রাত ৩:০৯ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যসহ নানা আয়োজনে বড়দিন উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

 

 

সারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনাসহ নানা আয়োজনে আজ বুধবার উদযাপন করা হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’। দিনটি উপলক্ষে আজ ছিল সরকারি ছুটি।

দিবসটি ঘিরে আনন্দ-হাসি-গানে প্রাণ মিলেছে প্রাণে এবং গির্জায় গির্জায় হয়েছে প্রার্থনা। মানবতার কল্যাণে যিশু খ্রিস্টের শান্তির বাণী ছড়িয়ে গেছে অন্তরে অন্তরে। এছাড়া ক্রিসমাস ট্রি আর সান্তাক্লজের উপহারে মেতে উঠছে শিশুরা। রাজধানীঢাকাসহ সারাদেশে দিনটি উপলক্ষে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নানা আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন করা হয়েছে।

খ্রিষ্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এই দিনে বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্টধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে ‘বড়দিন’ হিসেবে উদ্যাপন করে থাকে। খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারের মাধ্যমে মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতেই প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটেছিল।

পারিবারিক, সামাজিক ও ধর্মীয় মেলবন্ধনের এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে গেছেন। এছাড়া বড়দিনের উৎসব ঘিরে আনন্দমুখর আয়োজন ছিল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরের অভিজাত হোটেলগুলোতে রঙিন বাতি, ফুল আর প্রতীকী ক্রিসমাস ট্রিতে সাজানো হয়েছে।
বড়দিনের সবচেয়ে জমকালো উদযাপন রাজধানী ঢাকায় হয়ে থাকে। চার্চ, শপিংমল, পাঁচ তারকা হোটেলগুলো সাজে বর্ণিল সাজে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। রমনার কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রাল চার্চের গির্জাসহ বাহারি সাজে সেজেছে সব গির্জা। ঝলমলে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়েছে হোটেলগুলোতে। শিশুদের জন্যে বড় দিনের দিনটিকে উপভোগ্য করে তুলতে প্রায় সব ধরনের আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে পাঁচ তারকা হোটেলগুলো। হোটেলগুলোতে শোভা পেয়েছে গিফট বক্স, ঝলমলে আলোকসজ্জা, ক্রিস্টমাস ট্রিসহ বড়দিনের নানা অনুষঙ্গ। প্রতিবারের মতো এবারও ওয়েস্টিন, শেরাটন, সোনারগাঁও হোটেলে ছিল শিশুদের জন্যে বিশেষ আয়োজন।

এদিকে বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টায় রাজধানীর তেজগাঁও হলি রোজারি চার্চে প্রধান যাজক, ফাদার জয়ন্ত এস গমেজ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে এ উৎসব শুরু করেন। শুরুতে প্রার্থনায় যিশুর মহিমাকীর্তন এবং ইউক্রেন-রাশিয়া, ইসরাইল-ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ সারাবিশ্বের সব যুদ্ধ বন্ধ ও বিশ্বশান্তি কামনা করা হয়। পাশাপাশি পরিবর্তিত বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও উন্নতি কামনায় প্রার্থনা করা হয়। শান্তি ও ন্যায়ের কথা বলা হয়।

কুমিল্লায় উপাসনা, পুঁথিপাঠ ,সংগীত পরিবেশন ও কেক কাটার মধ্যদিয়ে বড়দিন উদযাপিত হচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে ব্যাপটিস্ট ও ক্যাথলিক চার্চগুলোতে উপাসনার জন্য ভিড় করে খ্রিস্টান ধর্মের মানুষ। বড়দিন উপলক্ষে ব্যাপটিস্ট ও ক্যাথলিক চার্চগুলো বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। নগরীর বাদুরতলা রিভাইভ্যাল ব্যাপটিস্ট চার্চে পাস্টর ডা. লরেন্স তীমু বৈরাগীর নেতৃত্বে উপাসনা পাঠ ও সংগীত পরিবেশন করা হয়। ।বড়দিনকে ঘিরে নগরে নেওয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

নওগাঁয় খ্রিস্ট ধর্মের শ্লোক, যিশু খ্রিস্টের বানী পাঠ, গান, নাচ, কেক কেটে, আনন্দ ও উৎসবের মধ্যে দিয়ে বড় দিন উদযাপন করা হয়েছে। শহরের চকরামপুর এলাকায় সেন্ট মার্ক চার্চ এ এই দিনটি পালন করা হয়। নওগাঁ সেন্ট মার্ক চার্চের ফাদার রেভারেন্ট সর্বানন্দে উপস্থিত ছিলেন।

খুলনায় সকালে বিভিন্ন চার্চে বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বড়দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ছোট শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে এ সময় চার্জগুলোতে আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। প্রার্থনা শেষে আগতরা আনন্দে মেতে ওঠেন।

বগুড়ায় ৯টি গির্জা ও চার্চে উদযাপিত হয়েছে বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। চার্চের পাশাপাশি বিভিন্ন বাড়ি সাজানো হয়েছে। রাখা ছিল অতিথিদের জন্য আপ্যায়ন ব্যবস্থা। বগুড়া শহরে ছয়টি ও জেলার অন্য স্থানে তিনটিসহ ৯টি গির্জা ও চার্চগুলোতে বড়দিন উদযাপন হয়েছে বলে জানা গেছে।

নানা আয়োজনে বান্দরবানে উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। বড়দিন উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা মেতে উঠেছে নানা উৎসবে। বড়দিনকে ঘিরে সকাল থেকে জেলা শহরের ফাতেমা রাণী ক্যাথলিক গির্জায় আয়োজন করা হয় সমবেত প্রার্থনা।

মোংলার প্রধান শেহলাবুনিয়া ক্যাথলিক চার্চসহ ৪০টি গির্জায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দোৎসবের মধ্যদিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বড়দিনে শেহলাবুনিয়া খ্রিস্ট পল্লীসহ বিভিন্ন এলাকায় আলোকসজ্জায় উৎসবে মুখরিত হয়ে উঠে। মঙ্গলবার রাত ১১টায় শেহলাবুনিয়া ক্যাথলিক গির্জায় ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ঘণ্টা বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনার প্রথম পর্বের নানা আনুষ্ঠানিকতা।

বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর বাগানপাড়া উত্তম মেষপালক ক্যাথিড্রালে খ্রিস্টযোগ ও বিশেষ প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। এসময় খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যিশুকে স্মরণ করেন। পরে যিশু খ্রিস্টের মহিমা ও তার ক্ষমার গুণ তুলে ধরেন রাজশাহী ধর্মোপদেশের বিশপ জের্ভাস রোজারিও।

সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে বড়দিন উদযাপন করেছেন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় ঐতিহ্যবাহী পর্তুগীজদের নির্মিত জপমালার রানী’ গির্জায় সকালে সমবেত প্রার্থনা ও সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিনের আনুষ্ঠানিকতা। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ এতে যোগ দেন। গির্জার প্রধান পুরোহিত রিগ্যান ক্লেম্যান ডি কস্তা’র পৌরোহিত্যে অনুষ্ঠিত প্রার্থনায় যীশু খ্রিস্টের জীবন থেকে শিক্ষার বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি দেশ-জাতির সমৃদ্ধি ও শান্তি কামনা করা হয়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উৎসাহ, উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। উৎসবে সকাল থেকে ভিড় করছে খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ।

গির্জায় গির্জায় প্রার্থনা আর আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে মেহেরপুরে উদযাপিত হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ও সবচাইতে বড় উৎসব বড়দিন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টায় প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বড়দিন। সকাল সাড়ে আটটার দিকে মুজিবনগর উপজেলার ভবেরপাড়া চার্চে শুরু হয় দ্বিতীয় বারের মতো প্রার্থনা।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে পবিত্র খ্রিস্টজাগের মধ্যদিয়ে বরিশালে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিয়ে সূচনা হওয়া নানা ধর্মীয় কর্মসূচি চলব পহেলা জানুয়ারি পর্যন্ত।

নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মৌলভীবাজারে বিভিন্ন গির্জা ও খ্রিস্টান প্রার্থনালয়ে উদযাপিত হয় শুভ বড় দিন। বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় পর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সর্ববৃহৎ খ্রিস্টান মিশনে প্রার্থনার মধ্যে দিয়ে মূল আনুষ্ঠানিক শুরু হয়।

রাঙ্গামাটির নানা আয়োজনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন উদযাপিত হয়েছে। রাঙ্গামাটি বন্ধু যিশু টিলার সাধু জোসেফ গির্জা ও আসামবন্তি নির্মলা মারিয়া গির্জায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা।
রাঙ্গামাটি ক্যাথলিক চার্চপাল পুরোহিত ফাদার মাইকেল রায় প্রার্থনায় বাইবেল থেকে বাণী পাঠ ও শাস্ত্রের ব্যাখ্যা দেন।

রংপুর নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংক এলাকায় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিন উদযাপিত হয়। গির্জায় গির্জায় চলে প্রার্থনা। নগরীর রাধাবল্লভ এলাকায় ব্যাপ্টিস্ট চার্চে শুভ বড়দিন যিশুর জন্ম দিন উদযাপিত হয় । সকাল সাড় ৯টায় শুরু করে যিশুর জন্ম দিনের উৎসব। বড়দিন উপলক্ষে গির্জাগুলো ভেতরে-বাইরে রঙিন কাগজে ঢেকেছে। গির্জার চারপাশে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ময়মনসিংহে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়। বুধবার সকালে নগরীর ভাটিকাশর এলাকার সাধু পেট্রিক এর ক্যাথেড্রাল গির্জায় প্রার্থনা, আরতি, সংগীত ও আলোচনা সভায় যোগদান খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা। সাধু পেট্রিকের ক্যাথিড্রাল গির্জার পাল পুরোহিত ফাদার বিজন কুবি, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ গণেন পল কুবি সহ খ্রিস্টান ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গোপালগঞ্জে ১৫১ টি গির্জায় বিশ্বশান্তি, পাপ ও রোগ মুক্তির প্রার্থনায় কেটে যিশু খ্রিস্ট্রের জন্মদিন উদযাপন করেছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা। গোপালগঞ্জের ঘোষেরচর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে প্রথমে প্রার্থনা ও পরে আলোচনা সভা শেষে কেক কেটে যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন উদযাপন করা হয়। এ সময় ধর্মীয় গান গেয়ে যিশুকে স্মরণ করেন তারা।

সিলেটে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন উদযাপিত হয়। উৎসব উপলক্ষে রঙিন কাগজ, ফুল আর আলোকসজ্জা দিয়ে সাজানো হয়েছে সিলেটের নয়াসড়কে অবস্থিত প্রেসবিটরিয়ান গির্জা। গির্জার সামনে বসানো হচ্ছে ক্রিসমাস ট্রি।

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আর নানা আয়োজনে মধ্যদিয়ে পাবনায় উদযাপিত হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন। বড়দিন উদযাপন উপলক্ষে পাবনার গির্জায় আলোকসজ্জা, ক্রিসমার্স ট্রি সাজানো, গোশালা তৈরি, পিঠা তৈরি, খ্রিস্টানদের বাড়িতে বাড়িতে আলোকসজ্জাসহ নানা আয়োজনে খ্রিস্টান পল্লীর বসত বাড়িগুলো হয়ে উঠেছে উৎসবমুখর।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঝিনাইদহে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন উদযাপিত হয়েছে।কালীগঞ্জ উপজেলার ব্যাপিস্ট চার্চে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পরে পবিত্র বাইবেল থেকে আলোচনা ও প্রার্থনা করা হয়। প্রার্থনা করেন রেভারেস্ট হেনরি প্রদীপ বৈদ্য। পরে কেক কেটে ও বড় দিনের অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

শেরপুরে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনব্যাপী শুভ বড়দিনের উৎসব উদযাপিত হয়েছে। খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় এই উৎসবটি জেলার ৫২টি গির্জায় উপাসনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়।

এছাড়া দেশের অন্যান্য জেলায়ও যথাযথ ভাবগম্ভীয্যের মধ্য দিয়ে বড়দিন পালন করা হয়েছে।

 

টি আই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *