সকাল ৬:০৪ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ধরে নিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না : হাইকোর্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

২৯ জুলাই ২০২৪

‘ডিবি অফিসে যাকে তাকে ধরে নিয়ে যাবেন, তারপর খাবার টেবিলে বসাবেন। এভাবে জাতির সঙ্গে মশকরা করবেন না’ এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।

বিক্ষোভের সময় ছাত্রদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের বিষয়ে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ সোমবার (২৯ জুলাই) এমন মন্তব্য করেন।

 

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না ও ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং ব্যারিস্টার অনীক আর হক। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ ও ব্যারিস্টার ,মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। তাদের সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। এ ছাড়াও আওয়ামীলীগ নেতা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আজাহার উল্লাহ ভুঁইয়া শুনানি নিয়ে আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার পরবর্তী দিন রেখেছেন।

শুনানির এক পর্যায়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মেহেদী হাছান চৌধুরী বলেন, ‘টিভিতে দেখেছি, এই ছয়জন (সমন্বয়ক) কাটাচামচ দিয়ে খাচ্ছে।’

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘এগুলো করতে আপনাকে কে বলেছে? কেন করলেন এগুলো? জাতিকে নিয়ে মশকরা কইরেন না। যাকে নেন ধরে, একটি খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন।’

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কথিত আটক’ ছয় সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতেও নির্দেশনা চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী। তারা হলেন আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা।

রোববার (২৮ জুলাই) ছয় সমন্বয়কের সঙ্গে এক টেবিলে বসে নাশতা করার কয়েকটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

 

আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা ছয় সমন্বয়কের ছবির ক্যাপশনে হারুন লেখেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ওদের ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সঙ্গে কথা বললাম।’

এর আগে সোমবার (২৯ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট আবেদন করা হয়েছে।

বিক্ষোভের সময় ছাত্রদের ওপর গুলি না করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারী ছয়জনকে ডিবি কার্যালয় থেকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। কোটা নিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আত্মীয়-স্বজনকে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে। এ বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মানজুর আল মতিন বলেন, রিটে আন্দোলনকারীদের ওপর যাতে লাইভ গুলি না চালানো হয় সেই নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে উল্লেখ করে সারাদেশে সোমবার ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রোববার (২৮ জুলাই) রাত পৌনে ১২টার দিকে আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের পক্ষ থেকে এ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের এটি দেন আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ।

এতে বলা হয়, ‘সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব।’

এর আগে ডিবি কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার। এটি সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।’

জিকেএস / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *