রাত ৩:১৩ | বৃহস্পতিবার | ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বেভারেজ পণ্যে কর কমানোর প্রস্তাব অ্যামচেমের এনবিআরের ‘না’

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
৫ মার্চ ২০২৫

 

কার্বোনেটেড বেভারেজ পণ্যে করভার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম)। তবে ওই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বুধবার (৫ মার্চ) প্রাক-বাজেট আলোচনায় অ্যামচেমের পক্ষে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউর রহমান মাহমুদ।

এ সময় তিনি বলেন, কার্বোনেটেড বেভারেজে সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি বা এসডি হ্রাস করা হোক। গত জানুয়ারিতে কার্বোনেটেড বেভারেজ পণ্যের উপর করভার বাড়ানো হয়েছিল।

তার এ বক্তব্যের জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, কার্বোনেটেড বেভারেজ জাতীয় পণ্যে কর বাড়ানোর জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চাপ আছে। এসডি কমাবে না এনবিআর। অন্য বিষয়ে বিবেচনা করা যেতে পারে। বড়দের যদি এত সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে ছোটরা মারা যাবে।

এছাড়া এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস নীতি ও আইসিটি) হোসেন আহমদ বলেন, এক গ্লাস বেভারেজে চিনি থাকে দশ চা চামচ। চিনি জাতীয় পণ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করহার বেশি থাকে।

প্রস্তাবে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) বাধ্যতামূলক না করে শুধু টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হয়।

অ্যামচেম ছাড়াও এদিন এনবিআরে বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড), হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বার।

প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকার বিনিয়োগকারীদের জন্য আলাদা কর অবকাশ সুবিধা প্রস্তাব করে বেপজা। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক (বিনিয়োগ উন্নয়ন) তানভীর হোসেন এ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলা ব্যতীত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের অন্যান্য সব জেলায় বিনিয়োগের জন্য পাঁচ বছর এবং বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলাসহ অন্যান্য বিভাগের সব জেলায় বিনিয়োগের জন্য ৭ বছরের কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও এর আশেপাশে এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সহজলভ্যতাসহ সমুদ্র বন্দর ও বিমান বন্দরের নিকটবর্তী এলাকায় অধিক পরিমাণে শিল্পায়ন হচ্ছে। পক্ষান্তরে, এসব সুবিধার অভাব রয়েছে এমন এলাকাগুলোতে আশানুরূপ শিল্পায়ন হচ্ছে না, যা দেশের সুষম উন্নয়নের পথে অন্তরায়।

তিনি আরও বলেন, দেশের সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রত্যন্ত, অনগ্রসর ও অনুন্নত এলাকাগুলোর বিনিয়োগকারীদেরকে আরও অধিক পরিমাণে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে সাময়িকভাবে দেশের রাজস্বের উপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও দেশে বিনিয়োগ বাড়বে, যা প্রকারান্তরে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে।

বর্তমানে বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থা ভেদে বিনিয়োগকারীদেরকে প্রদত্ত কর অবকাশ সুবিধার ভিন্নতা পরিলক্ষিত হচ্ছে জানিয়ে তানভীর বলেন, এর ফলে বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন সমমর্যাদা সম্পন্ন দুটি বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থার বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটি অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়, যা সুষম বিনিয়োগের অন্তরায়। এমতাবস্থায়, বেপজা, বেজা, বিডা এবং বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের আওতাধীন সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য সুষম কর অবকাশ সুবিধা ও প্রণোদনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।

তিনি বিনিয়োগ সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্যতা আনয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষ্যে শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় গাড়ি (যেমন- মালামাল পরিবহনের জন্য ট্রাক, পিক আপ, প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার, শ্রমিকদের যাতায়াত সুবিধা প্রদানের জন্য বাস অথবা মাইক্রোবাস ইত্যাদির মধ্যে যেকোনো দুটি) শুল্কমুক্তভাবে আমদানির সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করেন।

এদিকে স্থলবন্দরগুলোর সীমানা এক কিলোমিটার করে বৃদ্ধির দাবি জানান ইন্ডিয়া বাংলাদেশ চেম্বারের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ।

তিনি বলেন, আমদানি পর্যায়ে মিথ্যা ঘোষণায় ২০০ শতাংশ জরিমানার বিধান রয়েছে। অনেক সময় অনিচ্ছাকৃত ভুলও হয়, সেক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়। অনিচ্ছাকৃত ভুলের ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান বিবেচনার দাবি জানান তিনি। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ বন্দরকে সচল করার দাবিও জানান।

বাংলাদেশ স্পেশালাইজড ইকোনমিক জোন (বিএসইজেড) লভ্যাংশের বিপরীতে কর মওকুফ, উৎসে কর কর্তন অব্যাহতি, জমি ইজারার বিপরীতে কর কর্তন ব্যতীত বুকিং মানি বিদেশে ফেরত প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ,কে,এম, আমিরুল ইসলাম, বেজার পরিচালক ইমতিয়াজ হাসান, অ্যামচেমের সহসভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল ও বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এর সিইও ফেরদৌস আরা বেগম তাদের বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

আলোচনায় এনবিআর সদস্য (আয়কর নীতি) এ কে এম বদিউল আলমসহ বাজেট প্রণয়ন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

 

টি আই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *