রাত ৩:২৮ | বৃহস্পতিবার | ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

মামলা-দুর্নীতি ও বিতর্কিত কর্মকান্ডের পরও চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন বেবিচক প্রধান প্রকৌশলী !

বিশেষ সংবাদ

 

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

০৫ মার্চ ২০২৫

 

 

রয়েছে একাধিক মামলা ও অভিযোগ। এসব অভিযোগের তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতাচ্যুত গেল সরকারের সময়ে বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে সমালোচিতও হয়েছেন বারবার। তারপরও অবসরের পর আরো একবছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমানকে।

জানা গেছে, চলতি মাসের ২৩ তারিখে হাবিবুর রহমানের অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে দুদকে ৪ মামলা ঝুলতে থাকা এই কর্মকর্তাকে অবসরের পর আরো ১ বছর চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেবিচক। এদিকে বিতর্কিত কর্মকান্ডের জেরে এই কর্মকর্তাকে অপসারণে উচ্চ আদালতে করা হয়েছে রিট। ঘুষের টাকা ফেরত না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে রাজধানীর দুই থানায় একাধিক জিডি করেছেন ঠিকাদাররা। এমনকি আজ ০৫ মার্চ বুধবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে এই কর্মকর্তাকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ না দিতে চিঠি দিয়েছেন সিভিল এভিয়েশন কর্মচারি কল্যান সমিতির সাবেক সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম।

বেবিচক সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার বিকালে বেবিচকের বোর্ডসভায় এ কর্মকর্তাকে এক বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে হাবিবুর রহমানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে সরকারের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তের খবরে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

জানা গেছে, বেবিচক আওতাধীন দেশের বিমানবন্দরগুলোতে উন্নয়নের নামে লুটপাট হয়েছে। বেবিচকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের মামলায় এরই মধ্যে আসামি হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্ম সচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, বেবিচকের সাবেক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান। এছাড়া থার্ড টার্মিনালসহ দেশের আটটি বিমানবন্দরে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির তদন্ত করছে দুদক। ৯০০ কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে মামলা হয়েছে।

জানা গেছে, পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সাথে ৮১২ কোটি টাকা দুর্নীতির চার মামলার আসামি প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না এবং কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না- তা জানতে চেয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এ রুলের পরও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে। উল্টো তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বেবিচক কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে সমালোচনা। এ ধরনের সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে, মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ৪টি মামালার আসামী হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী রাখার জন্য বিপুল পরিমান অর্থ নিয়ে চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগ করার জন্য মাঠে নেমেছে একটি সিন্ডিকেট। ৪ টি মামলায় রাষ্ট্রের সাবেক একাধিক প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও ক্ষমতাধর ব্যাক্তি মামলা থেকে যেন রেহায় পায়, সেই লক্ষে মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ, তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট হাবিবের মাধ্যমে নষ্ট করে দেওয়া কিংবা গায়েব করে দেওয়া যায়। হাবিবুর রহমান এর সঙ্গে তারিক আহমেদ সিদ্দিকি ও মহিবুল হক এর সহিত যোগাযোগ রয়েছে। যে কোন মূল্যে উক্ত মামলাগুলো যেন প্রমান করা না যায় সেই কারনে মামলার আসামী হাবিবুর রহমানের প্রধান প্রকৌশলী হসাবে রাখার জন্য মরিয়া।

চিঠিতে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ থাকলে তাকে পদোন্নতি দেয় না বেবিচক। ইতোপূর্ব কখনো দেয়া হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ নুরুউদ্দিন ও মোঃ আমিনুল হাসিবের দুদকের অভিযোগ তদন্ত চলমান থাকায় তাদেরকে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী করা হয়নি। কিন্তু হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও বেবিচকের বোর্ড সভাপতি, সদস্য প্রশাসন ও সদস্য অর্থ কে ম্যানেজ করে তাকে প্রধান প্রকৌশলী হিসাবে পদোন্নতি দেয়।

দুদকের মামলা থাকার পরও হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী করা প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সে সময় গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, দুদক তদন্ত করছে এরকম একজন ব্যাক্তিকে কোনোভাবেই পদোন্নতি দিয়ে প্রধান প্রকৌশলী করা ন্যায় সঙ্গত হয়নি। যারা তাকে পদোন্নতি দিয়েছেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। এখন তাকে আবার চাকুরির মেয়াদ শেষে ১ বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার পায়তারা চলছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বুধবার নিউজগেটকে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া বলেন, অবসরের পর হাবিবুর রহমানকে আরও এক বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়টা আমাদের মিটিংয়ে সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখানে পাশ হলেই তার নিয়োগের মেয়াদ বাড়বে। অভিযোগ ও মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনার বিরুদ্ধে একাধিক ও কয়েকটি মামলা রয়েছে। তবে যে সব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তিনি সেসব স্থানের দায়িত্বেও ছিলেন না। যেহেতু অভিযোগগুলো দুদক তদন্ত করছে, তারাই জানাবে এসব অভিযোগ সঠিক কি-না। অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই তিনি শাস্তি পাবেন।

এ বিষয়ে রিটকারী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. সোলায়মান (তুষার) সংগ্রামকে বলেন, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। বিবাদী পক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন- এমনটাই  প্রত্যাশা করছি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বেবিচকের প্রকৌশল বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়, এমনকি ক্ষুদে বার্তাও পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি কোনো সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযোগকারী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, টেন্ডারের কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েও কাজ না দেওয়ায় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। একটি সিন্ডিকেট হাবিবুর রহমানকে প্রধান প্রকৌশলী রাখার জন্য বিপুল পরিমান অর্থ নিয়ে চুক্তি ভিক্তিক নিয়োগ করার জন্য মাঠে নেমেছে। তার মতো দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলে দূর্নীতি আরো বাড়বে।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *