সকাল ৭:২৮ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

‘শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরুর আশা তারেক রহমানের

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৫  ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

‘শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তারেক রহমান।

রোববার বিকালে মহান বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরকম আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, ‘‘ বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার কি করতে চাইছে?,রাষ্ট্র মেরামতের জন্য অন্তর্বতীকালীন সরকারের আর কত মাস কিংবা কত সময় প্রয়োজন…. সেটি জানার অধিকার জনগনের রয়েছে। সরকার জনগনের সামনে তাদের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করলে এটি একদিকে জনগনের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতাকেই নিশ্চিত করবে। অপর দিকে প্রশাসনিক কার্য্ক্রমেও গতিশীলতা বাড়বে।”

‘‘আমি বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, শত অস্পষ্টতা কাটিয়ে অচিরেই নির্বাচনী রোডম্যাপে যাত্রা শুরু করবে আমাদের প্রিয় এই বাংলাদেশ। সেই যাত্রায় আবারো বলছি, মন দিয়ে শুনবেন দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী… আপনাদের বিশ্বস্ত সঙ্গি হচ্ছে দেশের গণতন্ত্রকামী স্বাধীনতা প্রিয় জনগন, আপনারা জনগনের সঙ্গে থাকুন, জনগনকে সঙ্গে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন।”

রোড ম্যাপের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, ‘‘ তবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের আগামী দিনের কর্ম পরিকল্পনার রোড ম্যাপ ঘোষণার কথা শুনলেই যদি উপদেষ্টাদের চেহারায় অস্বস্তির ছাপ ফুটে উঠে সেটি হবে অবশ্যই গণ আকাংখা বিরোধী।”

‘‘ সরকারের তাদের সকল কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগনের কাছে যত বেশি স্বচ্ছ থাকবে… জনগনও সরকারের প্রতি ততবেশি সমর্থনের হাত প্রসারিত রাখবে।”

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে এই আলোচনা সভা আয়োজন হয়। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

বক্তব্যের শুরুতে তারেক স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক জিয়াউর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন,‘‘ এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ ও স্বাধীনতা রক্ষা পেয়েছে। এই কারণে প্রায় আমি বলে থাকি, ১৯৭১ সাল ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার অর্জনের আর ২০২৪ সাল দেশ এবং জনগনের স্বাধীনতা রক্ষার।”

‘‘এমন পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে এবারের বিজয় দিবস অবশ্যই বেশি আনন্দের গৌরবের এবং অনেক বেশি অর্থবহ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। আমি দূঢ় ভাবে বিশ্বাস করতে চাই, আগামীর বাংলাদেশে প্রতিটি স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস হয়ে উঠবে জনগনের প্রতি রাষ্ট্র ও সরকারের দায় কিংবা প্রতিশ্রুতি পুরণের একটি অর্থবহ দিন।”

‘জনগনের ভোটে নির্বাচিত সংসদ’

তারেক বলেন, ‘‘ রাষ্ট্র ও জনগনকে স্বনির্ভর ও শক্তিশালী করতে হলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে গণতন্ত্রের লালন, বিকাশ এবং চর্চা অত্যন্ত জরুরী। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও সমাজে গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা অন্যতম প্র্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে জনগনের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত জাতীয় সংসদ।

‘‘ জবাবদিহিতমূলক সরকার ও সংসদ যথাযথভাবে কার্য্কর থাকলে জনগনের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত থাকে। আমাদের মনে রাখা দরকার জনগন শক্তিশালী না থাকলে জাতীয় ঐক্যও শক্তিশালী হয় না।”

‘জনদুর্ভোগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে’

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘ প্রায় প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মানুষের মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসা খরচ যোগাতে অনেকের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। এর পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্ধবগতিতে দিশেহারা সমাজের প্রায় প্রতিটি মানুষ।প্রতিদিনের সংসারের ব্যয় মিটাতে জনগনকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে…।”

‘‘জনজীবনের নিত্য দুর্ভোগ কিংবা বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ না করে অন্তবর্তীকালীন সরকার যদি শুধু সংস্কারের নামে সময় সংক্ষেপ করেন তাহলে জনগনের কাছে সংস্কার আগে না সংসার আগে এই প্রশ্নটি মূখ্য হয়ে উঠতে পারে।”

তিনি বলেন, ‘‘ দুর্ভোগ বর্তমানে মেনে নিলেও জনগন এখনো সরকারের বিরুদ্ধে তেমন উচ্চ-বাচ্য করছেন না। কারণ জনগন বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারকে সফল দেখতে চায়।”

‘‘ তবে আগেও বলেছি, আজোও উল্লেখ করতে চাই, অন্তবর্তীকালীন সরকার নিজেরা নিজেদেরকে সফল দেখতে চায় কিনা তা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।”

তারেক বলেন, ‘‘ একটি দেশের জন্য ৫৪ বছর সময় কম নয়…. এই কথাটি গতকাল একজন প্রতিবন্ধী ভাই উনি উল্লেখ করেছেন তার কিছু কথা বলতে গিয়ে। লাখো মানুষের রক্তের উপর দিয়ে দেশের জনগন আজ অভূতপূর্বে ঐক্যের মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই ঐক্য কাজে লাগিয়ে একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে।”

‘‘ একটি বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ইতিমধ্যেই ৩১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে… এই কর্মসূচির লক্ষ্যই হচ্ছে. শিশু-নারী-বৃদ্ধ অথবা দলমত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে রাষ্ট্রকে অবশ্যই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে।”

‘প্রত্যেকটা বাংলাদেশী এখন তারেকের নেতৃত্ব চায়’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ আমরা এখন যেটা চাই, প্রত্যেকটি বাংলাদেশী এই মুহুর্তে যেটা চায় সেটা হচ্ছে, জনাব তারেক রহমানের নেতৃত্ব চায় যেন দেশে ফিরে আসার জন্য চায়।”

তিনি বলেন, ‘‘ আসুন আমাদের নেতা তারেক রহমানের যুগান্তকারী ৩১ দফা কর্মসূচিতে আমরা সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাই। আমি বার বার যে কথাটা বলছি, আবার বলতে চাই যে,সবচেয়ে বেশি যে প্রয়োজন এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার সেটা হচ্ছে যে, আমাদের অবশ্যই অতি দ্রুত একটি গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই সংস্কারের পথটা আমাদের সুগম করতে হবে। সেটাই হচ্ছে একমাত্র যোগ্য কাজ, সেটাই হবে এই মুহুর্তে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দাবির। ”

‘‘ আসুন আমরা যারা বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থক রয়েছি, আমরা সবাই একসাথে একযোগে এই লক্ষ্যে এগিয়ে যাই। আর একটি কথা মনে রাখতে হবে, যে কথাটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বার বার বলছেন যে, আপনাদের আচার-আচরণের ওপর নির্ভর করবে যে, সামনের দিনে জনগনের ভালোবাসা পাবো কি পাবো… সেই কথা চিন্তা করেই আমরা যেন এগিয়ে যাই।”

দলের প্র্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের এম মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন বক্তব্য রাখেন।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *