রাত ৯:৫২ | সোমবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন : মনে হচ্ছে পাকিস্তানে হামলার জন্য যুক্তি তৈরি করছে ভারত

এনজি ডেস্ক
২৭ এপ্রিল ২০২৫

কাশ্মীরের পহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ ‘সন্ত্রাসী’ হামলার পর, ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এরই মধ্যে বিশ্বের একাধিক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ও নয়াদিল্লির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শতাধিক কূটনীতিকের জন্য বিশেষ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

চারজন ভারতীয় কূটনৈতিক কর্মকর্তার বরাতে দ্য নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানিয়েছে, মোদীর এই প্রচেষ্টা মূলত উত্তেজনা কমানোর জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে। মোদী সরাসরি পাকিস্তানের নাম না করেই বৃহস্পতিবার (২৬ এপ্রিল) এক ভাষণে ‘সন্ত্রাসের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে এরই মধ্যে একাধিকবার গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি, কাশ্মীরে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে ও সন্ত্রাসীদের খোঁজে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালাচ্ছে।

ভারত গত সপ্তাহে পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি প্রবাহ বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক মিশনের কিছু সদস্য ও ভারত সফররত পাকিস্তানি নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তানও ভারতের কূটনৈতিক মিশনের কিছু সদস্য ও পাকিস্তানে অবস্থানরত ভারতীয়দের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থেকেও নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তান।

এদিকে, অভিযোগ উঠেছে, কাশ্মীরি মুসলিম শিক্ষার্থীরা ভারতের বিভিন্ন শহরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর ফলে অনেকেই বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

তবে হামলার পাঁচ দিন পরও ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো গোষ্ঠীকে দায়ী করেনি বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। তবে কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে সমর্থনের ইতিহাস তুলে ধরেছেন ও প্রযুক্তিগত গোয়েন্দা তথ্যের (যেমন ফেসিয়াল রিকগনিশন ডেটা) মাধ্যমে পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে ইরান ও সৌদি আরব মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে। তাছাড়া জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) উভয় দেশকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান এই উত্তেজনা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আমি ভারতের খুব কাছের এবং আমি পাকিস্তানেরও খুব কাছের। দেশ দুটির মধ্যে সবসময়ই উত্তেজনা ছিল ও তারা কোনো না কোনোভাবে নিজেদের মধ্যে এর সমাধান করবে। সুতরাং এখানে তিনি কোনো পক্ষের উপরেই চাপ দিতে চান না।

বিশ্লেষক ড্যানিয়েল মার্কির মতে, ২০১৯ সালে পুলওয়ামা হামলার পরের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির মিল আছে। সে সময় ভারত সীমান্ত পেরিয়ে বালাকোটে বিমান হামলা চালিয়েছিল, যার পর পাকিস্তান পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে একটি ভারতীয় জেট ভূপাতিত করে।

এইবার ভারত ‘কিছু চমকপ্রদ’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, উভয় দেশের উচ্চ আত্মবিশ্বাস ও পারমাণবিক অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও উত্তেজনা এখনো ‘পরিচালিত বৈরিতার’ পর্যায়েই আছে।

প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেনন বলেন, আমি খুব বেশি চিন্তিত নই, কারণ উভয় পক্ষই নিজেদের স্বার্থে সীমিত উত্তেজনা বজায় রাখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তবে পরিস্থিতি যেভাবে দ্রুত বদলাচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কড়া নজরে রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, ভারত আসলেই সামরিক পদক্ষেপ নেয় কি না এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এর কী প্রভাব পড়ে।

বিশ্লেষকদের মতে, ভারতে এখন দুটি সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। হয় তারা আরও তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, অথবা বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়ে তারা বড় কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্য পক্ষের থেকে বৈধতা চাওয়ার প্রয়োজনবোধ করছে না।

 

সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *