‘দেশে মবজাস্টিস রুখতে অন্তবর্তীকালীন সরকার কেনো চুপচাপ’ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সেলিমা রহমান।
শনিবার সকালে নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের র্যালীপূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য্ এই প্রশ্ন তুলেন।
তিনি বলেন, ‘‘ ৫ আগস্টের বিপ্লবে আমাদের যে তরুণ সমাজ তাদের বুকের রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা এই যে স্বাধীনতা এসেছে যেখানে ফ্যাসিস্ট সরকার পদত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে সেইখানে কেনো এখনও নারী ধর্ষন হচ্ছে?বাসে বাসে হচ্ছে, পথে-ঘাটে নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে। মাগুরার কাহিনী দেখেন, একের পর এক ঘটনা ঘটে চলেছে।”
‘‘এখানে মনে হয় কোনো একটা গোষ্ঠি যেটা বলছে, মবজাস্টিস… ওয়াট ইজ মবজাস্টি? কিসের মবজাস্টিস। আপনার মিডিয়াতে জানিয়ে মাইকিং কোন মবজাস্টি… কারা এটা করছে। সরকার কেনো চুপচাপ? সরকার কেনো কথা বলছে না?”
সেলিমা বলেন, ‘‘ যে সরকার আমরা জানি ড. মুহাম্মদ ইউনুস একজন বিশ্ববিখ্যাত নন্দিত নেতা। আমরা তার কাছে আশা করেছিলাম এই সময়ে কঠোর হস্তে যারা বিভিন্ন অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে, দেশকে আজকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে তাদের ওপর কঠিন কঠিন হবেন এবং তাদের শাস্তি দেবেন।”
‘‘ সরকারকে বলতে চাই, সমাজে যে অস্থিরতা-অস্থিতিশীলতা, সমাজে যে মবজাস্টিস, সমাজে যে নারী ধর্ষন.. এটা যদি বন্ধ করতে না পারেন তাহলে বাংলাদেশের যে জনগন যে স্বপ্ন নিয়ে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছিলো সেই স্বপ্ন আমাদের পুরণ হবে না।”
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে র্যালীপূর্ব এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। বেগুনি রঙে শাড়ি পরিহিতা মহিলা দলের শতাধিকর নারী সদস্য এতে অংশ নেন।
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিন মহিলা দলের র্যালী সমাবেশে পুলিশের ঘেরাও পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ নারীরা আজকে মুক্ত… অন্তুত পুলিশ দিয়ে আমরা এখন ঘেরা নই। যেখানে আমার বোনেরা মিছিল করতে পারতো না, কোনো কিছুই করতে পারতো। সেই অবস্থায় থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি।”
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘ তোমরা এখন দল করেছো আমরা স্বাগত জানাই। আজকাল ছাত্র-জনতা বলে, বৈষম্য বিরোধী বলে যে কেউ দুই জন তিন জন করে বিভিন্ন জেলায় তারা বিভিন্ন অফিস-আদালতে গিয়ে বসে থাকছে, তারা ভাগ চাইছে।”
‘‘ এখন তোমাদের উচিত তোমরা তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে শিক্ষাঙ্গনে ফিরিয়ে নিয়ে আসো।”
নারী উন্নয়নে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রেী বেগম খালেদা জিয়ার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন সেলিমা রহমান।
‘ওম্যান ভয়েস এক যোগে উচ্চারিত হতে হবে’
সেলিমা রহমান বলেন, ‘‘ আজকে নারীদের ভয়েস, ওম্যান ভয়েস একযোগে উচ্চারিত হতে হবে। নারীদের বলব, পরিবারের সদস্যদের বলব, বিশেষ করে গণমাধ্যমের ভাইয়েরা এখানে আছেন তাদেরসহ সকলকে আজকে সজাগ হতে হবে। পরিবারের যে মূল্যবোধ ছিলো বড়কে সন্মান করা, শিক্ষককে শ্রদ্ধা করা, মা-বাবাকে সন্মান করা এগুলো এখন কোনটাই বিরাজ নেই। সন্মান-শ্রদ্ধার সংস্কৃতি ফিরিয়ে আনতে হবে।”
‘‘ আমি বলতে চাই বোনদের আপনাদের সহচেতন হতে হবে। আপনারা অধিকার কোনটা, আপনার কোনটা সমতা সেটা আপনাকে বুঝতে হবে এবং আপনাদেরকে নিজ পরিবারে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমাদের পরিবর্তন আসবে সমাজে।”
‘মব কালচার: ভয়ংকর পরিস্থিতি’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার… এখন কেনো সমাজের মধ্যে অস্থিরতা থাকবে। এখন একটি কথা বেরিয়েছে আপনারা জানেন, মব কালচার। এই মব কালচার তৈরি হলো কেনো? আজকের অন্তবর্তীকালীন সরকার তো সকল গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের সমর্থিত সরকার।”
‘‘ এই মব কালচারে সমাজে কত যে নিপীড়ন-নির্যাতন হচ্ছে তার কোনো ইয়াত্তা নাই। কত নারী ও কণ্যা শিশু নিপীড়িত হচ্ছে এর পরিসংখ্যান যা আসে তা অল্প। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, জানুয়ারি মাসেই কণ্যা নির্যাতিত হয়েছেন প্রায় ৮৫ জন, নারী নির্যাতিত হয়েছেন ১২০ জন। এর মধ্যে ধর্ষনের শিকার হয়েছেন ৬৭ জন, হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ১৪ জন… এতো ভয়ংকর পরিস্থিতি। মহিলা পরিষদ তার মাসিক প্রতিবেদনে দিয়েছে কিন্তু এটাই শেষ নন, সংখ্যা হয়ত আরও বাড়বে। কেনো এই পরিস্থিতি চলছে?”
