বিকাল ৩:৫৯ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বাড্ডা থানার বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশনা অমান্যের অভিযোগ : শহীদ পুত্রের বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কুলসুম বেগম

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৩ সেপ্টম্বর ২০২৪

 

 

 

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ পুত্রের বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মমতাময়ী মা কুলসুম বেগম। থানায় মামলা নিতে অস্বীকার করায় দ্বারস্থ হন আদালতের। সেখান থেকে থানাকে মামলা নেয়ার নির্দেশনা দিলে সেটি নিয়েও গড়িমসি করছে রাজধানীর বাড্ডা থানা। ভয়ংকর স্বৈরাচার হটাতে জীবন দেওয়া পুত্রের বিচার পাওয়ার প্রক্রিয়া যে এত কঠিন হবে ভাবতে পারেনি কুলসুম বেগম।

জানা গেছে, গত ২০ জুলাই মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন কুলসুম পুত্র ইমন। ৫ আগষ্টের পর অনেকেই তাকে সান্ত্বনা দিতে বাসায় গেছেন। সবাই ছেলে হত্যার বিচারের আম্বাস দিয়ে থানায় যেতে বলেছেন। কিন্তু বারবার থানায় গিয়ে মামলা নিয়ে হয়রানির বিষয়টি সোমবার ছাত্রজনতাকে জানিয়েছেন কুলসুম বেগম। তারা এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করার আশ্বাস দিয়েছেন শহীদের মাতাকে।

সূত্র মতে, জুলাই আগষ্টের আন্দোলনের বিধ্বস্ত বাড্ডা থানা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার মতো হতে ২০ আগষ্ট পর্যন্ত সময় লাগে। এরপর কয়েকদিন থানায় যান কুলসুম। বারবারই মামলা না নিয়ে আসামীদের নাম পরিবর্তনের পরামর্শ দেওয়া হয় থানা থেকে। কিন্তু শহীদের মাতা আপোষ করবেন না জানিয়ে বলেন, হত্যাকারীদের বাঁচানোর থানা উদ্যোগ দু:খজনক। এরপর মামলার নির্দেশনার জন্য আাদলতে গিয়ে অর্ডার নিয়ে আসেন।

সূত্র মতে, এই নির্দেশনার পরে মামলার প্রক্রিয়া থানাটি শুরু করেনি। বরং বাদীর দেয়া ঠিকানা ভুল উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত( বাড্ডা আমলী)কে জানানো হয়েছে। গত ২০ সেপ্টম্বর বাড্ডা থানার অফিসার ইনচার্জ সাক্ষরিত এক আবেদনে দেখা যায়, কুলসুম বেগমের দায়ের করা সিআর মামলা নং ৪৪৩/২০২৪ এ বাদী তার আবেদনে নিজের বাসা নম্বর এবং যোগাযোগের জন্য কোন মোবাইল নম্বর উল্লেখ করেন নাই। তৎপ্রেক্ষিতে বাদীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলা রুজু করা দুরুহ ব্যাপার। তাই আদালতকে অবস্থা বিবেচনা করে পরবর্তী  নির্দেএশনা দেয়ার আবেদন জনানো হয়।

আদালতের কাছে করা এই আবেদনে বাসা নম্বর উল্লেখ করে নাই বলা হলেও আবেদনটির শুরুতেই বাদীর ঠিকানা দেয়া আছে। বাড্ডা থানার আবেদন মতে, এই ঠিকানাটি মিথ্যা।

মামলায় উল্লেখিত ঠিকানার বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী কুলসুম বেগম এ প্রতিবেদককে জানান, তিনি মামলায় যে ঠিকানা উল্লেখ করেছেন সেটি সঠিক। তিনি সেই ঠিকানাতেই থাকেন। তাকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে পুলিশ যেটি বলছে, সেটি সঠিক নয়। বরং তারা মামলা না নিতে সব কিছুই করছে। তিনি বলেন, বাড্ডা থানা আমাদের মামলা নিতে চাচ্ছে না। নানারকম ভয়ভীতিও দেখাচ্ছে।

অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল। বিগত স্বৈরাচার আমলে ভাটারা গুলশানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে প্রথমে বলেন, কুলসুম বেগম নামে কেউ তার থানায় মামলা করতে এসেছেন এবং সেটি নেয়া হয়নি, এ বিষয়টি তার জানা নেই। পরে আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, যে কোনো নির্দেশনা আসলে সেটি যাচাই বাছাই করা আদালতের দায়িত্ব। অনেক সময় ঠিকানা ভুল থাকে। আবার অনেক মানুষের নামে মামলা দেয়া হয়। তারা জীবিত না মৃত সেগুলোরও তদন্ত করতে হয়। তিনি বলেন, কুলসুম বেগমকে বলেন থানায় আসতে। অবশ্যই তার ছেলে মারা গেলে মামলা নেয়া হবে।

 

উল্লেখ্য, কুলসুম বেগম ছাড়াও আরো তিনটি পরিবার গত রোববার আদালতের নির্দেশনা নিয়ে বাড্ডা থানায় গিয়েছিল। তাদের মামলাও গ্রহণ করা হয়নি বলে তারা গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেছেন।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *