রাত ৩:১৩ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের ভূত, আবার ‘মাইনাস টু’ দেখতে চাই না : মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৫ অক্টোবর ২০২৪

 

 

প্রশাসনের মধ্যে স্বৈরাচারের ভূত বসে আছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এদেরকে তাড়াতে না পারলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনো প্রচেষ্টা সফল হবে না। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই যে ভূতগুলোকে নিয়ে যারা এতোদিন জনগনের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালিয়েছে, যারা দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে, সেই ভূতেরা কিন্তু এখনো প্রশাসনের মধ্যে আছে। এই ভূতগুলোকে দূর করতে হবে। নইলে কোনো কিছুই করতে আপনারা সক্ষম হবেন না।

আজ শনিবার দুপুরে এক শিক্ষক সমাবেশে দেশের প্রশাসনের অবস্থা তুলে ধরে তিনি এসব কথা বলেন।

রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের উদ্যোগে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই শিক্ষক এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে কয়েক হাজার শিক্ষক এই সমাবেশে যোগ দেন।

যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এখন বর্তমান যে সরকার এসেছে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে, এই সরকার তো আন্দোলন যারা করছে, আমরা সবাই মিলে এই সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি দেশকে সঠিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমরা তাদেরকে অবশ্যই সময় দিচ্ছি, সময় দেবো। কিন্তু বার বার প্রশ্ন আসে, কতদিন সময় দেবেন? আমরা সেই পর্যন্ত সময় দেবো যে পর্যন্ত একটা যৌক্তিক সময়ে অন্তর্বর্তী সরকার একটা নির্বাচনের ব্যবস্থা তৈরি করতে পারেন। আমরা রাজনীতি করি, আন্দোলন করেছি, জান দিয়েছি-প্রাণ দিয়েছি একটা লক্ষ্যে যে, আমরা জনগনের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই, আমরা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

তিনি বলেন, আমরা কোনো বিরাজনীতিকরণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না। আবারই মাইনাস টু দেখতে চাই না। আমরা আবার এই মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদ দেখতে চাই না। আমরা আবার সন্ত্রাসকে দেখতে চাই না। আমরা সত্যিকার অর্থে দেশে একটা সুস্থ উদারপন্থি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেখতে চাই। তার জন্যে আমরা তাদের হাতেই (অন্তবর্তীকালীন সরকার) দায়িত্ব দিয়েছি। আমরা মনে করেছি, এরা যোগ্য মানুষ, তারা কাজ করছেন। তাদেরকে অতি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
মির্জা ফখরুল আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা কখনোই ব্যর্থ হইনি, আমরা ৫২, ৬৯, ৭১, ৯০ এ জয়ী হয়েছি। ৯০ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নেতৃত্ব দিয়েছেন। এবার আমাদের সেই আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। আমরা ইনশাল্লাহ এবারও জয়ী হবো।

শিক্ষক জাতীয়করণ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয়করণ হলেই আপনাদের সব সমস্যার সমাধান আসবে না। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, যোগ্য মানুষকে নিয়ে আসতে হবে। আমাকে একটা কাগজ তুলে দিয়েছেন আপনাদের নেতা সেলিম ভুঁইয়া সাহেব, ম্যাডামের একটা ঘোষণা ছিলো চাকুরি জাতীয়করণ করার জন্য। ম্যাডামের ঘোষণা তো সকলের জন্য শিরোধায্র্ আমাদের জন্য। সেজন্য সরকারে আসতে হবে তো। সরকারে কখন আসতে পারবেন? জনগন যদি ভোট দিয়ে সরকারে পাঠায়। ভোট দেবে কখন ? যখন আপনি জনগনের কাছে প্রমাণিত হবেন যে, আপনি যোগ্য, আপনি আগামী ৫ বছর তাদেরকে সুষ্ঠুভাবে সেবা করতে পারবেন, কাজ করতে পারবেন। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে কি সেটা করতে পারছি?

তিনি বলেন, পত্র-পত্রিকায় বাইরে বিভিন্ন সমালোচনা হচ্ছে। এই সমালোচনা যাতে না হয় সেজন্য আমাদেরকে কাজ করতে হবে। আমরা বলতে চাই, যারা দুর্নীতি করে, যারা চাঁদাবাজি করে, জমি দখল করে তারা বিএনপির লোক নয়, তারা দুর্বৃত্ত। দল থেকে কিছু লোকের বিরুদ্ধে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা এটা নেবো।

শিক্ষকদেরকে দলকানা হলে চলবে না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আরেকটা কথা বলি, এটা আমার নিজের কথা। শিক্ষকদেরকে দলকানা হলে চলবে না। শিক্ষকদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে একটু দূরে থাকতে হবে। তা না হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকবে না। কথাটা আপনাদের ভালো লাগবে না, আমি জানি। আওয়ামী লীগ যে অবস্থা তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই পিয়ন থেকে গভার্নিং বডির প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগের লোক। এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে বের করে নিয়ে আসতে হবে। বের করে নিয়ে এসে ভালো সুস্থ পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যারা জনগনের সাথে সম্পর্ক আছে, যারা শিক্ষিত, যারা কাজ করতে পারবেন তাদেরকে নিয়ে আসতে হবে। এটা যদি আপনারা মন থেকে করতে পারেন তাহলে পরিবর্তন হবে, নইলে পরিবর্তন হবে না।

প্রয়োজনে আবার রাজপথে নামতে হবে ঘোষণা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি এই পরিবর্তনে দেশে নতুন সম্ভাবনার আশার দেখছি। আমি খুব আশাবাদী মানুষ। অনেকেই বলে যে কি হলো? বলি হাসিনা পালায়ে গেছে এই পর্যন্ত তো হলো। পার্লামেন্ট ভেঙে গেলো এটা হলো, ম্যাডাম মুক্তি পেলেন এটা হলো। সুতারাং এখন পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য কাজ করতে হবে। দরকার হলে আবার রাজপথে নামতে হবে, দরকার হলে আবার বুকে রক্ত দিতে হবে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে এদেশের সত্যিকার অর্থে জনগনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবো, ম্যাডামের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব, তারেক রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করব।

শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সভাপতিত্বে সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নূরসহ শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের চৌধুরী মূগিস উদ্দিন মাহমুদ, জাকির হোসেনসহ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

 

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *