নিজস্ব প্রতিবেদক
২৭ আগস্ট ২০২৪
ছাত্র-জনতা বিপ্লবকে বিরুদ্ধে পতিত স্বৈরাচারের প্রতিবিপ্লব রুখতে প্রধান উপদেষ্টাকে ‘কঠোর’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদে।
মঙ্গলবার দুপুরে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা চাই বিপ্লব যেন পথ হারিয়ে না ফেলে। উপদেষ্টা পরিষদে যারা আছেন… আপনারা বিপ্লবকে ধারণ করুন। বিপ্রলবের মর্মকথা উপলব্ধি করে প্রতিবিপ্লবকে নস্যাৎ করার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন…. এখনো রাষ্ট্র সমাজ দেহে শেখ হাসিনার বশংবদরাই বসে আ্ছে…. প্রত্যেকটা বাহিনীতে বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীতে এবং প্রশাসনে যারা ১৬ বছর ওই অবৈধ সরকার(শেখ হাসিনার সরকার) কে টিকিয়ে রেখেছে তারাই রয়েছে।”
‘‘ এই বিপ্লব সফল পরিণতির দিকে যাক আমরা এটাই চাই। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইউনুস আপনি আমাদের গৌরব… আপনি শক্ত হন, নিজেকে দূর্বল ভাববেন না। বাংলাদেশের জনতা আপনাদের সাথে আছে। সুতরাং কোনো দুর্বৃত্ত যাতে বাংলাদেশ অধিকার করতে না পারে সেজন্য আপনারা ভূমিকা রাখবেন। বিপ্লবী চরিত্র গ্রহন করে বিপ্লবীর মতো বাংলাদেশের সেবা করবেন এটাই আমরা আশা করি।”
হাফিজ বলেন, ‘‘ ছাত্র-জনতার বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব রুখতে সকলকে সর্তক থাকতে হবে। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে কেউ যদি প্রতিবিপ্লব শুরু করতে চায়, ভারতে আশ্রয় গ্রহনকারী আওয়ামী লীগ নেত্রী(শেখ হাসিনা) ও পতিত সরকারের সদস্যরা এই বিপ্লবের বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করতে গেলে বর্তমান সরকারের উচিত হবে প্রথমে বিডিআর(বিজিবি) কে ডাকা…. বিডিআর না পারলে সেনাবাহিনীকে ডাকেন।”
‘‘ আমরা প্রত্যেকটি বাহিনীর আসল চরিত্র দেখতে চাই… বর্তমান চরিত্র দেখতে চাই। তারা কি জনগনের পক্ষে না জনগনের বিপেক্ষ তা আমরা দেখতে চাই। কোন সাহসে আনসার বাহিনী সচিবালয়ের দেয়াল টপকিয়ে উপদেষ্টাদেরকে এবং সরকারি কর্মকর্তাদেরকে ঘেরাও করার মতো সাহস দেখায়। তবে কি বিপ্লব অসম্পূর্ণ? অসম্পূর্ণ হলে আবারো যারা এই বিপ্লবকে নস্যাৎ করতে চায়…. আমরা সবাই মিলে ছাত্র-জনতা মিলে ছাত্র-যুবকসহ সকলে মিলে এই প্রতিবিপ্লবের চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেবো।”
‘দ্রুত সংলাপ করুন’
হাফিজ বলেন, ‘‘ প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টা পরিষদের কাছে আমাদের অনুরোধ হলো এদেশের জনগনের স্টেকহোল্ডার হলো পলিটিক্যাল পার্টিগুলো। যদি গণতন্ত্র চান পলিটিক্যাল পার্টিগুলোর সাথে কথা বলুন।”
‘‘ সংসদে অতীতে প্রতিনিধিত্ব আছে এই ধরনের রাজনৈতিক দল অতীতে প্রতিনিধিত্ব পেয়েছে তাদের সাথে দ্রুত আলাপ করুন।কিভাবে গণতন্ত্র উত্তরণ করা যায় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ করে তাদের কাছ থেকে সুপারিশ গ্রহন করুন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের উদ্যোগে সংগঠনটির প্রয়াত আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মাহতাবের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়। আলোচনা সভার পরে প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
গত ১২ আগস্ট ঢাকায় মারা যান রফিকুল ইসলাম মাহতাব।
‘২৪ ঘন্টার মধ্যে ইসি‘র বিলুপ্ত চাই’
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ গণতন্ত্র উত্তরণ করতে হলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এই নির্বাচন কমিশনকে বিলুপ্ত করেন। এরা তো জনগনের নির্বাচন কমিশন কমিশন না। এই নির্বাচন কমিশন দিনের ভোট রাতে করেছে, একদিন আগে করেছে।”
‘‘নির্বাচন দিন প্রধান নির্বাচন কমিশন ঘুমায়… তিনি বলেছেন যে, দুপুর বেলা দেখলাম যে, চব্বিশ শতাংশ ভোট পড়েছে একটা নির্বাচনে… যখন একটা ঘুম দিলাম, ঘুম থেকে উঠে দেখি ৫৫ শতাংশ হয়ে গেছে। যেদেশে নির্বাচনের দিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘুমায় তাহলে এদেশে কিভাবে গণতন্ত্র আসবে? যদি গণতন্ত্র উত্তরণ করতে চান তাহলে এই বশংবদ কমিশন বিলুপ্ত করুন।”
তিনি বলেন, ‘‘ আমরা গণতন্ত্র চাই। আমরা প্রতিবেশি দেশের শাসন চাই না, আমরা অন্য কোনো শক্তিরও শাসন চাই না। আমরা জনগনের শাসন চাই।”
‘‘ জনগন এদেশের মালিক। যারা সরকারি অর্থে বেতন পান তারা প্রত্যেকে মনে রাখবেন সাধারণ জনগণের অধিকার যেন কেউ ক্ষুন্ন করতে না পারে। প্রধান উপদেষ্টাকে বলব, আমরা আপনাকে সহযোগিতা করব, আপনি দেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যান।”
‘রোডম্যাপ চাই’
হাফিজ বলেন, ‘‘ এদেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে গণতন্ত্রের কোনো বিকল্প নাই। অতি অল্প সময়ের মধ্যে আপনারা(প্রধান উপদেষ্টা) রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। একটি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দিয়ে জনগণের প্রতিনিধিদের দায়িত্বভার গ্রহন করার সুযোগ করে দেন।রোডম্যাপ ঘোষণা করতে অন্তর্বতীকালীন সরকারের কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়।”
‘‘ প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষনে বলেছেন, ছাত্ররা তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তাকে দেশবাসী নিয়োগ দিয়েছেন। এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমি যে এলাকার এমপি হয়েছি ৬বার ভোলার লালমোহন-তজিমুদ্দিন এখানে ১১ জন ব্যক্তি পুলিশের গুলিতে ঢাকা শহরে নিহত হয়েছে। এরার মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিক, রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী। ছাত্রদেরকে অবশ্যই এই সফল আন্দোলনে প্রাণ বিসর্জন ও ত্যাগের জন্য সাধুবাদ জানাই। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। তবে দেশবাসী এই আন্দোলনে শরিক হয়েছে। ছাত্রদের পিতা-মাতারাও আন্দোলনে ছিলেন, তাদের বোনেরা ছিলেন। অতীতে এরকম আন্দোলন হয়নি। যারা বইতে পড়েছেন বিপ্লব। ভাগ্যবান এদেশের মানুষ এরকম একটা বিপ্লব রাজপথে ৫ আগস্ট দেখেছেন।”
‘সিটিজেন আর্মি গড়তে হবে’
হাফিজ বলেন, ‘‘ যদি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগন বিএনপিকে দায়িত্ব দেয় আমরা পুরো জাতিকে মিলিটারি ট্রেনিং দিয়ে সৈনিকে পরিণত করব। কোনো প্রতিবেশী দেশ যাতে আমাদের দিকে রক্তচক্ষু না দেখাতে পারে, আমরা যাতে আগ্রাসনের শিকার না হই সেজন্য আমরা সিটিজেন আর্মি গড়ে তুলব।”
‘‘ ছাত্ররা বছরে দুই মাস ব্যাসিক সামরিক ট্রেনিং নিয়ে তারপর আবার ছুটি শেষ হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা শুরু করবে।”
মৎস্যজীবী দলের যুগ্ম আহ্বায়ক সেলিম মিঞার সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেনসহ মৎস্যজীবী দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এসএম/ এনজি