রাত ৩:০৩ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ নিয়ে মমতার প্রস্তাব দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞার সামিল : রিজভী

নিজস্ব প্রতিবেদক

০২ ডেসেম্বর ২০২৪

 

 

ভারতের পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায় বাংলাদেশের সম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এখানে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী পাঠানোর যে প্রস্তাব করেছেন তাকে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা ও অপমান করার সামিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রিজভী বলেন, ভারতের পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায় বাংলাদেশের সম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এখানে জাতিসংঘের শান্তি বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাব করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভার শীতকালিন অধিবেশনে। ভিনদেশের একজন রাজনীতিবিদের এই প্রস্তাব বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অবজ্ঞা ও অপমান করার সামিল। এটি একটি স্বাধীন দেশের ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের হুমকি। বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর এহেন বক্তব্যে বিষ্মিত ও হতবম্ব হয়েছে।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষ পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপধ্যায়কে একজন সেক্যুলার ও উদার দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ হিসেবেই জানতো। আজকের বক্তব্যে আবারও প্রমানিত হলো কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও মমতা ব্যানার্জির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ভারতের প্রায় অধিকাংশ রাজনীতিবিদই বাংলাদেশের মানুষের স্বাজ্যাত্যবোধ ও নাগরিক স্বাধীনতাকে মান্য করে না। সেই কাতারে মমতা ব্যানার্জিও তার অবস্থান পরিস্কার করলেন। এরা নিজ দেশের অন্যায় দেখেও না দেখার ভান করে। গুজরাটের হাজার হাজার মুসলিম হত্যার সেই ট্রাজেডি আজও বিশ্ববাসী বিস্মৃত হয়নি। কাটা তারের বেড়ার ওপর ফেলানীর জুলন্ত লাশ এরা কি ভুলে গেছেন? ভারতের কেন্দ্রীয় সম্প্রদায়িক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে একই কোরাসে অংশগ্রহণ করে মমতা ব্যানার্জি বাংলাদেশের স্বাধীন মর্যাদাকে অগ্রাহ্য করেছেন।

পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে কঠোর সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, মমতার বক্তব্যে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার লুটেরা খুনি, গুম ও নির্যাতনকারীদের পতন হওয়াতে তারা বিষন্ন বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন। হত্যা, গুম, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়ন, গণতন্ত্র ধ্বংস করে দূর্নীতির মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে ধ্বংসের শেষপ্রান্তে নিয়েগিয়েছিলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দূরাচারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার। এখন শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসনের জন্য ভারতের প্রচেষ্টার অন্ত নেই। এদেশের মানুষ বিশ্বাস করে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার একটি বিরাট অংশ বাংলাদেশ থেকে নিয়ে বিদ্বেশ পোষনকারী ভারতের রাজনীতিবিদদের পেছনে খরচ করা হচ্ছে। তা নাহলে এখন এভাবে একযোগে বাংলাদেশ বিরোধী জিগির তুলছে কেন ভারতের নীতি নির্ধারকরা।

ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আমরা এর আগেও দেখেছি সেদেশের রাজনীতিবিদরা মুখে যাই বলুক, তারা যে বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেন তার প্রমান হচ্ছে শুধুমাত্র মমতা ব্যানার্জির কারণেই তিস্তা নদীর পানির চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি। সুতরাং তিনি কি উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ বাহিনীকে বাংলাদেশে প্রেরণ করার প্রস্তাব করছেন এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে খোলাসা করা উচিৎ। একটি অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লুটেরা রেজিমকে মদদ দিয়ে বিনিময়ে ভারত একতরফাভাবে অনৈতিক স্বার্থ ও ফায়দা হাসিল করছিলো। ছাত্রজনতা কর্তৃক জনস্বার্থ বিরোধী ভারতের সেই তাবেদার রেজিম উৎখাতের ফলে ভারতের অনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ছেদ পড়ায় সেখানকার রাজনীতিবিদ ও নীতি নির্ধারকরা এখন বেসামাল হয়ে পড়েছেন। বাংলাদেশ ১৮ কোটি মানুষের দেশ। এই দেশ কিভাবে চলবে সেটি এদেশের জনগণ নির্ধারন করবে। কোন দেশের গভীর চক্রান্তের নীল নকশা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না।

প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালো নং মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ৮১ শতাংশ সনাতন বা হিন্দু ধর্মালবম্বীদের দেশ নেপালের সাথে ভারতের সম্পর্ক উষ্ণ যেমন নয়। তেমনি নেপালের জনগোষ্ঠীও ভারতের প্রতি বন্ধু ভাবাপন্নতো নয় বরং বৈরি ভাবাপন্ন। তাই বুঝতে হবে বাংলাদেশ সনাতন ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের প্রতি ভারতের অতি ভালবাসা প্রকাশ ও এটিকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের প্রতি হম্বি-তম্বির পেছনে ভারতের কোন ধর্মীয় ভাবাবেগ, ভালবাসা বা বন্ধন জড়িত নেই, আছে এটিকে পুঁজি করে ভারতের আধিপত্যবাদী আগ্রাসী মনোভাব ও ষড়যন্ত্র। আমি ভারতের পশ্চিম বাংলার মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তাদের বিধান সভায় দেয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান দেশবাসী ভাই-বোনদের পার্শবর্তী দেশের গভীর চক্রান্ত সম্পর্কে সচেতন থাকার আহ্বান জানাই।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *