ভোর ৫:০৪ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঢাকেশ্বরী মন্দির পরিদর্শনকালে মির্জা ফখরুল : অতীতের ন্যায় আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব

নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ অক্টোবর ২০২৪

 

 

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকব।

আজ বুধবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দুর্গাপূজা মণ্ডপ পরিদর্শন শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি সনাতন ধর্মাবলম্বী প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিবর্তনের সুযোগ আমাদের সকলকে নিতে হবে। এই দেশটা কারো একার নয়। ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম, সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছিলাম তার যে মূল চেতনা ছিলো বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক, সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক একটা রাষ্ট্র, একটা সমাজ নির্মাণ করব। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি আজকে এখানে এসেছি.. আমি আমার দল, দলের চেয়ারপার্সন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই শারদীয় দূর্গা পূজা আপনাদের জীবনে অনাবিল আনন্দ নিয়ে আসুক, একটা সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করুক, বাংলাদেশ সত্যিকার অর্থেই একটা সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকুক, এই কামনা করছি, এই প্রত্যাশা করছি।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীর সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গাপূজা। বুধবার ষষ্ঠী তিথিতে দেবীর আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া দূর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতার প্রথম দিনে সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামন্ডপে আসেন বিএনপি মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা পূজা মণ্ডপে পৌঁছালে মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মাসহ পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ বিএনপি মহাসচিবকে স্বাগত জানান। মন্দিরে প্রবেশ করে মির্জা ফখরুল পূজামন্ডপে পরিদর্শন করেন এবং আগত পূর্ণার্থীদের শুভেচ্ছা জানান।

তিনি বলেন, যে দেবীর আপনারা আরাধনা করছেন, যাকে আপনারা মা দূর্গা বলেন এবং এই দেবীর আর্বিভাব হয়েছিলো অসুরকে বদ করার জন্যে, অন্যায়কে দূর করার জন্যে এবং মানুষে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধুত্ব সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার জন্যে। হিংসা-প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা দূর করে ভালোবাসা প্রেমের সমাজ নির্মাণ করার জন্যে। আজকে সেই সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। আমরা ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে পরাজিত করে সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে আমাদের একটা নতুন বাংলাদেশ নির্মান করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে আমাদের মধ্যে কোনো ভেদ থাকবে না, ভেদাভেদ থাকবে না, ধর্মান্ধতা থাকবে না, সাম্প্রদায়িকতা থাকবে না। এক বর্ণের সাথে আরেক বর্ণের কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা বা ঘৃণার কোনো রাজনীতি থাকবে না।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শাসনামলে ঢাকার মেয়র মরহুম সাদেক হোসেনসহ মন্ত্রিসভার সদস্য কর্তৃক ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা যে ৮ দফার কথা বলেছেন সেই ৮ দফা আমরা বিবেচনা করছি। এর যে মূল বিষয়টি সেটার প্রতি আমাদের সর্বাত্মক যে সহানুভূতি সেটা আমাদের রয়েছে। আমরা আপনাদের এটুকু বলতে পারি, অতীতে যেমন আমরা আপনাদের প্রতিটি সমস্যায় পাশে এসে দাঁড়িয়েছি, ঠিক একইভাবে আগামীতেও আপনাদের সঙ্গে থাকব।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য একটি রাজনৈতিক দল আমি নাম বলতে চাই না, তারা বরাবরই বলে থাকে তারাই নাকি এখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ত্রাণ কর্তা। কিন্তু আপনারা যদি দেখেন অতীতে যতগুলো ঘটনা ঘটেছে তার নেতৃত্বে কিন্তু তাদের লোকেরাই সেখানে ছিলো এবং বাংলাদেশে আপনাদের সস্প্রদায়ের মানুষের যত জমি-জমা, সম্পত্তি দখল করে নেয়া হয়েছে তার মূলেও তারা ছিল্।ো আমরা এই কথাটা বলতে পারি আগামীতে আমাদের সরকার আসলে প্রতিটি ঘটনার আমরা নিরপেক্ষ তদন্ত করে বিচারের ব্যবস্থা করবই।

৮ দফা দাবি তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা বলেন, আমাদের ওপর যেসব অন্যায় হয়েছে, নির্যাতন হয়েছে আমরা তার ন্যায় বিচার ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমরা আশা করি আপনি আমাদের সাথে থাকবেন, আপনার দল আমাদের সাথে থাকবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে এই বিশাল পরিবর্তনের ফলে সারা দেশের মানুষ যখন আনন্দিত হয়েছে, যখন পরিবর্তনের একটা আকাংখা সৃষ্টি হয়েছে, আশা তৈরি হয়েছে সেই সময়ে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিদেশি কিছু মিডিয়া, কিছু প্রচার মাধ্যম তারা বাংলাদেশে সম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছে যা একেবারেই সত্য নয়। ঘটনা ঘটেনি সেকথা আমি বলব না। কিছু ঘটনা ঘটেছে তা কোনো সম্প্রদায়িক ঘটনা ছিলো না, তা ছিলো রাজনৈতিক ঘটনা।

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা দীর্ঘ ১৫ বছর সংগ্রাম-লড়াই করেছি এবং এতে আমাদের অনেক নেতা-কর্মী প্রাণ দিয়েছেন, আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে গুম করা হয়েছে, মিথ্যা মামলার বেড়াজালে আমরা অনেকেই এখন পর্যন্ত আটক আছি। কিছুদিন আগে যে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান হলো সেখানে প্রায় ১৫‘শ উপরে ছাত্র-জনতা শহীদ হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাব শহীদদের পর্যাপ্ত পরিমান ক্ষতিপুরণ এবং তাদের পরিবারের ভরন পোষনের ব্যবস্থা করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির যুব বিষয়ক সহ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ধর্ম বিষয়ক সহ সম্পাদক অমলেন্দু দাশ অপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিন বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

পরে বিএনপি মহাসচিব দলের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বনানী পূজামন্ডপও পরিদর্শন করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের শুভেচ্ছা জানান।

 

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *