীদ হয়েছে।’

অনুষ্ঠানে ঢাকা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মশিউর রহমান, আন্দোলনে শহীদ মীর মুগ্ধর ভাই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক স্নিগ্ধ, বনানী স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মাফরাজ হোসেন ও শিক্ষার্থী হাসিন আহমেদ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান শেষে বনানী বিদ্যানিকেতনের ইংরেজি ভার্সনের ভবনটি গোলাম নাফিজের নামে নামকরণ করা হয়।

 

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *