রাত ১০:০০ | সোমবার | ২৮শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশ : নিয়মিত আয় না থাকলে মিলবে না মার্জিন ঋণ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
২৭ এপ্রিল ২০২৫

 

মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স ‘মার্জিন রুলস’ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) জমা দিয়েছে। একজন বিনিয়োগকারী ১:১ অনুপাতে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন বলে সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। তবে সব বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন না। শেয়ারবাজারের বাইরে যেসব বিনিয়োগকারীর মাসিক আয়ের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে তারাই মার্জিন ঋণ নিতে পারবেন, এমন সুপারিশ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, সাধারণত বাজার সম্পর্কে যাদের দক্ষ জ্ঞান রয়েছে মার্জিন ঋণ তাদের জন্য। পৃথিবীর কোথাও দীর্ঘ মেয়াদে মার্জিন ঋণ দিয়ে রাখে না। দক্ষ বিনিয়োগকারীরা স্বল্প সময়ের জন্য মার্জিন ঋণ নেন এবং পরিশোধ করে দেন। কিন্তু আমাদের দেশে বাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান নেই এমন ব্যক্তিরাও মার্জিন ঋণ নেন। ২০১০ সালের ধসের পর বাজারে নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা তৈরি হয়েছে। এর মূল কারণ অদক্ষ বিনিয়োগকারীরা মার্জিন ঋণ নিয়ে আটকে যান।

সূত্রটি আরও জানিয়েছে, মার্জিন ঋণের কারণে বিনিয়োগকারী এবং সার্বিক বাজার যেযান ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেসব বিষয় মাথায় রেখেই মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের পক্ষ থেকে সব ধরনের বিনিয়োগকারীর জন্য মার্জিন ঋণের অপশন রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তবে টাস্কফোর্স এখানে দ্বিমত প্রকাশ করেছে এবং বাজারের স্বার্থে যাদের শেয়ারবাজারের বাইরে সুনির্দিষ্ট আয় আছে, তাদের মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। এতে বিনিয়োগ করা শেয়ারের দাম কমে গেলেও বিনিয়োগকারী অন্য আয়ের অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন।

এ বিষয়ে টাস্কফোর্সের একজন সদস্য জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অন্য অংশীজনদের মতামত নিয়েছি। অংশীজনদের মতামতের সঙ্গে আমাদের সুপারিশের বড় ধরনের তেমন পার্থক্য নেই। বিশেষ কিছু বিষয়ে আমরা তাদের মতামত নিতে পারিনি। কেন সেটা নেওয়া সম্ভব হয়নি, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বিস্তারিত আমরা সুপারিশে তুলে ধরেছি।

তিনি বলেন, ডিবিএ থেকে সবার জন্য মার্জিন ঋণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে একমত হইনি। যাদের নিয়মিত আয় আছে আমরা তাদের জন্য মার্জিন ঋণের সুপারিশ করেছি। আর যাদের নিয়মিত আয় নেই তাদের জন্য মার্জিন ঋণ রেস্ট্রিক্টেড করার সুপারিশ করেছি। আমরা ১:১ অনুপাতে সর্বোচ্চ ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত মার্জিন ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেছি।

ওই সদস্য আরও বলেন, পেনশনহোল্ডার, শিক্ষার্থী বা গৃহিণীদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা থাকে না। যখন নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা থাকে না, তখন মার্জিন ঋণ নিলে অনেক সময় সমস্যায় পড়ে যান। নিয়মিত আয় না থাকায় মার্জিন সার্ভিস তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। কিন্তু যাদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা আছে, তারা ওই আয়ের অর্থ দিয়ে ঋণের অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। সেজন্য যাদের নিয়মিত আয় আছে তারা মার্জিন ঋণ নিলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, বাজারও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এজন্য আমরা যাদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা আছে, তাদের জন্যই মার্জিন ঋণের সুপারিশ করেছি।

টাস্কফোর্সের এ সদস্য বলেন, যে ব্যক্তি বাড়ি ভাড়া পায়, তার কিন্তু আয়ের একটা ব্যবস্থা আছে। মার্জিন ঋণ তার জন্য রেস্ট্রিক্টেড না। কিন্তু যাদের নিয়মিত আয় থাকে না, যেমন- অবসরের পর যে ভাতা পাওয়া যায় তা দিয়ে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের ঋণ পরিশোধ করতে গেলে একটা সমস্যা হবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও মার্জিন ঋণ দীর্ঘ সময়ের জন্য দেওয়া হয় না। এ ঋণ নিয়ে সাধারণত বাজার সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা দক্ষ বিনিয়োগকারীরা ব্যবসা করেন। তারা স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ নিয়ে তা দ্রুত পরিশোধ করে দেন।

এদিকে, বিএসইসি থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বাজারের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএসইসি গঠিত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স রোববার (২৭ এপ্রিল) কমিশনের কাছে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর যুগোপযোগী করার বিষয়ে চূড়ান্ত সুপারিশ পেশ করেছে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মো. আলী আকবর ও কমিশনার ফারজানা লালারুখের উপস্থিতিতে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স’ এ সুপারিশ কমিশনের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে। সুপারিশ হস্তান্তরের সময় টাস্কফোর্সের সদস্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিএসই বিভাগের অধ্যাপক মো. মোস্তফা আকবর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন উপস্থিত ছিলেন।

এসময় বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, বিএসইসি ও পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স দেশের পুঁজিবাজারের সংস্কারের বিষয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সবার পরামর্শ ও মতামতের আলোকে সংস্কারের জন্য কাজ করছে। পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশের দ্রুত বাস্তবায়নে বিএসইসি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেবে। মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর যুগোপযোগী করা সংক্রান্ত পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্সের চূড়ান্ত সুপারিশের কার্যকর বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের পুঁজিবাজারের মার্জিন ঋণ সংক্রান্ত জটিলতার স্থায়ী সমাধান হবে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারে আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষ পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স গঠন করে বিএসইসি। পরবর্তীসময়ে টাস্কফোর্সের পরামর্শ এবং তাদের কাজের সহযোগিতার জন্য পুঁজিবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ‘পুঁজিবাজার সংস্কার ফোকাস গ্রুপ’ গঠন করা হয়।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স কমিশনের কাছে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ এর যুগোপযোগী করার বিষয়ে খসড়া সুপারিশ জমা দেয়। পরবর্তীসময়ে ওই খসড়া সুপারিশের ওপর সংশ্লিষ্ট সবার মতামত আহ্বান করা হয়। জমা পড়া মতামত বিবেচনায় নিয়েই পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সুপারিশ প্রস্তুত করেছে। আগামীকাল সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিএসইসিতে সংবাদ সম্মেলন করে চূড়ান্ত সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।

 

টি আই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *