নিজস্ব প্রতিবেদক
২০ এপ্রিল ২০২৫
দেশে ‘কেমন একটা অস্থিরতা চলছে’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার বিকালে এক স্মরণ সভায় বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এরকম মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ আজকের এই সময়টা..এই সময়টা আমাদের পরীক্ষার সময়। আপনারা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, দেখছেন…পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন, টকশো সব কিছু দেখছেন… কেমন একটা অস্থিরতা চলছে বেশ।” ‘‘কতগুলো নির্ধারিত বিষয়কে অনির্ধারিত করে ফেলেছি… অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আজকে সংস্কার, নির্বাচন এই কথাগুলো অনেক বেশি উচ্চারিত হচ্ছে।এই বিষয়গুলো আমরা মনে করি, সকলের উচিত হবে… সকল রাজনৈতিক দল-গোষ্ঠি সকলের দায়িত্ব হবে অত্যন্ত ধরযের সঙ্গে সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা।”
‘‘ আমাদের এখানে নজরুল ইসলাম খান ভাই আছেন তিনি প্রতিদিন এই সংস্কারের বিষয়গুলো নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সাথে বৈঠকে বসছেন।আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো দিয়েছি।আমরা বিশ্বাস করি যে একটা আলোচনার মাধ্যমে সত্যিকার অর্থেই সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটা সমাধান বেরিয়ে আসবে এবং আমরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জনগণের প্রতিনিধিত্ব আমরা পাবো একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।”
‘আমাদের সংগ্রাম শেষ হয়নি, সর্তক থাকুন’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমাদেরকে কিন্তু সজাগ থাকতে হবে। আমাদের সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি। আমাদের কিন্তু সেই গণতান্ত্রিক উত্তরণ এখনো হয়নি।”
‘‘আমরা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা নির্বাচিত সরকার ও পার্লামেন্ট এখনো পাইনি।সেজন্য আমাদেরকে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে, দৃঢ়তার সঙ্গে, সচেতনতার সঙ্গে আমাদেরকে কিন্তু কাজ করতে হবে, দলকে আরও সুদৃঢ় করতে হবে, সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।”
রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে প্রয়াত দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের স্মরণে এই আলোচনা সভা হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ধানমন্ডির বাসায় আবদুল্লাহ আল নোমান মারা যান।
প্রয়াত নেতা আবদুল্লাহ নোমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার অনুসরণীয় পথে শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীদের চলার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
‘পারভেজ হত্যাকারীরা গণতন্ত্রের পক্ষে না’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘ কিছুক্ষন আগে আমি জানতে পারলাম আমাদের একজন ছাত্র দল কর্মী প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. জাহেদুল ইসলাম পারভেজ তাকে হত্যা করা হয়েছে। কারা হত্যা করেছে আমরা জানি না।”
‘‘ তবে একথা নিসন্দেহে বলা যায়, যারা এই সময়ে একজন ত্যাগী ছাত্র নেতাকে হত্যা করতে পারে তারা নিসন্দেহে বাংলাদেশের এই পরিবর্তনে আন্দোলনের সঙ্গে কোনো মতেই সংযুক্ত ছিলো না।”
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ যারা আজকে বাংলাদেশে বিভাজন সৃষ্টি করতে চায় তারা কখনই বাংলাদেশের পক্ষের মানুষ নন। তারা গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ নন।”
‘‘তারা শ্রমজীবী মানুষের পক্ষের মানুষ নন।”
‘শ্রমিকদের সংস্কার কোথায়’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ আমরা ইচ্ছা হচ্ছিল নজরুল ইসলাম খান ভাইকে জিজ্ঞাসা করি এতো সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু শ্রমজীবী মানুষদের… শ্রমিকদের কথা তো কোথাও শুনতে পারছি না।”
‘‘ আমাদের ৩১ দফার মধ্যে শ্রমজীবী মানুষের কথা আছে কিন্তু এই সংস্কার কমিশনের মধ্যে এ নিয়ে কি আছে আমি জানি না। কৃষকরা তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়, পানি পায় না যখন পানির প্রয়োজন হয় সেচের জন্য, তাদের(শ্রমিকদের) সমস্যার সমাধান হয় না, শ্রমিকদের সন্তানেরা ভালো স্কুলে যেতে পারে না, স্কুলে গেলেও বেই পায় না…সেই কথাগুলো আলোচনা হয় না।”
তিনি বলেন, ‘‘ আপনারা খুব ভালো করে লক্ষ্য করে দেখবেন টেলিভিশন বলেন, টকশো বলেন এবং কি টেলিভিশনে নাটকগুলো হয় সেখানেও কিন্তু এই সাধারণ মানুষরা অনুপস্থিত, শ্রমজীবী মানুষরা অনুপস্থিত।”
‘‘ অথচ এরাই হচ্ছে দেশের বড় অংশ। আমাকে আজকে একটা টেলিভিশন চ্যানেল ইন্টারভিউ করছিলো… বিভিন্নভাবে কথা বলতে গিয়ে তারা তো একটা বিশেষ কিছু মানুষকে মনে করে তাদেরই অবদান আছে। আমি বললাম, আপনারা তো একবারও জিজ্ঞাসা করলেন না ৭ তারিখে(২০২৩ সালে) বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের গুলিতে যে মকবুল শহীদ হয়েছিল সে কে ছিলো? সে ছিল একটি ফ্যাক্টরির শ্রমিক… শাওন ভোলার সে অটো চালাতো..মুন্সিগঞ্জে-নারায়নগঞ্জে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে যারা আত্মহুতি দিয়েছিলো তারাও শ্রমিক ছিল।”
গত ১৫ বছরের আন্দোলন কতজন শ্রমিক আত্মহুতি দি্য়েছে, নির্যাতিন হয়েছে তার তালিকা শ্রমিক দলের তৈরি করা উচিত বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু‘র সঞ্চালনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।
প্রয়াত নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান আলোচনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জা ই / এনজি