জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
০২ মার্চ ২০২৫
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নির্বাচনের বিষয়ে সরকার কী করবে জনগণের সামনে তা দৃশ্যমান করার দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া যত দীর্ঘায়িত হবে, চলমান সমস্যা আরও বাড়বে। জাতির মধ্যে যে অস্থিরতা রয়েছে তা কাটাতে হলে একটি নির্বাচন প্রয়োজন।
রোববার (২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মানবাধিকার নিশ্চিতে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী পুরো বিশ্ব ঘৃণিত গণহত্যাকারী হিসেবে শেখ হাসিনাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যার মতো ঘটনাগুলোর প্রতিটি তথ্য সেখানে চিত্রায়িত আছে। বাংলাদেশের গণহত্যায় শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ ছিল- এটি সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত।
তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী আওয়ামী প্রধান শেখ হাসিনাকে এখনো আমরা অনুশোচনা করতে দেখিনি। আওয়ামী লীগের কোনো নেতা এখন পর্যন্ত গণহত্যার দায় স্বীকার করে বাংলাদেশের রাজনীতি করবে- এ কথা বলতে শুনিনি। এটা ভাবতে অবাক লাগে। উল্টো তাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানকারী সাধারণ মানুষদের যেন অপরাধ হয়েছে। আপনারা শুধু আয়নাঘরের কথা শুনেছেন বা আমাদের গুম করার কাহিনী শুনেছেন। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের তো বক্তব্য দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে এসেছেন তারা কথা বলছেন, কিন্তু যাদের এখনো কোনো হদিস পাওয়া যায়নি তারা তো কথা বলতে পারছে না। আপনারা হয়তো শুনে আন্দাজ করতে পারেন যাদেরকে গুম করা হয়েছিল তাদেরকে কীভাবে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে, জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড, গুম-খুনের ইতিহাস।
বিএনপির এই নেতা বলেন, এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হলে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সংস্কৃতি পাল্টাতে হবে। যে রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে বাংলাদেশের মানুষ আনন্দে গ্রহণ করবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, অগণতান্ত্রিক রাজনীতির বিরুদ্ধে, যে কোনো অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে। সব মানুষ আপন করে নিতে পারে এরকম রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চা আমাদের চালু করতে হবে।
বর্তমান সময়ে ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারের অন্যতম। এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, এটি আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল বিগত সময়ে। সুতরাং অধিকারের বিভিন্ন ক্লাসিফিকেশন বা বিভিন্ন রকমের ধরন বা বিভিন্ন রকমের ইনক্লুশন হবে। সময়ের প্রেক্ষিতে বাড়বে, মৌলিক অধিকারের অবস্থাও একই হবে। যে মৌলিক অধিকার আগে পাঁচটি ছিল, সামনে তা ছয়টা হবে, সাতটা হবে, রকম বাড়তে থাকবে।
রমজানে দ্রব্যমূল্যের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, উপদেষ্টা মন্ডলী ও মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা গরীব মানুষের দিকে লক্ষ্য রাখুন যাতে সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষমতার মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো পায়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন। অন্যথায় মানুষ আপনাদের সমালোচনা করবেই। সংবিধানে যদি মানবাধিকার এবং মৌলিক অধিকারগুলো শক্তিশালী থাকে এবং তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের আইন প্রণীত হয়; সেই আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যদি এমন কোন সংস্থা থাকে যার ওপরে সরাসরি প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না, তখনই মানবাধিকারগুলো নিশ্চিত হয়। মানবাধিকার বিকাশের যে ভূমিকা সে ভূমিকা অবশ্যই রাজনীতিবিদদেরই নিতে হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বিএনপি সবার আগে সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কারের প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। আমরা প্রস্তাব দিয়েছি ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যদি আমরা জয়ী হই তাহলে সবাইকে নিয়ে সেই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করব। সব রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কার করব। নির্বাচনের বিষয়ে সরকার কী করবে জনগণের সামনে তা দৃশ্যমান করার দাবি জানাচ্ছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া যত দীর্ঘায়িত হবে, চলমান সমস্যা আরও বাড়বে। জাতির মধ্যে যে অস্থিরতা রয়েছে তা কাটাতে হলে একটি নির্বাচন প্রয়োজন। যত দিন যাচ্ছে, ততই গণতন্ত্র উত্তরণের যাত্রাপথ বাধাগ্রস্ত করার কূটকৌশল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুধু পুলিশ দিয়ে নয়, রাজনীতি দিয়ে ফ্যাসিবাদ মোকাবিলা করতে হবে। তাহলেই ফ্যাসিবাদের মূল উপড়ে ফেলা যাবে।
এসময় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
জা ই/ এনজি