রাত ৪:৪৭ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে বিপ্লবীদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করুন : মেজর হাফিজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ আগস্ট ২০২৪

 

বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে বিপ্লবীদের নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। আজ রোববার সকালে শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পনের পর সাংবাদিকদের কাছে এই আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আগস্ট বিপ্লবের লক্ষ্য পুরণের জন্য আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাহায্য-সহযোগিতা দেবো। কিন্তু তাদেরকে বিপ্লবের মর্মবাণী উপলব্ধি করতে হবে। যারা বিপ্লবে অংশগ্রহন করেছে তাদেরকে নিয়ে আপনারা সরকার পরিচালনা করুন। অনতিবিলম্বে বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে সরিয়ে প্রয়োজন হলে উপদেষ্টা পরিষদে আরও ছাত্রদেরকে নেন। যারা বিপ্লবে অংশগ্রহন করেছে তাদেরকে নেন। আমাদের বুদ্ধিজীবীদের প্রয়্জোন নেই, যারা তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখে, দুঃসময় চুপ থাকে আর বিজয়ের পরে এসে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায় ওই ধরনের বুদ্ধিজীবীদের আমাদের প্রয়োজন নেই। সুতরাং এই অবস্থার অবসান চাই। প্রকৃত বিপ্লবীদেরকে নিয়ে এই সরকার গঠিত হোক সেটাই আমরা কামনা করি।

 

হাফিজ উদ্দিন বলেন, ২০ দিন অতিবাহিত হয়েছে এখন পর্যন্ত মনে হয় না বিপ্লবীদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কেবল মাত্র আসিফ নজরুল ছাড়া এই বিপ্লবে সরাসরি অংশগ্রহন করতে কাউকে দেখিনি। এখানে আমার সাথে আজকে উপস্থিত ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ মুক্তিযোদ্ধারা, তারা ৫ আগস্টের আগে এই সংগ্রামে অংশ গ্রহন করেছেন, শহীদ মিনারে জনতার কাতারে গিয়ে শামিল হয়েছেন। আমি সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এটি কোনো এনজিও সরকার নয়, বাংলাদেশের জনগনের সরকার। যারা ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ৩২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে সংগঠনটির সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ শেরে বাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করেন। এই সময়ে বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নাল আবেদীনসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন। পরে হাফিজ সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন।

 

হাফিজ উদ্দিন বলেন, বিপ্লব কিন্তু সম্পূর্ণ হয় নাই। এখনো বিপ্লব থমকে আছে। পুলিশি স্টেট যারা নির্মাণ করেছে বাংলাদেশে, যারা আয়নাঘরের মতো গৃহিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে, যারা আয়নাঘর নামে একটি নির্যাতনকারী টর্চার সেল বানিয়েছে, বহু আন্দোলনকারী, সাধারণ মানুষ ও বিরোধী দলের রাজনীতিকদেরকে গুম করেছে, হত্যা করেছে তারা বহাল তৈবিয়তে নিজ নিজ পদে এখনো আছে। প্রত্যেকটি জেলায় পুলিশ কর্মকর্তারা আগের মতোই আছে। তারাই আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্যদের আশ্রয় দিয়ে রেখেছে।

আয়না ঘরে বৈধ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার উচিত ছিলো সাংবাদিকদেরকে সেখানে নিয়ে গিয়ে দেখানো। কত ঘৃনিত এই নরপিচাসের দল কিভাবে তারা নিরহ মানুষদের অত্যাচার করেছে, হত্যা করেছে। ওই আয়না ঘরের সৃষ্টিকারীদের কারো কিছু হচ্ছে না। একজনকে মাত্র গ্রেফতার করা হয়েছে।

সেনানিবাসে আশ্রয় নেয়াদের তালিকা প্রকাশের দাবি জানিয়ে হাফিজ বলেন, সেনা বাহিনী প্রধানকে বলতে চাই, এই সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আমি বলতে চাই, সেনাবাহিনীকে বলতে চাই, সেনা বাহিনীকে এমনভাবে রাখবেন, এমন ভাবে তাদের আচরণ হওয়া উচিত যাতে মনে না হয় যে তারা জনগনের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। অবিলম্বে যে ৪৮৭ জন এখানে(সেনানিবাসে) আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের তালিকা প্রকাশ করুন। তালিকা প্রকাশে ভয়ের কি আছে। বিপ্লব সফল করতে হলে এই দুর্বত্যদের দমন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করেছি, বিপ্লবের কয়েকদিন পরে একটি অতিবিপ্লব সংঘটিত করার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে মদদ দিয়েছে কয়েকজন বিচারপতি এবং গোপালগঞ্জে কিছু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মদদপুষ্ঠ সন্ত্রাসী দল। কিভাবে তারা এই সাহস দেখায়? তারা সেনা বাহিনীর গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, সেনাবাহিনীকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে আমরা তাদের দৃষ্টান্তুমূলক শাস্তি দেখতে চাই, আমরা এই বিপ্লবের সফল পরিণতি দেখতে চাই। সশ্বস্ত্র বাহিনীর কাছে অনুরোধ জানাব, তারা যতদিন এই বাহিনী থাকবে তারা সবসময় যেন জনগনের পাশে দাঁড়ায়, জনগনের আশা-আকাংখার বাস্তবায়ন করে এবং কখনও ভুলে যাবেন না আপনারা কেউ জনগনের প্রভু নন। আপনাদের আচরণের বিনয় থাকতে হবে। আপনারা জনগনের সেবক একথা সবসময় মনে রাখবেন। আপনাদের আচা-আচরনে মহান আগস্ট বিপ্লবের যেন ক্ষতি না হয় সেটি লক্ষ্য রাখবেন।

 

প্রতিবিপ্লবের বিষয়ে সর্তক থাকুন এমন মন্তব্য করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, যারা পতিত শেখ হাসিনাকে শক্তিশালী করেছে তারা কেউ যদি উপদেষ্টা পরিষদে থেকে থাকে, সরিয়ে দেন, প্রশাসনের যারা আছে সরিয়ে দেন, বিপ্লবকে নিজের গতিতে চলতে দেন। আপনারা কেউ ভাববেন না যে, বিজয় অর্জিত হয়ে গিয়েছে।পাশের দেশে বসে শেখ হাসিনা অনেক ষড়যন্ত্র করবে। সুতরাং আপনারা সজাগ থাকবেন। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমাজকে অনুরোধ করব, বিজয়ের আনন্দে কেউ আত্মহারা হবেন না। আপনারা রাজপথে থাকুন। যেকোনো ধরনের প্রতিবিপ্লবের চেষ্টা হলে আমরা সবাই মিলেৃ. বিএনপি আপনাদের সাথে আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলও থাকবে। মূল শক্তি হিসেবে আপনারা ছাত্ররা রাজপথে থেকে প্রতিবিপ্লব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেবেন।

 

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *