দুপুর ১:০২ | রবিবার | ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া !

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল

১৮ আগস্ট ২০২৪

উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রেই যাবেন খালেদা জিয়া। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে তার চিকিৎসার বিষয়ে আলোচনা অনেকটা চূড়ান্ত। এমনটিই দলীয় সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, গত বছরের অক্টোবরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক ঢাকায় এসে চিকিৎসা দেন। যেহেতু তারা বিষযটি নিজেরা দেখেছেন, তাই সেখানেই পাঠানোর বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিৎ। অতি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাবেন বলেও জানান তারা।
তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের দেখতে গিয়ে আজ রোববার দুপুরে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বেগম জিয়ার চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেছেন, কোথায় যাবেন, কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
ডা. জাহিদ বলেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে এই হাসপাতালে তিনি এসেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের শারীরিক অবস্থা এখন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যথাসময়ে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় সব ধরনের সহায়তা বিএনপির পক্ষ থেকে করা হবে জানিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, সাড়ে ৭০০’র বেশি মানুষ এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই বাড়ি ফিরে গেছেন। আবার অনেকের দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা প্রয়োজন। বর্তমানে ১১ জন রোগী দু-চোখে দেখছেন না। তাদের আরও উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। দলের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে তিনি জানান।

এদিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজ গেটকে বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, বেগম খালদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কবে বিদেশে নেয়া হতে পারে সে বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ ঠিক করা হয়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব, তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নেয়া হবে। তিনি বলেন, বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা তার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড ও দেশে-বিদেশী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ পর্যালোচনা করছেন। তিনি যখন শারীরিকভাবে ফিট হবেন তখনই কালবিলম্ব না করে বিদেশে পাঠানো হবে।

চিকিৎসার জন্য কোথায় যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. রফিক বলেন, বেগম জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড, বিশেষ করে ডা, জোবায়দা রহমানসহ আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ তার জন্য যেটি সুপারিশ করবেন, সেখানেই নেয়া হবে। এককথায় চিকিৎসকরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।

বিএনপি সূত্র বলছেন, গত কয়েক বছর আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশে নানা অজুহাতে খালেদা জিয়ার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল পাসপোর্ট অধিদপ্তর। গত ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার দিন রাতেই তার নবায়নকৃত মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) দেওয়া হয়।

খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ও চিকিৎসকদের দাবি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া ১৫-২০ ঘণ্টার লম্বা জার্নি করার মত শারীরিক অবস্থা নেই। যে কারণে এই মুহূর্তে তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে অনুমতি দিচ্ছেন না চিকিৎসকরা। তবে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিতে তার পাসপোর্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় সবকিছু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন চিকিৎসদের অনুমতি পেলেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হবে।

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবি এম আব্দুস সাত্তার বলেন, আমাদেরকে দেখতে হচ্ছে ১৫-২০ ঘণ্টা জার্নি করার মতো ম্যাডামের সেই শারীরিক অবস্থা আছে কিনা। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে গেলাম, কিন্তু লম্বা জার্নি করার পর যদি শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায় তাহলে তো লাভ নেই। তিনি বলেন, যখন চিকিৎসকরা অনুমতি দেবেন, তখনই আমরা চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেব। আমাদের সব প্রস্তুতি আছে। এখন শুধু চিকিৎসকদের অনুমতির অপেক্ষায় আছি।

৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন যাবত লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। গত ২৩ জুন এভারকেয়ার হাসপাতালে তার হৃদযন্ত্রে ‘পেসমেকার’ বসানো হয়েছিলো। এর আগে ২৩ সালের অক্টোবরে খালেদা জিয়ার লিভার সিরোসিস রোগের চিকিৎসা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বখ্যাত জনস হপকিন্স হাসপাতালের তিন চিকিৎসক ঢাকায় এসে চিকিৎসা দেন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কথিত জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ওই বছরের অক্টোবরে হাই কোর্টে আপিল শুনানি শেষে সাজা বেড়ে হয় ১০ বছর। এরপর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায়ও আরও সাত বছরের সাজা হয় বিএনপি নেত্রীর। তিনি তখনও পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের কারাগারে ছিলেন। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে খালেদার দণ্ড ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। ওই বছরের ২৫ মার্চ সাময়িক মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসা ফিরোজায় ফেরেন খালেদা। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন। এর পর থেকে পরিবারের আবেদনে প্রতি ছয় মাস পরপর বিএনপি প্রধানের মুক্তির মেয়াদ বাড়ায় সরকার। প্রতিবারই তাকে দুটি শর্ত দেওয়া হচ্ছে। তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে এবং তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য পরিবারের তরফ থেকে বেশ কয়েকবার আবেদন করা হলেও ওই শর্তের যুক্তি দিয়েই বার বার তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। সবশেষ গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণ বিপ্লবে শেখ হাসিনা পদত্যগ করে দেশ ত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে গেলে রাষ্ট্রপতি মো. শাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে পরের দিন ৬ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দন্ড মওকুফ করেছেন। এর ফলে তার রাজনীতি করা বা বিদেশে যাবার ক্ষেত্রে কোনো বাধা রইল না।

 

জা ই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *