রাত ৪:৫২ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা : প্রেস সচিব

নিজস্ব প্রতিবেদক

১১ জানুয়ারি ২০২৫

 

 

 

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ আমলে বিশ্বের ইতিহাসে বড় ধরনের লুটপাট হয়েছে বাংলাদেশে। চোরতন্ত্র তৈরি করেছিলেন শেখ হাসিনা। বড় বড় কোম্পানিকে তিনি কাজ পাইয়ে দিতেন।

শনিবার (১১ জানুয়ারি) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা ও পরবর্তী প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, সে সময় বিদেশে টাকা পাচারকারীরা এখন সেই টাকায় প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যে, এখানে এখন মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটেছে, কোনো গণঅভ্যুত্থান হয়নি। পরাজিত শক্তি আবার আপনাদের জঙ্গি বানাতে চায়।

জুলাই বিপ্লবে গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, অনেক গণমাধ্যম আন্দোলনকারীদের ‘জাতির শত্রু’ হিসেবে তুলে ধরেছিল। গণমাধ্যমের ভাষা ব্যবহার করে তখন শাসকদের কাছে বার্তা দেওয়া হচ্ছিল এই আন্দোলনকারীদের দমন করা উচিত। যদি ফ্যাসিস্ট শক্তি জয়ী হতো, তাহলে দুই লাখ মানুষকে জেলে যেতে হতো, আর তখন ন্যারেটিভ হতো যে, কিছু দুর্বৃত্ত দেশজুড়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ের মতো মহৎ সময় আমাদের জন্য পূর্বে আর কোনোবার আসেনি। আমাদের সাংবাদিকরা ১৯৭১-এর যুদ্ধ কতটুকু দেখেছে আমি জানি না। আমাদের এক কোটি লোক শরণার্থী হয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এদের মানবেতর জীবন ও দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে খুব কমই লেখা পাওয়া যায়। এসব নিয়ে আমরা স্টোরি করিনি। আমাদের রাইটিং-এর অভ্যাসটা খুব কম। লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাসের যুদ্ধে আমাদের ১৩ জন সাংবাদিক শহীদ হয়েছিলেন। অথচ জুলাই বিপ্লবের শেষ কয়েক দিনে আমরা ৫ জন সাংবাদিক হারিয়েছি। এ থেকে বুঝা যায় ফ্যাসিবাদীর দোসররা আর কিছুদিন সময় পেলে হয়তো আমরা ২৫ মার্চের মতো আরেকটা কালরাত পেতাম আর সেটা অবশ্যই শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের বিরুদ্ধেই হতো।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বৃহত্তম জেলখানা, বৃহত্তম গোরস্তান তৈরি করেছিল। এতেই বোঝা উচিত ছিল, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল। ফ্যাসিবাদীদের সময়ে শিক্ষক, সাংস্কৃতিক সমাজ তাদের দোসর হিসেবে আবির্ভূত হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের মৃত্যু ঘটিয়েছিল। আমাদের নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের কারণে ফ্যাসিবাদীদের দরজা আবার খুলে যাচ্ছে। এ কারণে সাধারণ জনগোষ্ঠীর জন্য আমাদের ভিশন এক না হলে ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য আত্মঘাতী হবে। সাংবাদিকরা লোভের মধ্যে গিয়ে ধ্বংস হয়েছিল। এ ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে।

অনুষ্ঠানে জবি সাংবাদিক সমিতির সভাপতি ইমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার ইতিহাস আমরা যা দেখেছি, তা বর্ণনা করতে গেলে কয়েক ঘণ্টা লেগে যাবে। জুলাই বিপ্লবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

জবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহতাব হোসেন লিমনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. রইছ উদ্দীন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জবি সাংবাদিক সমিতির সহ-সভাপতি আসাদুল ইসলাম।

অনুষ্ঠানে জবি সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকে অপ-সাংবাদিকতা রুখতে ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও তাদের জন্য আলাদা ওয়েজ বোর্ড গঠন করে বেতন কাঠামো নির্ধারণের দাবি জানানো হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগের শিক্ষক, রাজনৈতিক দলের নেতা, সাংবাদিক প্রতিনিধি ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *