সকাল ১০:১৩ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিমান ভ্রমনে শারীরিকভাবে সুস্থ হলেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো হবে : ডা. জাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ সেপ্টম্বর ২০২৪

 

 

বিমানে ভ্রমনের মতো শারীরিকভাবে এখনো বেগম খালেদা জিয়া সুস্থ নন বলে জানিয়েছেন তার চিকিৎসকরা। বুধবার রাতে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরার পরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন একথা জানান।

তিনি বলেন, ম্যাডামকে মাল্টি ডিসেপ্ল্যানারি সেন্টারে নেয়া প্রয়োজন, ইন দ্যা আদার হেন্ড নিতে হলেও উনার(খালেদা জিয়া) শারীরিক সুস্থতার একটা ব্যাপার আছে। যতই দিন যাচ্ছে তার শারীরিক সুস্থতা আসলে সত্যিকার অর্থে একটু প্রত্যেকটা ডিজিস ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। যার জন্যে উনার শারীরিক সুস্থতা কখনো কখনো দেখা যাচ্ছে ভালো আছেন এবং অল্প একটুতে দেখা যাচ্ছে শারীরিক অসুস্থতা বোধ করেন। যার জন্য যখন আপনি প্লেনে টেক-অফ করবেন, ল্যান্ডিং করবেন, প্লেনে যখন থাকবেন তখন একটা নেগেটিভ প্রেসার পড়ে। এই নেগেটিভ প্রেসারে উনার হার্টের যে সমস্যা আছে, লিভারে যে সমস্যা আছে, কিডনির যে জটিলতা আছে সব কিছু মিলিয়ে চিকিৎসকরা এ্খনো উনাকে মনে করতে পারছেন না যে, ১২/১৩ ঘন্টা জার্নি করার মতো অবস্থায় উনি আছেন।

ডা. জাহিদ বলেন, বাসার পথে, হসপিটালে যখন আপনারা দেখছেন উনাকে, আল হামদুলিল্লাহ। এখন অনেকটা সুস্থবোধ করছেন। এই সুস্থটায় বলা যাবে, উনার অনেক কিছু চিকিৎসা নির্ভর, ঔষধ নির্ভর, অনেক জিনিস সাপ্লিমেন্ট দিতে হয়, সেজন্য দেখা যায়, একটু এদিক-সেদিক হলে সার্বিকভাবে অসুস্থ বোধ করেন কিংবা বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। যার জন্যে আপনার বিষয়টা পুঙ্গানুপুঙ্খভাবে মানে অত্যন্ত যেটা আমরা দাপ্তরিক ভাষায় বলি মনিটরিংটা খুব সাবধানতার সাথে শুধু নয়, অত্যন্ত বিচক্ষনতার সাথেও আমাদের করতে হয় এবং এডজাস্টমেন্টটা শারীরের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে দ্রুত করতে হয়। একটু দেরি করলে যার জন্য প্রশ্ন থাকতে পারে যে, আপনারা উনাকে (১২ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে নিলেন কেনো? আমাদের অপেক্ষা করার সময় ছিলো না। তাতে শারীরিক জটিলতা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্যই আমরা উনাকে ক্লোজড মনিটিংয়ে রাখছি। কেবিনে রাখলেও আইসিইউর সুবিধা সম্বলিত সব কিছুই সেখানে থাকে।
জাহিদ বলেন, হাসপাতালে উনার যেরকম মনিটরিং করা হয় বাসায়ও একই ধরনের মনিটরিং ডাক্তাররা করবেন সার্বিক্ষনিক।
এভারকেয়ার হাসপাতালে থেকে বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা জিয়া। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন লিভার, সিরোসিস, হৃদরোগ,ফুসফুস ও কিডন জটিলতা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন।

সুস্থ হলে বিদেশে যাবেন মন্তব্য করে জাহিদ বলেন, উনি(খালেদা জিয়া) সুস্থ হলে শারীরিক সুস্থতা যখন আসবে আমরা উনাকে যত দ্রুততা সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয় দেব। উনার পরিবার বিশেষ করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, উনার মিসেস ডা. জোবায়েদা রহমান, উনার (তারেক রহমানের ভাই আরাফাত রহমান কোকো) ভাইয়ের মিসেসসহ পরিবারের সদস্যরা চান দ্রুততার মধ্যে বাইরে যাওয়ার। ফ্লাইং এ উঠার সময় ও নামার সময় যে স্ট্রেসটা সেটা উনি কতটা সহ্য করতে পারবে বা পারবেন না, এটা মেডিকেল পয়েন্টে প্রফেসনালিটিটা দেখতে হবে। আমরা উনার চিকিৎসার ব্যাপারে আশাবাদী যত দ্রুততার সঙ্গে চেষ্টা করছি, বাকীটা আল্লাহ রাব্বুল আ‘লামীন অশেষ রহমত তাহলে আমরা নিয়ে যেতে পারবো। আপনারা সবাই দোয়া করবেন।

জাহিদ বলেন, আমাদের মেডিকেল প্রস্তুতি পুরো কমপ্লিট। কোন হসপিটালে নেবো, কোথায় নেবো, দুইটা হসপিটালে আমরা সব কিছু কনসালটেন্ট থেকে শুরু করে সব কিছুই আমরা কাভার করে রেখেছি। আমরা কিভাবে নেবো সেটাও আমরা ঠিক করে রেখেছি। আইনগত যে জটিলতা আছে সেটা বর্তমান সরকারের আইনের সাথে সম্পর্কিত, তাদের সাথেও আমরা কথা বলেছি। উনাকে নিয়ে যাওয়া শারীরিক সুস্থতার ওপরে নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, উনার শারীরিক সুস্থতা হচ্ছে নাম্বার ওয়ান প্রাইওরিটি। যখনই মেডিকেল বোর্ড ফিল কববেন উনাকে নেয়া যাবে, ইয়েস আমরা ঠিক তখন ইনশাল্লাহ উনাকে নিয়ে যাবো।

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। এ দৃশ্য দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তার বর্ণনা দিয়ে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ম্যাডাম খালেদা জিয়া সব কিছু টেলিভিশনে দেখছিলেন। শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, এই দিনটা দেখার খুব প্রয়োজন ছিল। তবে তিনি বলেছিলেন, নেতাকর্মী ও দেশের মানুষ কেউ যেন নিজের হাতে আইন তুলে না নেন। প্রতিহিংসাপরায়ণ না হোন।
আন্দোলনে যে ছেলেটির হাত চলে গেছে, পা-চোখ চলে গেছে, উনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন তাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য দল যাতে সবটুকু সামর্থ্য নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়। সরকার তো সরকারের মতো করবেই। এজন্য ম্যাডাম খালেদা জিয়া মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের পঙ্গু ও চক্ষু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। চেয়ারপারসন এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।

অধ্যাপক সাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *