রাত ৩:০৮ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

দুর্বল ৪ ব্যাংক পেল ৯৪৫ কোটি টাকা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২ অক্টোবর ২০২৪

 

আর্থিক অনিয়মে দুর্বল হ‌য়ে পড়া বেসরকারি চার বাণিজ্যিক ব্যাংককে ৯৪৫ কোটি টাকা ধার হিসেবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অর্থ সহায়তা পাওয়া ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তায় এ ধার দিয়েছে অতিরিক্ত তারল্য থাকা সবল ৫ ব্যাংক। যেসব ব্যাংক সহায়তা করেছে তারা হলো—সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ডাচ্‌–বাংলা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক।

বুধবার (২ অক্টোবর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মুখপাত্র জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে চার ব্যাংককে ধার হিসেবে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে ৫টি ব্যাংক। এর মধ্যে সংকটে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ৩০০ কোটি টাকা দিয়েছে; যার মধ্যে সিটি ব্যাংক ২০০, ডাচ বাংলা ব্যাংক ৫০ ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকও ৩৫০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। ব্যাংকটিকে ধার দিয়েছে সিটি ব্যাংক ৩০০ কোটি ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে ২৫ কোটি দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ২৭০ কোটি টাকার অর্থ সহায়তা। ব্যাংকটিকে ধার দিয়েছে বেঙ্গল কমার্স ব্যাংক ২০ কোটি, মিউচ্যুয়্যাল ট্রাস্ট ৫০ কোটি ও সিটি ব্যাংক দিয়েছে ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার দিয়েছে সিটি ব্যাংক ৭০০ কোটি টাকা।

এর আগে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে সবল ১০ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। ব্যাংকগুলো হলো— রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসরকা‌রি খা‌তের ব্র্যাক, ইস্টার্ন, সিটি, শাহ্‌জালাল ইসলামী, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, পূবালী, ঢাকা, ডাচ্‌–বাংলা এবং ব্যাংক এশিয়া।

বৈঠক শেষে জানানো হয়, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া ঋণের টাকা ফেরত চাইলে সবল ব্যাংকগুলোকে তিন দিনের মধ্যেই তা ফেরত দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোনো ব্যাংক ঋণ দেওয়ার জন্য কোনো টাকা নিতে পারবে না। কোন ব্যাংককে কত টাকার তারল্য–সহায়তা দেওয়া হবে, সেটি নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া দুই ব্যাংকের সমঝোতার ভিত্তিতে ঋণের সুদহার নির্ধারিত হবে। এসব কারণে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ধার দিতে রাজি হয়েছে ১০ ব্যাংক।

এদিকে তারল্য–সহায়তা পেতে পাঁচটি ব্যাংক ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। এগুলো হচ্ছে— বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইউনিয়ন ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। আরও দুটি ব্যাংক চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির মানে হলো, কোনো কারণে কোনো ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই টাকা দেবে। আপাতত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা না দিয়ে অন্য ব্যাংক থেকে ধারের ব্যবস্থা করছে। অর্থাৎ বাজারের টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাবে। ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি প্রভাব পড়বে না।

সংকটে পড়া সাত ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াতে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার তারল্য-সহায়তা চেয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক ৫ হাজার কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৭ হাজার ৯০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ২ হাজার কোটি, ইউনিয়ন ব্যাংক ১ হাজার ৫০০ কোটি, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক সাড়ে ৩ হাজার কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক ৫ হাজার কোটি ও এক্সিম ব্যাংক ৪ হাজার কোটি টাকা সহায়তা চেয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় আটটি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল এস আলম গ্রুপ। এগুলো হলো, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক। এছাড়া, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকেরও নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিল তারা। এই ৮টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে। তবে এর ম‌ধ্যে ৬টি ব্যাংকের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তাদের অনেক শাখায় লেনদেন করার মতো নগদ টাকা নেই। আমানতকারীদের চাপে প‌ড়ে‌ছেন শাখা কর্মকর্তারা।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এর মধ্যে এস আল‌মের নিয়ন্ত্রণে থাকা আটটিসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে নতুন করে পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পর্ষদ পুনর্গঠন করা অন্য তিন ব্যাংক হলো— আইএফআইসি, ইউসিবি ও এক্সিম ব্যাংক। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের দখলে ছিল আইএফআইসি ব্যাংক, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক।

এছাড়া, এক্সিম ব্যাংকের দখলে ছিলেন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং বেসরকারি ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও প‌রিচালক‌দের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার।

 

 

টিআই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *