নিজস্ব প্রতিবেদক
১২ জুলাই ২০২৪
‘বাংলাদেশ সব দিক থেকেই ডুবে গেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
শুক্রবার (১২ জুলা্ই )পুরে এক আলোচনা সভায় অবিরাম বৃষ্টিতে রাজধানীর জলাবদ্ধতার প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘‘ দেশ আর্থিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে তো এমনি ডুবে গেছে। এখন আপনারা পানির ডুবা দেখতে পারছেন। প্রকৃত পক্ষে সবদিক থেকেই বাংলাদেশ ডুবে গেছে।‘ কারণ এই ফ্যাসিস্ট সরকারের রেজিমের কারণে।”
ঢাকা শহরে টানা বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগের প্রসঙ্গ সাবেক বানিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘‘ ঢাকা শহর তো ডুবে যাবে। মেধাবী লোকজন তো আসতে পারছে না সামনের দিকে। যারা কাজ-কর্ম করেন এই প্ল্যানিং থেকে শুরু করে এটা বাস্তবায়ন পর্যন্ত ….সেখানে তো কিছু মেধাবী লোককে উঠে আসতে হবে। সেটা তো হচ্ছে না। দলীয় লোকজন দিয়ে যদি চালানো হয় তাহলে ঢাকা শহর ডুববে এবং সারা বাংলাদেশও ডুববে।”
‘কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতি আহ্বান’
খসরু বলেন, ‘‘ কোটা বিষয়ে আমার বক্তব্য স্পষ্ট, এটি বাংলাদেশের মেধাবীদের ধবংস করতে চায়। যেভাবে তারা(আওয়ামী লীগ) সরকার চালাচ্ছে, যেভাবে শাসন ব্যবস্থা চালাচ্ছে…. এরকম চল তে থাকলে আগামী দিনে মেধাবী বাংলাদেশের কোনো সুযোগ নাই, বাংলাদেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না।”
‘‘ আজকের এই রেজিম ব্যবস্থায় বাংলাদেশকে একটা মেধাবী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায় এটা আমার মনে হচ্ছে না। মেধাবী রাষ্ট্র হয়ত এরকম একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে খুব একটা সুযোগ নাও হতে পারে।কারণ মেধাবীরা সত্য কথা বলে, মেধাবীরা সত্য পথে চলে, মেধাবীরা প্রতিবাদ করে, মেধাবীরা প্রতিরোধ করে। আমি কোটা আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের প্রতি একটু অনুরোধ করব, তারা যেভাবে কোটার জন্য লড়াই করছে তাদেরকে তাদের ভোটের জন্য এভাবে লড়াই করতে হবে, তাদেরকে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যে এভাবে লড়াই করতে হবে।”
জাতীয় প্রেসক্লা্বের আবদুস সালাম হলে গণতন্ত্র মঞ্চের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মঞ্চের উদ্যোগে ‘৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ও রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রুপান্তর’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।
‘বড় আন্দোলনের পথে যেতে হবে’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘‘ আমরা যে কর্মসূচি দিয়েছি ৩১ দফার… এই ৩১ দফা একটা চৎমকার কর্মসূচি। কিন্তু কি কি কনস্টিটিউশনার পরিবর্তন আনলে মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার পাবে সেই কথা কি মানুষ ভালো করে বুঝে? সাধারণ মানুষ বরংঞ্চ সিএমএম কোর্টে গেলে বুঝা যায়- কত বড় অনাচার চলছে। কারণ তার উচিত জামিন… সেই জামিন দেয় না। কারণ ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। তারা মনে করে এটার কি রকম করে পরিবর্তন করা যায়।”
‘‘ আমাদের এজন্য আরও কথা আসছে…. যেরকম করে যুক্তফ্রন্ট হয়েছে, যেরকম করে কংগ্রেস কর্মসূচি দিয়েছে, যেরকম করে কিজরিওয়াল দিয়েছে, সেই রকম করে এমন কর্মসূচি হতে হবে এমনও হতে পারে এই যে কোটার দাবি সেটাও আমাদের দাবিনামার মধ্যে আসতে পারে যাতে ছাত্রদেরও আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং বড় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পারি।আমাদের সবাইকে মিলে লড়াইটা করতে হবে। সেই লড়াইটা হচ্ছে এই সরকারের পতন।যেরকম করে ছাত্ররা গতকাল ব্যারিকেডে ভেঙেছে, সেরকম করে লড়াইয়ের চিন্তা করি…। ”
‘কোটার দ্রুত সমাধান চাই’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, ৫৩/৫৪ বছরে পরে একটা জাতি রাষ্ট্র তাদের নিয়োগ পদ্ধতি কি হবে, মেধার ভিত্তিতে যোগ্যতার ভিত্তিকে। এটা নিয়ে জাতির মধ্যে জাতীয় ঐক্যমত তৈরি হয়েছে। কোটা আন্দোলন ইতিমধ্যেই জনগনের মন স্পর্শ করেছে। ছাত্র-তরুণরা বাস্তবে সমগ্র জনগনের আকাংখাকে তারা এখন প্রতিনিধিত্ব করছে।”
