নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
এক এগারো‘র সঙ্গে বিএনপিকে যুক্ত করে ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন মির্জা আব্বাস। অন্তর্বর্তী সরকারের ‘নিরপেক্ষতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের দাবি আরেকটা এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের বক্তব্যের একদিন পর বিএনিপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আজ শুক্রবার এক দোয়া মাহফিলে এরকম হুশিয়ারি উচ্চারণ করলেন।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্টট করে বলতে চাই, বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফয়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন এটা পরিণতি ভালো হবে না। এক এগারো নয়, যদি আপনারা এই ৫ আগস্টের পরে এই ধরণের কথা-বার্তা, সংঘাত-বিভেদ সৃষ্টির কথা আজকে যদি বলতে থাকেন তাহলে কিন্তু গণতন্ত্রের কোনো দিন চেহারা দেখবে না। আমি বলব, এই বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন।
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগ্য মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্টে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম লেখেছেন, ‘ছাত্ররাই এই সরকারের এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর যেটা ১/১১ এর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েকদিন আগে মাইনাস টু এর আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ সরকারের প্রস্তাবনা করছে।’ এ ধরনের পরিকল্পনা ‘গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের’ বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না বলে তুলে ধরে তিনি বলেন, “এবং আমি মনে করি এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।”
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে নির্বাচনের সময়ে।
নয়াপল্টনে কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে আরাফাত রহমান কোকোর ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে সকালে বনানী কবরাস্থনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ নেতা-কর্মীরা তার কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকালে গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে কোকো।
একটি দল ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে গেছে মন্তব্য করে মির্জা আব্বাস বলেন, একটা দল আছে যেটার নাম বলব না। ওই যে বলে না, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল…ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছে এবং তারা এমন ভাব করছে যে তারা যেন কিছুই জানেন না। ভাঁজা মাছটিও উল্টিয়ে খেতে জানে না। না জেনে পুট করে বিএনপির সম্বন্ধে দুই-একটা কথা বলে ফেলেন। যাই হোক, আমি কারো সমালোচনা করবো না।
এক-এগারোর ভয়াবহ শিকার বিএনপিই উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বহুমত, বহু পথ, বহু টেলিভিশন, বহু সংবাদপত্র আর ইদানিং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বহু কথা বিএনপির বিরুদ্ধে, আমাদের দলের বিরুদ্ধে বলছে। আমাদের দুই-একজন নেতা তার নিজ দায়িত্বে দুই-একটা কথা বলে থাকতে পারেন হয়ত কোথাও। আমি ঠিক শুনি নাই, আমি দেশের বাইরে ছিলাম। ইদানিং দেখলাম, বহু লোক বহুভাবে কথা বলছেন… কি বলছে? কেউ বলছে, বিএনপি নাকি ওয়ান ইলেভেন আনার পায়তারা করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ২০০৭ সালের এক এগারোর ভয়াবহ পরিণতি এটা বিএনপি চাইতে কেউ বেশি ভোগ করে নাই। বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মী, সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত ওই এক এগারোর ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পায় নাই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
বিএনপিকে নিয়ে চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ বিএনপির এই নীতি নির্ধারক বলেন, আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে যেমন নতুন মুখে কথা ফুটলে বাচ্চারা যেভাবে কথা বলেন না, আবোল-তাবোল প্রলাপ বকতে থাকে, অনেক দল. অনেক ব্যক্তি যারা আজকে কথা-বার্তা বলছেন, এমনভাবে কথা-বার্তা বলছেন যে, আমি মাঝে মাঝে হঠাৎ যথন সুযোগ হয় টেলিভিশনে দেখি উনাদের কথা-বার্তায় মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর। বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি পরিস্কার ভাবে বলতে চাই, ভারতের দোসর আওয়ামী লীগ তাদের দিকে যারা বিএনপিকে ঠেলে দিতে চায় আমি বলব, নিজের চেহারা আয়না দিয়ে দেখুন, নিজের অন্তরটা আয়না দিয়ে দেখুন, দেশবাসীকে আর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে, এখনো যারা এখানে আছেন, আমাদের রিজভী(রিজভী আহমেদ)সহ এবং আমরা, আমার নিজের পরিবারের কথা যদি বলি, আমার জেল হয়েছে ১১ বছর, আমার স্ত্রীর জেল হয়েছে ১৬ বছর, আমার ছোট ভাইয়ের(মির্জা খোকন) ৮ বছর জেল হয়েছে.. ১৭ বছর বিদেশে থেকে দেশে ফেরত এসেছে… এই নিপীড়ন শুধু আমার পরিবার নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি বিএনপির নেতা-কর্মীর ওপর এই নিপীড়ন হয়েছে। আজকে আমাদেরকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন অন্য শিবিরে। উদ্দেশ্যটা কি? আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান। আমাদেরকে তাড়াতে চান, এই কথা কখনো চিন্তা করবেন না। এদেশের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়্উার রহমান, এদেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এদেশের অতন্দ্র প্রহরী আমার এই দলের নেতা-কর্মী ভাইয়েরা স্বাধীনতা-সার্বভ্মৌত্বের জন্য।
বিদেশের কিছু ব্লগারের কর্মকান্ড প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, অনেক বলেন, বিএনপি শুধু নির্বাচন নির্বাচন করে, আরে ভাই নির্বাচন নির্বাচন করি না। কিছু কিছু বিএনপির ব্লগার ভাইয়েরা আছে, বিদেশ থেকে দেশ পরিচালনার চেষ্টা করেন। আপনারা যা বলেন, মনে হয় তাই হতে হবে দেশে। আরে ভাই, আপনাদের প্রতিটা মানুষকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি, আপনারাও আমাদেরকে চিনেন। আপনারা জ্ঞান-গরিমায় যথেষ্ট উন্নত, অনেক লেখাপড়া আপনারা করেন। কিন্তু এই সমস্ত জ্ঞান-গরিমা-গুন, এই সমস্ত বুদ্ধি বলে এমন কিছু করবেন না যাতে জাতির মধ্যে একটা বিভেদ সৃষ্টি হয়। দয়া করে দেশে শান্তি আনার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, আপনারা কথা বলতে জানেন, আপনাদের বুদ্ধি আছে, আপনাদের বুদ্ধি প্রজ্ঞা এদেশ গঠনের কাজে লাগান। বিএনপিকে দোষারোপ কইরেন না। বিএনপির মতো দেশপ্রেমিক একটি দল বাংলাদেশে এই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হয় নাই, নতুন করে কখনো হবে কিনা আমি জানি না।
নতুন দল হলে বিএনপি স্বাগত জানাবে জানিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, অনেকে বলেন, নতুন একটা দল হচ্ছে বিএনপি নাকি জেলাস করছে। এই কথা যারা বলেন, তারা জাতির শত্রু। নতুন দল হবে কিংবা হবে না সেটা যারা করতে তাদের ওপর নির্ভর করে। দল ঘোষণা হওয়ার পরে বিএনপির ভূমিকা কি হবে সেটা দেখবেন। আমরা নতুন দল হলে স্বাগত জানাই। যারা দল করবেন তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশটাকে পরিচালিত করবেন আমরা সরে যাবো প্রয়োজন পড়লে। কিন্তু ওই রকম উল্টা-পাল্টা কথা-বার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলেছি, ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছি। আজকে অনেকে বলেন, ৫ আগস্ট যারা এনেছে তারা সকল কিছুর অধিকার রাখে। ঠিক আছে অস্বীকার করবো না।কিন্তু আমরা যারা ১৭ বছর রক্ত দিলাম যারা, আমাদের ঘর পুড়ল, আমাদের সংসার পুড়ল তাদের কি হবে? আমাদের ইলিয়াস আলী গুম হলো, আমাদের চৌধুরী আলম গুম হলো, আমাদের ৫ হাজার লোক গুম হয়ে গেলো, আমাদের হাজার হাজার কর্মী জেল খাটলোৃ আমরা এখানে(দোয়া মাহফিলে) যারা আছেন সবাই কমবেশি জেল খেটেছি, আমি তো জেল খেটে, তাহলে আমার কি কোনো অবদান নাই? একজনের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে অন্যদের অবদানকে অস্বীকৃতি করার ফয়দা বাংলাদেশে নাই। যারা চেষ্টা করেন তারা অপচেষ্টাই করছেন, যারা চেষ্টা করেন তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন।
এই দোয়া মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রিয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, মহানগর বিএনপি দক্ষিনের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজিব আহসান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
জা ই / এনজি