নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ আগস্ট ২০২৪

সোমবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমাবেশে এসব কথা বলা হয়।
সমাবেশে ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতে চলে যাওয়া আওয়ামী লীগ সভাপতিকে প্রধান আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা করতেও অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়।
“যারা স্বৈরাচারকে পুনর্বাসন করতে চায়, ‘খুনি’ হাসিনাকে পুনর্বাসনের মত বক্তব্য দিতে চায়, আমরা ছাত্র-জনতা যেভাবে তাদেরকে উপদেষ্টা বানিয়েছি, ঠিক একইভাবে গদি থেকে ছুড়ে নামাতে দ্বিধা করব না।”
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ১৮ থেকে ২১ জুলাই পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে আওয়ামী লীগ সরকারের হিসাবেই দেড়শ মানুষের মৃত্যুর পর।
সোমবার সচিবালয়ে এক আয়োজনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, “আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গন্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, গন্ডগোল পাকিয়ে তো লাভ হবে না। এতে লোকজন আরো ক্ষেপে উঠবে।”
আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠনের পরামর্শও দিয়েছেন এই উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। সে দলে প্রচুর ভালো ভালো নেতা আছে, আমি এখনই নাম বলতে পারি। এ দলটা একসময় বাঙালিদের সেক্যুলারপন্থি দল ছিল। বাঙালি আপার ক্লাস মুসলিম লীগে ছিল, আর মিডল ক্লাসের দল ছিল আওয়ামী লীগ।

সোমবার সচিবালয়ে এক আয়োজনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে ‘গন্ডগোল না করার’ আহ্বান জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ উপদেষ্টা কারো নাম উল্লেখ না করে বলেন, “যারা খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার জন্য ব্যাকস্টেজে ম্যাকানিজম করছেন, আপনাদের এই প্লটিংয়ের আমরা বিষদাঁত ভেঙে দেব। আমরা সচেতন করে দিতে চাই, উপদেষ্টারা আপনারা সচেতন হয়ে যান। আপনাদেরকে ছাত্র জনতা প্রতিহত করবে। সুতরাং খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার কোন ধরনের চিন্তা আপনারা করবেন না।
“রক্তের দাগ এখনো শুকায় নাই, রক্তের গন্ধ এখনো যায় নাই, মেডিকেলে আহতরা কাতরাচ্ছে। সুতরাং আপনাদের স্পর্ধা হয় কীভাবে জনতাকে অস্বীকার করে খুনিদেরকে পুনর্বাসন করার?”
শেখ হাসিনার বিচারের দাবি জানিয়ে হাসনাত বলেন, “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে ‘খুনি হাসিনাকে’ প্রধান আসামি করে এবং অন্যান্য যারা তারা সহযোগী ছিল এবং ‘ফ্যাসিজমের’ যারা সহযোগী ছিল তাদেরকে আসামি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করতে হবে।”
ক্যাম্পাসে ‘দখলদারত্বের রাজনীতি’ বন্ধের দাবি জানিয়ে এই সমন্বয়ক বলেন, “ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের চলে আসা ‘দখলদারত্বের যে রাজনীতি’, ‘হল দখলের যে রাজনীতি’, গেস্টরুমের যে রাজনীতি, ‘স্বৈরাচারদের সহযোগী’ হিসেবে থাকার যে রাজনীতি, সে রাজনীতি ক্যাম্পাসে আর কোনোদিন পুনর্বাসন হবে না।”
‘পাল্টা অভ্যুত্থান চেষ্টা’
পাল্টা অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, “আমরা দেখছি আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন পর্যায়ে ‘স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের’ কিছু ‘হায়না এবং শকুনেরা’ ক্যু করার চিন্তা করছে। আমরা জানিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশের ছাত্র জনতা যখন এক হয়েছে, তখন আপনাদের এসব ক্যু কুকুরের মত লেজ গুটিয়ে পালাবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভে ‘পাল্টা অভ্যুত্থান চেষ্টা’ নিয়ে হুঁশিয়ার করে দেন সমন্বয়করা।
সমাবেশে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে কিন্তু দেশে এখনো স্বৈরাচার রয়ে গেছে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের ‘সন্ত্রাসীরা যে অপকর্ম চালাচ্ছে’, আমরা ছাত্র সমাজ সকল অপকর্ম শক্ত হাতে দমন করব।”
অমুসলিমদের উপর হামলা হতে পারে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আমরা ছাত্রসমাজ তাদের নিরাপত্তায় আমাদের বুক পেতে দেব।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দিবস ১৫ আগস্টকে ঘিরে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা তাদের ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেব না। আমরা মাসের পর মাস রাজপথে থাকব, তবুও আমাদের বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেব না।”
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল রাজু ভাস্কর্য থেকে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ,মধুর ক্যান্টিন হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে৷
জা ই/ এনজি