‘‘ আমরা পরিস্কার করে বলতে চাই, এটা মামলা মোকাদ্দমার বিষয় না। এটা রাজনৈতিক বিষয়, এটা একটা প্রশাসনিক বিষয়। সুতরাং আজকে সরকারকে নীতিগতভাবে কোটা সংস্কারের দাবি গ্রহন করে খুব দ্রুত একটা কমিশন গঠন করে কিভাবে মেধার ভিত্তিতে আমাদের চাকুরি নিয়োগ হবে সেব্যাপারে একটা কার্যকর বিশ্বাসযোগ্য উদ্যোগ গ্রহন করবেন।”
ভারত ও চীনের সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘কোনো কিছুই নিয়ে আসতে পারেননি, খালি হাতে এসেছেন’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘‘ চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে তিনি(প্রধানমন্ত্রী) ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেছেন। সরকার ও সরকারি দলে কোনো হাসি নাই। ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কুটনীতিকরা খবর দিয়েছেন যে, ডাল ম্যা কুচ কালা হ্যায়।”
‘‘ প্রধানমন্ত্রী যে আশা নিয়ে বেজিংয়ে গিয়েছিলেন সেই আশা এবারও তার পুরণ হয়নি। ভারত থেকে যেমন কিছু আনতে পারেননি, তারা চীন থেকেও তাদের প্রত্যাশা মতন কোনো কিছুই বাস্তবে আনতে পারেননি। আমি মাঝে-মধ্যে বলি একটা কথা আছে যে, ব্যক্তি একই সাথে দুইটা খরঘোশের পেছনে দৌঁড়ায় সেই একটা খরঘোশও শেষে ধরতে পারে না। প্রধানমন্ত্রী দুই খরঘোশের পেছনে দৌঁড়াতে যেয়ে তার আম ও ছালা দুইটো এখন যাওয়ার জোগাড় হয়েছে।”
‘এরা রাষ্ট্র লুট করছে, একে রুখতে হবে’
সভাপতির বক্তব্যে গণতন্ত্র মঞ্চের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘‘এই দেশে কেবল মাত্র একটা শাসন নয়, এই রাষ্ট্রটাই জনগনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে যে তাকে দমন করে শাসন করে এই রাষ্ট্র লুট করবে, এই রাষ্ট্র তাদের দাপট দেখাবে… এটাই তাদের(সরকার) কাজ। এটাকেই তারা চিরস্থায়ী করতে চায়। তার বিরুদ্ধে আজকে বাংলাদেশের বিরোধীদলগুলো একটা ঐক্য গড়ে তুলেছেন যে, এভাবে রাষ্ট্রটা চলতে পারে না, এরকম শাসন চলতে পারে না।”
‘‘ এই ফ্যাসিস্ট সরকার কোনো কথাই শুনছে না। আমাদেরকে আন্দোলনের জায়গায় যেতে হবে। মানুষ আশা করে বিরোধী দলগুলো আবার বড় আকারের সংগ্রাম গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। সেই লড়াই গড়ে তুলবেন এই আশাবাদ আমি রাখছি।”
তিনি বলেন, ‘‘ আগামীর বাংলাদেশ এই শাসন উৎখাত করে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হবে এবং সেই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রুপরেখা ৩১ দফা। আমরা কেবল মাত্র আশা দিয়ে, একটা শ্লোগান দিয়ে এটা শেষ করিনি। কিভাবে বাংলাদেশ হবে সেটাও পরিস্কার করে বলা হয়েছে।”
‘‘ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে ফ্যাসিস্ট গণবিরোধী একটা জায়গায় পরিপূর্ণভাবে নিমজ্জিত হয়েছে সেটা খুব পরিস্কার। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে তাদের কোনো প্রস্তাব নেই। তাদের প্রস্তাব হচ্ছে, এই জমিদারি, এই ফ্যাসিস্ট বন্দোবস্ত… এটাই চলতে থাকবে, এটাই চিরস্থায়ী হবে। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন করে এই ডাক আমাদেরকে নিয়ে যেতে হবে, এই ডাক জাগ্রত করতে হবে। সমাজের নানান অংশ আজকে জেগে উঠছে। বিশেষ করে ছাত্র সমাজ যেভাবে জেগে উঠছে, শিক্ষকরাও পর্যন্ত আন্দোলন করছে। সরকারেরে নিজের পক্ষের লোকদেরও আর রাখতে পারছে না।এই ফ্যাসিস্ট শাসন সমাজের সমস্ত অংশে তাদের সমস্ত অধিকার ও তাদের মর্যাদা কেড়ে নিচ্ছে। এই লড়াইগুলো আরও জোরদার হবে।”
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিও জানান গণতন্ত্রের মঞ্চের সমন্বয়কারী।
এই আলোচনা সভায় গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব, গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সভাপতি মিয়া মসিউজ্জামান, অপর অংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান এবং এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বক্তব্য রাখেন।
জা/ই : এনজি