তিনি বলেন, ‘‘ একটি জনগনের সমর্থিত সরকার সমাজের মধ্যে শান্তি স্থিতিশীল নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব আর সেখানে যদি নারী ও কণ্যারা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে… আমার-আপনার কণ্যা সন্তান স্কুলে গিয়ে সে নিপীড়িত হয়ে ফিরে আসে এই লজ্জা এই জাতির, এই লজ্জা এই দেশের, এই লজ্জা যারা একাত্তরে শহীদ হয়েছেন, যারা জুলাই বিপ্লবে শহীদ হয়েছেন, যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদ হয়েছেন সেই শহীদদেরকে অপমান করা।”
‘‘ কেনো দুস্কৃতিকারীরা আধিপত্য বজায় রাখবে সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তাহলে সরকার কিসের জন্য।”
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ কিভাবে সাহস পায়?’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্টাফ রিকসা থামিয়ে এক মেয়েকে্ বলছে যে, তোমার এই পোষাক পরা ঠিক হয়নি। তাহলে বলুন, তার মরুব্বী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ যদি সেটা যদি অশ্লীলও হয় বলতে পারতো।”
‘‘ আমরা শুনছি এখন ওড়না কান্ড, পোষাক কান্ড। একটা তো মব কালচার, আরেকটা কোথায় যেন উগ্রবাদী গোষ্ঠি কাজ করছে।”
তিনি বলেন, ‘‘ পুরুষ এবং মেয়ে আমরা হলাম মানব সম্প্রদায়। যিনি প্রথম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন তিনি তো একজন মহিলা বি্বি খাদিজা (রা)। তাহলে নিজেকে কেমন করে চলতে হবে, সন্তানকে কিভাবে মানুষ করতে হবে এই ইন্সটিটিউশন তো হচ্ছে মা। আর মা তো একজন নারী… বাবা সত্য কথা বলিস, মিখ্যা কথা বলিস না, শিক্ষকদেরকে সন্মান করিস, মরুব্বীদেরকে সন্মান করিস এটা কে শেখায় সন্তানকে? সেটা হলো মা।”
‘‘ তাহলে নারীদের কিভাবে চলতে হবে সেটা পুরুষরা যদি প্রতিদিন বাতিয়ে দেয় তাহলে তো আমি মা-বোন-স্ত্রী তার স্বাধীনতায়, আমি তো তার চলাফেরায়, আমি তো তার চিন্তায়, তার লেখাপড়ায়, তার মূল্যবোধে হস্তক্ষেপ করছি। সে(মা-বোন-স্ত্রী) কিভাবে চলবে তাকে সেই স্বাধীনতা দিতে হবে। এই স্বাধীনতায় কোনো গোষ্ঠি ও কোনো দলের কারো হস্তক্ষেপ করার কোনো অধিকার নাই।কারণ ধর্মীয় মূল্যবোধ বলুন, সমাজ নৈতিকতা বলুন এটা সবচেয়ে বেশি প্রথিত থাকে, ধারণ করে নারীরা।”
‘নারীদের আটকে রাখলে সমাজ এগুবে না’
রিজভী বলেন, ‘‘ মায়ের কাছ থেকে আমরা প্রথম নৈতিকতার বানী শুনি। সুতরাং সেই নারীকে যদি আমরা খোয়াড়ের মধ্যে আবদ্ধ রাখি, সেই বন্দিশালায় রাখি আজকের উন্নতির যুগে আজকের অগ্রগতির যুগে যখন মানব আত্মার বিকাশের পথ সেখানে এই বন্দি করে রাখার কোনো মানে হয় না।”
‘‘ কোনো উগ্র গোষ্ঠি যদি তার প্রেকসিপশন অনুযায়ী চালাতে চায় তাহলে সমাজ অগ্রগতি লাভ করবে না, সমাজ এগিয়ে যাবে না। কি খেলাধুলা, কি সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, কি লেখাপড়ায় প্রত্যেকটি জায়গায় মেধায় মননে পুরুষের চাইতে মেয়েরা কম নয়। তাদেরকে যদি আমরা আটকে রাখি, বন্দি রাখি তাহলে সমাজ কোনদিন এগুবে না।”
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদের সঞ্চালনায় এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। সমাবেশের পর একটি র্যালী কাকরাইলের নাইটেঙ্গল রেস্তোরার মোড় হয়ে আবার নয়া পল্টনের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
জা ই / এনজি