সকাল ৭:২১ | সোমবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাসূল (স:) ভিক্ষাবৃত্তিকে নিরুৎসাহিত করেছেন

ইসলামও জীবন

 

মুফতি সফিউল্লাহ
২৭ এপ্রিল ২০২৫

 

বাংলাদেশে ভিক্ষাবৃত্তির রয়েছে নানা বৈচিত্র্য। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে রাজধানীর ব্যস্ত অলিগলি, অফিস-আদালত, বাসাবাড়ি, বাস-ট্রেন— সর্বত্রই ভিক্ষুকদের অবাধ বিচরণ লক্ষ করা যায়।

বিশেষত, ঢাকায় নানা ধরনের ভিক্ষুকের উপস্থিতি চোখে পড়ে। এদের মধ্যে অনেকে প্রকৃত অর্থেই বিকলাঙ্গ হলেও অনেকের বিকলাঙ্গতা জন্মগত নয়; বরং একটি সংঘবদ্ধ চক্র শিশু-কিশোরদের অপহরণ করে নির্মমভাবে পঙ্গু বানিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে বাধ্য করে।

ভিক্ষার মাধ্যমে যে অর্থ সংগ্রহ হয়, তার বেশিরভাগই চলে যায় সেই চক্রের হাতে, আর ভিক্ষুকরা পায় খুব সামান্য। ধর্মপ্রাণ মানুষরা সহানুভূতি ও সওয়াবের আশায় এদের দান করে থাকেন, যদিও ভিক্ষাবৃত্তির পেছনের নির্মম সত্য অনেকেরই অজানা থাকে।

ইসলাম ধর্ম ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে নিরুৎসাহিত করে। কোনো বিপদে পড়ে সাময়িকভাবে কারও সাহায্য চাওয়া অনুমোদিত হলেও, আজীবন ভিক্ষা করে জীবনযাপন করা ইসলামে কঠোরভাবে নিন্দিত।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তোমাদের কেউ যদি তার রশি নিয়ে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে এবং তা বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে, তবে তা ভিক্ষার চেয়ে উত্তম; কারণ লোকে তাকে দান করতে পারে আবার নাও করতে পারে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ১০৪২)

আরেক হাদিসে তিনি বলেছেন, কেয়ামতের দিন ভিক্ষাকারী এমন অবস্থায় উঠবে, যে তার মুখমণ্ডলে কোনো গোশত থাকবে না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং: ১০৪০)

এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইসলামে মেহনত ও পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে ধনীদের প্রতি, যাতে তারা প্রকৃত দরিদ্র, এতিম, অনাথ ও অসহায়দের খুঁজে বের করে সহযোগিতা করে। আল্লাহ বলেন, আর তাদের ধন-সম্পদে ভিখারি ও বঞ্চিতদের জন্য নির্ধারিত হক রয়েছে। (সূরা যারিয়াত, আয়াত: ১৯)

তবে এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা উচিত— ইসলাম প্রকৃত দরিদ্র, আহত, ঋণগ্রস্ত ও বৃদ্ধদের ভিক্ষা বৈধ করেছে; যারা কর্মক্ষম হয়েও ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা বানিয়েছে, তাদের প্রতি কঠোরভাবে বিরোধিতা করেছে।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন—ভিক্ষা করা তিন প্রকারের লোক ছাড়া অন্য কারো জন্য বৈধ নয়: যে অত্যন্ত দারিদ্র্যপীড়িত, যে গুরুতর ঋণে নিমজ্জিত হয়েছে এবং যে রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং: ১৬৪১)

বর্তমান সমাজে অনেকেই ভিক্ষাকে সহজ আয়ের মাধ্যম মনে করে নিয়েছে। এমনকি অনেক ভিক্ষুকের গ্রামে জমি-জমা, বাড়িঘর থাকা সত্ত্বেও তারা শহরে ভিক্ষা করছে।

অন্যদিকে প্রকৃত দুঃস্থ ও অসহায় মানুষরা অজ্ঞাত থেকে চরম দুর্ভোগের মধ্যে জীবনযাপন করছে। তাই আমাদের উচিত প্রকৃত দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং যারা ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা বানিয়েছে, তাদের কর্মমুখী জীবনে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া।

ভিক্ষাবৃত্তি রোধে সরকার, সমাজ ও প্রতিটি সচেতন নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। কাজের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষার প্রসার এবং জনসচেতনতা বাড়িয়ে ভিক্ষাবৃত্তির এই সামাজিক ব্যাধিকে নির্মূল করা সম্ভব। ভিক্ষুককে অর্থ দিয়ে সহানুভূতি দেখানোর পরিবর্তে তাকে কর্মক্ষম করে তুলতে সাহায্য করাই হবে প্রকৃত মানবতা।

 

লেখক: উস্তাযুল হাদিস, জামিয়া মিফতাহুল উলূম নেত্রকোনা

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *