সকাল ৭:২১ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নেতাকর্মীদের কথা-বার্তায় আমি লক্ষ করেছি অস্থিরতা—- মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
৩০ অক্টোবর ২০২৪

 

 

দলীয় নেতা-কর্মীদের অস্থির না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমাদের নেতারা বিভিন্নস্থানে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের কথা-বার্তায় আমি লক্ষ করেছি অস্থিরতা। এত অস্থির হয়ে তো লাভ নেই। এসময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্দেশে তিনি বলেন, দেশের মানুষ আপনাকে খুবই ভালোবাসে। আপনাকে সম্মান দিয়েছে, দেবে এবং দিতে চায়। একটাই অনুরোধ থাকবে, আপনার এই জায়গা যাতে নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন। আমরা বিশ্বাস করি, একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে জনগণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনপিপির ১৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এদের চরিত্রের দুটি দিক- একটি জঙ্গি, আরেকটি সন্ত্রাস। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে খালি হাতে লড়াই করে সাধারণত জয়ী হওয়া যায় না। তবে এবার এদেশের ছাত্র-জনতা সেটি প্রমাণ করেছে- একটি ফ্যাসিজমকে সরিয়ে দিয়ে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনে যেন জনগণ ভোট দিতে পারে। নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে পারে। এটা আমাদের প্রত্যাশা। এটাই জনগণ চায়। আমরা জানি- এটা খুব অল্প সময়, এখনো তিন মাস যায়নি। ১৫-১৬ বছরের জঞ্জাল, এই সময়ের মধ্যে দেশে গণতন্ত্রকে তিলে তিলে হত্যা করা হয়েছে। অর্থনীতিকে মুচড়ে দেওয়া হয়েছে। ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে এই আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনীতিকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে, এখন পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যে চরিত্র তৈরি করেছে, এর বাহিরে গিয়ে কেউ কাজ করে না। খুঁজে পাওয়া যায় না ঘুষ খায় না, স্বজনপ্রীতি করে না এমন লোক। শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী ও প্রশাসনসহ সব জায়গায় দুর্নীতি।

নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি সার্চ কমিটি ঘোষণা করেছেন। যদিও প্রত্যাশা ছিলো, সার্চ কমিশন গঠন করার আগে রাজনৈতিক দলেরগুলোর সাথে পরামর্শ করবে। তবে যাই হোক, এটি নিয়ে বড় ধরনের কোনো সমস্যা মনে করছি না।
সরকারের প্রতি বিশ্বাস রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, অন্তর্বর্তী সরকারের ভিন্ন কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। যিনি এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তিনি পৃথিবীজুড়ে সমাদৃত। তিনি (ড. ইউনূস) নিজেও বলেছেন, তার রাজনৈতিক ইচ্ছে নেই। আপনারা দায়িত্ব দিয়েছেন সেটি পালন করছি। সেই সাথে ইউনূসের প্রতি অনুরোধ, এ দেশের মানুষ আপনাকে সম্মান দিয়েছেন, দিতে চান। আপনারা এই জায়গা যেন নষ্ট না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।

রাজনৈতিক সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, রাজনৈতিক সংগ্রাম চলতে থাকে। সংস্কার কার্যক্রম তেমনি চলমান থাকে। আমরা প্রত্যাশা করবো, সরকার দ্রুত সংস্কার কমিশন থেকে রিপোর্ট নিয়ে জনগণের সামনে তুলে ধরবেন এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সব সংস্কার কিন্তু জনগণের দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে এবং জনগণকে সেটা মেনে নিতে হবে। জনগণের মতামত ছাড়া কোনো সংস্কার দীর্ঘায়িত হবে না। উপর থেকে চাপিয়ে দিয়ে কোনো কিছু সফল হয় না।

সদ্য পদত্যাগী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন মাসে যদি হাবিবুল আউয়াল সাহেবরা নির্বাচন করে ফেলতে পারেন, তাহলে কেন পারা যাবে না। চাইলেই পারা যাবে, সে চেষ্টা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা জটিল সময় পার করছি। যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়নি। চক্রান্ত শেষ হয়নি। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। ফ্যাসিস্টরা এখনো সক্রিয়। শুধু ব্যক্তির পরিবর্তন করে পুরো কাঠামোর পরিবর্তন করা যায় না। সেটার জন্য সময়ের প্রয়োজন হয়। সরকার সময়ের সদ্ব্যবহার করবে বলে আশা প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বিষয়ের দিকে না গিয়ে নজরটা ওই দিকে দেবেন, ইলেকশন (নির্বাচন) এটার কোনো বিকল্প নেই। আমাকে রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে হলে, জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে, সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে এখানে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য, সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন করতে হবে। সেই কারণেই কিন্তু এতগুলো প্রাণ গেছে, এত মানুষ দীর্ঘকাল ধরে লড়াই করেছে, সংগ্রাম করেছে, কারাগারে গেছে।

এ প্রসঙ্গে বিগত আওয়ামী লীগের বিগত ১৫ বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার মামলায় সারা দেশের ৬০ লাখ মানুষকে আসামি করার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এখানে এমন লোক খুব আছে, যারা কারাগারে যায়নি, এমন লোক কম আছে, যারা মামলা খায়নি। ফাঁসি থেকে শুরু করে হত্যা, গুম, খুন, সবকিছু এই দেশে আওয়ামী লীগ করেছে। সেখানে রাতারাতি আমরা সব পরিবর্তন করে ফেলতে পারব না। একটা সময় দিতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে।

পাকিস্তান আমল থেকে এ দেশে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে একটা সংস্কৃতি। এটা জোর চাপিয়ে দেওয়া যায় না, এটা চর্চা করতে হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, যেই দল সবচেয়ে বেশি গণতন্ত্রের কথা বলত আওয়ামী লীগ, তারাই ১৯৭২ সালে গণতন্ত্রকে গলাটিপে ধরেছে। তারপর যখনই সুযোগ পেয়েছে, তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। সেই দেশে এত সহজে এত অল্প সময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়ে যাবে বলে মনে করেন না মির্জা ফখরুল। তিনি নেতা-কর্মীদের অস্থির না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন। আমি লক্ষ করেছি, অস্থিরতা। এত অস্থির হয়ে তো লাভ নেই।
এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় এতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপার সভাপতি (একাংশ) খন্দকার লুৎফর রহমান, গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, এনডিপির চেয়ারম্যান কারী আবু তাহের, গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান এস এম শাহাদাত, ডেমোক্রেটিক লীগের (ডিএল) সাধারণ সম্পাদক খোকন চন্দ্র দাস, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান এমএন শাওন সাদেকী, মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল বারিক, এনপিপির সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য জহির হোসেন হাকিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শরীফ মনির হোসেন, বেলাল হোসেন, নবী চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব ফরিদ উদ্দিন, আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার ফারিয়া জামান, ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, নড়াইল জেলা এনপিপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার খান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *