রাত ১২:৫৩ | মঙ্গলবার | ২৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ৩০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ডায়াবেটিসে এখনও ‘যুগ পুরোনো’ ওষুধেরই আধিপত্য

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৮ এপ্রিল ২০২৫

 

ডায়াবেটিস চিকিৎসায় আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী দুটি পুরোনো ওষুধ—মেটফরমিন ও সালফোনিলিউরিয়া। যদিও আধুনিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সঙ্গে নতুন ওষুধের আবিষ্কার হয়েছে, তবে সাশ্রয়ী দাম এবং দীর্ঘমেয়াদি কার্যকারিতায় এগুলো এখনও সেরা বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের ২৪তম আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই দুটি ওষুধের গুরুত্ব ও কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। যেখানে মেটফরমিন এবং সালফোনিলিউরিয়া এখনো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অমূল্য ভরসা হিসেবে পরিচিত।

চিকিৎসকরা বলেন, মেটফরমিন এবং সালফোনিলিউরিয়া এখনো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই কার্যকর, বিশেষত যখন দেখা যায় অনেক রোগী ইনসুলিন ইনজেকশনের ব্যয় বহন করতে পারছেন না। মেটফরমিন ও সালফোনিলিউরিয়া সাশ্রয়ী এই দুটি ওষুধ রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং অধিকাংশ রোগীর জন্য এটি একটি কার্যকরী বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

ফ্রান্সের প্যারিসের ইনস্টিটিউট নেকার এ্যানফেন্টস ম্যালাডিসের সদস্য প্রফেসর মাইকেল মার সম্মেলনে অংশ নিয়ে মেটফরমিনের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেন, মেটফরমিন আদতে উত্তর আফ্রিকায় হারবাল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হতো এবং বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে এর ব্যবহার শুরু হয়।

তিনি আরও বলেন, মেটফরমিন রক্তে গ্লুকোজ কমিয়ে রাখতে হেপাটিক গ্লুকোনিওজেনিসিসের মাধ্যমে কাজ করে।

মাইকেল মার বলেন, সালফোনিলিউরিয়া একটি পুরোনো ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের ওষুধ, যা অগ্নাশয়ে ইনসুলিন নিঃসরণে সহায়তা করে। এই ওষুধটি বিশেষ করে বাংলাদেশে ইনসুলিন ইনজেকশনের ব্যয়বহুলতার তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী এবং অনেক রোগী এটি ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছেন।

বাংলাদেশের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ বলেন, মেটফরমিনে দীর্ঘদিনের কার্ডিওভাস্কুলার সুবিধা পাওয়া যায়। এটি কিডনি রোগ ও কার্ডিওভাস্কুলার জটিলতা কমাতে সাহায্য করে। ফলে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি অন্যান্য চিকিৎসাগত সুবিধাও পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, এই ওষুধ দুটি দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় রোগীরা সহজেই এটি কিনতে পারেন এবং চিকিৎসার জন্য যথাযথ সহায়তা পেতে পারেন।

এই সম্মেলনে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। যেমন প্রেগনেন্সি, ভিটামিনের অভাব, বিরল রোগ এবং অ্যাডভান্স হার্ট ফেইলিওর চিকিৎসা। বৈজ্ঞানিক আলোচনার মধ্যে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ মনির-উজ-জামান সম্মেলনের উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, এই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের চিকিৎসাসেবার উন্নয়নে ভূমিকা রাখা এবং উন্নততর চিকিৎসা সেবা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা নিশ্চিত করা।

তিনি আরও বলেন, মেডিসিন চিকিৎসা হলো সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য এবং কার্যকরী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার মূল মাধ্যম।

সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, মেটফরমিন এবং সালফোনিলিউরিয়া ব্যবহার করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিশ্বব্যাপী ১৫ জন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং বাংলাদেশের চিকিৎসকদের নতুন দৃষ্টিকোণ প্রদান করেন।

এই সম্মেলনের শেষে আয়োজকরা উল্লেখ করেন, যদি চিকিৎসকরা সম্মেলনে আলোচনা করা বিষয়গুলো প্র্যাকটিসে আনতে পারেন, তবে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আশা করা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য আনতে পারে এবং এর মাধ্যমে সাশ্রয়ী ও কার্যকরী চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

 

শ ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *