নিজস্ব প্রতিবেদক
২১-ফেব্রুয়ারি ২০২৫
দেশে যদি আবার ফ্যাসিজমের উত্থানে হয় একুশের চেতনাই তা রুখবে বলে দৃঢ় প্রত্যায় ব্যক্ত করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুস্পস্তবক অর্পনের পর সাংবাদিকদের কাছে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এই প্রত্যায় ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনা অম্লান চেতনা, এই চেতনা কোনদিন ম্লান হবে না। যদি আবারো কোনো ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটে, কোনো ধরনের ডিক্টেটরের উত্থান ঘটে একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের দামাল ছেলেদের, এদেশের জনগনকে আবারো রাজপথে লড়াইয়ে নামতে উদ্ধুদ্ধ করবেন। আমরা মনে করি যে, ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে আমাদের কা্ছে এমন একটি চেতনা এমন একটি বৈপ্লবিক আদর্শ যা আমাদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে যেটাকে কখনোই ধবংস করা যায় না, যেটিকে কখনোই ম্লান করা যায় না। একুশে ফেব্রুয়ারি যুগ যুগ ধরে অনাধিকাল ধরে যতদিন পৃথিবী মানুষ এবং আমাদের সমাজ-সংসার থাকবে ততদিন একুশ আমাদেরকে সাহস যোগাবে এবং লড়াই করতে উদ্ধুব্ধ করবে।
রিজভী বলেন, একুশ মানে অধিকারের সংগ্রাম, একুশ মানে সাংস্কৃতিক সংগ্রামও। এটা ছিলো জাতীয় স্বাধীনতার প্রথম সোপান, এই ভাষা আন্দোলনের সোপান পেরিয়ে আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে গেছি স্বাধীনতার যুদ্ধের দিকেৃ আমাদের মহা অর্জন আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যখনই আমরা স্বৈরাচারের কবলের মধ্যে পড়েছি, যখন দেশে গণতন্ত্রহারা মানুষ বন্দিশালার মধ্যে বাস করেছে তখন ৫২‘ আমাদের উদ্ধুব্ধ করেছে, আমাদের প্রেরণা জাগরিত করেছে কিভাবে আমরা এই স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, অত্যাচারির বিরুদ্ধে লড়াই করব। একুশের প্রেরণাতে আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি, অনেক নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছে.. তাদের রক্তাক্ত পথ পেরিয়ে চূড়ান্ত যে আন্দোলন ছাত্র-জনতা যে বিপ্লব তার মধ্য দিয়ে সেই ভয়ংকর উপীড়ক এবং রক্তপিপাসু স্বৈরাচার, ভয়ংকর দুর্নীতিবাজ সরকার তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
এর আগে ভোর সাড়ে ছয়টায় নিউ মার্কেটের কাছে বলাকা সিনেমা হলের সামনে থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের নিয়ে বিশাল প্রভাব ফেরি আজীমপুর কবরাস্থানে যায় রিজভীর নেতৃত্বে। সেখানে ভাষা শহীদের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন এবং ফাতেহা পাঠ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আসে বিএনপির প্রভাত ফেরি। নেতা-কর্মীরা কালো ব্যাজ ধারণ করে।
রিজভীর নেতৃত্বে শহীদ মিনারের বেদীতে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে পুস্পস্তবক অর্পন করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এদের মধ্যে ছিলেন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, আমিনুল হক, ইশরাক হোসেন, মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়নসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
নির্বাচনই এই সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে রিজভী বলেন, এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে। এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি অবাধ নির্বাচন করা এবং তার সাথে আরও কিছু আনুসাঙ্গিক কাজ আছে, বিভিন্ন সংস্কার আছেৃ যেটা প্রয়োজনীয় সংস্কার যেটা যে সময় আছে, সেই সময় করা সম্ভব। কিন্তু জনগনকে আশ্বস্ত করতে হবে.. যে দেশের জনগন এবং তরুণ প্রজন্ম আজকে যাদের ১৮ বছর বয়স, যাদের একুশ বছর বয়স তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি, ভোট কি তারা জানে না। কারণ ১৭ বছর ভোট হয়েছে আপনার চতুস্পদ জন্তু দিয়ে ভোট কেন্দ্রে দিনের ভোট রাত্রে করেছে। গণতন্ত্রকে ধবংস করার জন্য নির্বাচন কমিশন ধবংস করেছে, ভোট ধবংস করেছে। এগুলো থেকে উত্তরণে ঘটিয়ে জনগনের মধ্যে আস্থা তৈরি করার জন্যই একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, সবার কাছে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন ৃএটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব।
সংসদ নির্বাচনই আগে দরকার মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আগে স্থানীয় সরকার না পরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এই বির্তকে আমার মনে হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অংশ গ্রহন করা উচিত নয়। বরং এই সরকারকে প্রথমেই জনগনের ক্ষমতা জনগনকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগন তাদের নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করবে তারাই নির্ধারণ করবে যে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন না অন্যান্য নির্বাচন কখন হবে। আপনারা দেখেছেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখন চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী জিতেছে, সিলেট সিটি নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান জিতেছে, ঢাকা সিটি করপোরেশনে মোহাম্মদ হানিফ জিতেছে, বিএনপির সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করায় বিরোধীরা জিতেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় সেটা হয়নি।
খালেদা জিয়া-তারেক রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে দেয়া তথ্য সঠিক নয় উল্লেখ করে রিজভী বলেন, আমাদের কিছু কিছু নেতা বা কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখছেন যে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি হবে, এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে। কিন্তু এটা আমাদের দল বিএনপির অবস্থান নয়। এই কথাটা আপনাদের সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিলাম।
জা ই / এনজি