১৬ আগস্ট ২০২৪
ভারতে বসে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ শুক্রবার সকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচ তলায় বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ৭৯তম জন্মদিন উপলক্ষে এক দোয়া মাহফিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দীর্ঘ লড়াই করেছি… তারপরে যদি মনে করেন যে, আমাদের লড়াই শেষ হয়ে গেছে তাহলে ভুল করবেন। এখন অত্যন্ত একটা ভাসমান অবস্থায় আছে। যেকোনো মুহুর্তে ভারতে বসে শেখ হাসিনা তার অবৈধ সুযোগ গ্রহন করতে পারেন… ইতিমধ্যে চক্রান্ত শুরু করেছে, সেই চক্রান্ত প্রতিরোধ করাই আমাদের কাজ।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে আসুন আমরা সবাই সেই প্রতিজ্ঞাই আল্লাহ‘তালার কাছে করি তিনি যেন আমাদের বিএনপির যে ভাবমূর্তি, যেটা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তৈরি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া তৈরি করেছে, তারেক রহমান তৈরি করেছেন, সেই ভাবমূর্তিকে সবাই অক্ষুন্ন রেখে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিএনপি ১৭ বছর ধরে লড়াই করে তার একটা ভিত্তি তৈরি করেছি, সেই ভিত্তির ওপরে দাঁড়িয়ে আমাদের ছেলেরা, তরুন-যুবক-ছাত্ররা, তারা আন্দোলন বিজয় পর্যায়ে নিয়ে গেছে…বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছে… আবু সাঈদ থেকে শুরু করে আরো অনেকে… প্রায় হাজার খানেক ছাত্র-শিক্ষার্থী প্রাণ দিয়েছে। ৩-৫ আগস্ট আমাদের বহু ছাত্রদলের ছেলেরা প্রাণ দিয়েছে। আমি পঙ্গু হাসপাতালে গিয়েছিলাম তখন ১২৪ জন ছিলো। আমি খবর নিয়ে দেখলাম যে, সেখানে ৯০ জন হচ্ছে ছাত্রদলের ছেলে। কিন্তু কখনো সংঘাত সৃষ্টি করা যাবে না। সকলকে এক হয়ে এখন কাজ করতে হবে।
উপাসনাল-মন্দির-গীর্জা পাহারায় শান্তি বিগ্রেড তৈরি কযার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এই যে কমিউনালিজমের কথা বলছে, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচার এসব কথা বলছে…এটা একটা চক্রান্ত। এই কথা বলে ধুঁয়া তুলে তারা(আওয়ামী লীগ) আরেকটা ঝগড়া করতে চায়। আপনাদের দায়িদ্ব নিজ নিজ এলাকায় প্রত্যেক এলাকায় নিজের নিয়ে শান্তি বিগ্রেড তৈরি করেন, শান্তি বিগ্রেড তৈরি করে পাহারা দেবেন। সমস্ত সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়, মন্দির, গীর্জা্ এসমস্ত পাহারা দেবেন… তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠা, তাদের জীবন-মালের দায়িত্ব কিন্তু আপনাদের। আমার একজন শিক্ষক ছিলেন ঈমানদার আলেম ছিলেন মাওলানা তমিজ উদ্দিন সাহেব… তিনি বাবরি মসজিদে হামলার সময়ে সকলকে বলেছিলেন, যে দেশে সংখ্যালঘুরা আছে সেখানে সংখ্যাগরুদের অর্থাৎ আমাদেরকে রক্ষা করা আমানত পবিত্র আমানত…. এই আমানত যে খেয়ানত করে সে আর মোমেন থাকে না….একথাগুলো মাথার ভেতরে সকলকে আনতে হবে এবং তাদের প্রটেকশনের ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে।
একই সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশ অনুযায়ী ‘প্রেম ও ভালোবাসা নিয়ে দেশকে সামনের দিতে এগিযে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে বলে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
নতুন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যখন সোশ্যাল মিডিয়াতে পত্রি-পত্রিকায় যে বিরুপ খবর দেখি তখন কিন্তু আমরা আতঙ্কিত হই। আবার কোন নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হচ্ছে যে, জনগনের ভোটকে জনগনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করবার জন্য আবার কোন নব্য ফ্যাসিবাদ এসে উপস্থিত হচ্ছে কিনা। এ দিক থেকে সজাগ থাকতে হবে।অর্থাৎ ঐক্য , ঐক্য , ঐক্যে এবং ধৈয্যশীল অবস্থা, সহনশীল অবস্থা, ডিসিপ্লিনের মধ্যে আমাদেরকে চলতে হবে। এই কথা বলছি এজন্য যে, আজকে ম্যাডামের জন্মদিনের অনুষ্ঠান না? ক‘জন এসছেন? কালকে আপনাদের প্রোগ্রাম ছিলো না? ক‘জন আসছিলেন। সেভাবে আসে নাই…. অনেক কম, আজকেও কম। কি জন্য ? জয় হয়ে গেছে?
তিনি বলেন, না এই যুদ্ধকে জারি রাখতে হবে, এই সংগ্রামকে চালিয়ে যেতে হবে। তা না হলে আমরা কিন্তু অনেক বিপদে পড়ে যাবো। এক ফ্যাসিবাদকে পরাজতি করেছি আমরা। নব্য ফ্যাসিবাদ যেন না আসতে পারে তার জন্যে আমাদেরকে সজাগ থাকতে হবে।
জঞ্জাল সাফ করতে অন্তর্বতীকালীন সরকারকে কিছু সময় দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, এই সরকার একেবারে নরম সরকার, অন্তর্বতীকালীন সরকার….এটা মনে রাখতে হবে। তার দায়িত্ব একটা নির্বাচন করে দিয়ে যাবে… তাই না। জঞ্জাল জমা হয়েছে তো। এই জঞ্জাল তো সাফ করতে হবে। এজন্য্ তাদেরকে কিছু সময় তো দিতে হবে। সেইভা্বে কাজ করে আমাদের সংগ্রামকে জারি রাখতে হবে। ম্যাডামের যে আদর্শ তাকে অনুসরণ করতে হবে, ম্যাডামের যে বক্তব্য তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। প্রেম ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে। কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো প্রতিশোধ নয়।
নয়া পল্টনে বিএনপির উদ্যোগে এই মিলাদ মাহফিলে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও আশু সুস্থতা কামনা এবং চলমান আন্দোলনে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়াও অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করে মাওলানা শাহ মোহাম্মদ নেসারুল হক। ঢাকা ছাড়াও সারাদেশে আজকে মহানগর-জেলা-উপজেলায় এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় ।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পরিচালনায় এই দোয়া মাহফিলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড . আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরফত আলী সপু, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, শাম্মী আখতার, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারি, ঢাকা মহানগর দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, যু্ব দলের মোনায়েম সুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, উলামা দলের মাওলানা কাজী মো. সেলিম রেজা, মাওলানা কাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
জা ই/ এনজি