নিজস্ব প্রতিবেদক
০৩ নভেম্বর ২০২৪
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পরাজিত শক্তি দেশে নানা ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে। ছাত্র-জনতা যেভাবে ফ্যাস্টিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়েছে, তাদের আর কখনও গ্রহণ করা হবে না।
গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের শপথগ্রহণ উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন।
এদিকে মাজারে যাওয়ার সময় দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড়ের মধ্যে ধাক্কা খেয়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলতে দেখা যায় মির্জা ফখরুলকে। এ সময় তিনি এবং তার সহকারী ইউনুসকে দলের দুই নেতার গায়ে হাত তুলতেও দেখা যায়। আর এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, মহাসচিব এভাবে ছড়াও না হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেত। মিডিয়ায় ছবি দেখানোর জন্য যেভাবে মহাসচিবের পেছনে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়, তাতে মির্জা ফখরুল মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন নি।
আগামী সংসদ নির্বাচনে যাতে ফ্যাসিস্টরা ফিরে আসতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসিাচব বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জনপ্রিয় নেতা ভোটে প্রতিযোগিতা করে জিতিছিলেন, কিন্তু আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা জোরপূর্বকভাবে সেই ফলাফল কেড়ে নিয়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধন্যবাদ জানাই তারা ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ডা. শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন।
বিচার বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বিচার বিভাগ ন্যায় বিচারের মাধ্যমে ডা. শাহাদাতকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদালতের রায় মেনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে শাহাদাতকে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থায় করার তাদের ধন্যবাদ জানান মির্জা ফখরুল।
আগামী দিনগুলোতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, শাহাদাত হোসেনকে মেয়র নির্বাচিত ঘোষণার পর প্রমাণিত হয়েছে আওয়ামী লীগ গত তিনটি নির্বাচন দখল করে নিয়েছে। এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নতুনভাবে সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।
এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামকে বাঁচালেই বাংলাদেশ বাঁচবে। আমাদের যেই ইশতেহার-চট্টগ্রামকে গ্রিন সিটি, ক্লিন সিটি ও হেলদি সিটি করার সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাব। আজকের এই বিজয়ের মাধ্যমেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শ্রদ্ধা নিবেদনে সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ ভুলু, যুগ্ম মহাসচিব মাহমুদ নবী সোহেলসহ চট্টগ্রামের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত ধানের শীষ প্রতীকে পান ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট। সর্বোচ্চ ভোট পাওয়া আওয়ামী লীগের নগর কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক শাহাদাত। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই মামলার রায়ে গত ১ অক্টোবর শাহাদাতকে মেয়র ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ খাইরুল আমীন। তারই ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম সিটির মেয়র হিসেবে গতকাল সকালে সচিবালয়ে শপথ নিয়েছেন শাহাদাত হোসেন। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ তাকে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন। একই সঙ্গে কাউন্সিলর না থাকায় করপোরেশন পরিচালনার জন্য ১৭ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছেন।
জা ই / এনজি