বিশেষ প্রতিবেদন
মোহাম্মদ জাফর ইকবাল
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সারাদেশে সহিংসতা উস্কে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছে প্রায় সব দলই। তারা বলছেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে সংগঠিত সহিংসতার জন্য পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনাই দায়ী। অন্যদিকে দেশের বিশিষ্টজনরা বলছেন, জুলাই-আগস্টসহ গত দেড় দশকে যে নারকীয় তান্ডব চালানো হয়েছে সেই গণহত্যার দায় আওয়ামী লীগ স্বীকার না করলে এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবারো ঘটতে পারে।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুরের ঘটনায় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। এ ধরনের ঘটনা উস্কে দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে দায়ী করেছে প্রায় সব দলই। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ।
দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, এত মানুষের মৃত্যু ও ১৫ বছরের নির্যাতনের ক্ষোভ মানুষের মধ্যে জমে ছিল। এ ঘটনায় আরও একবার মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে রাজনীতির মাধ্যমেই সমাধান করা উচিত বলে মনে করছে দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। কোনো অবস্থাতেই আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়া কাম্য নয় বলেই মত দলটির।
এই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকেই দায়ী করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। তারা বলছে, গণহত্যার দায় স্বীকার না করলে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সামনেই নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার কথা রয়েছে প্ল্যাটফর্মটির। তবে বিশৃঙ্খলার জন্য সরকারের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে নাগরিক ঐক্য ও গণঅধিকার পরিষদ। এই ঘটনায় সরকারের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই বলেই মত দল দুইটির।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ছয় মাস পর গত বুধবার রাতভর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বুলডোজার দিয়ে ভবনটির একাংশ ভেঙে দেয়া হয়। যেসময় এই ভাঙচুর চলছিল তখন পূর্বনির্ধারিত এক ভার্চুয়াল ভাষণে এর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, যিনি গত পাঁচ অগাস্ট দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। গত বৃহস্পতিবার সকালেও ভবনটিকে বুলডোজার দিয়ে ভাঙতে দেখা যায়। দুই দিনই হাজারখানেক উৎসুক জনতা ভবনটির সামনে জড়ো হয়েছেন। এসময় অনেককেই ভবনের ইট, রড খুলে নিতে দেখা গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বলছে, হাসিনা যে অন্যায় করেছে এবং সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ করেছে, তার প্রতিবাদে তারা ভবনের এসব অংশ খুলে নিচ্ছে। কেউ কেউ বলছে, দম্ভের পতনের স্মৃতি হিসেবে তারা ইট কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হবার ছয় মাস পর ছাত্র সমাজের উদ্দেশে মঙ্গলবার শেখ হাসিনা ভাষণ দেবেন এমন খবর আসার পর থেকেই এনিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। শেখ হাসিনা বক্তব্য দিলে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভবনে ভাঙচুর চালানো হবে উল্লেখ করেও সামাজিক মাধ্যমে নানা পোস্ট দেয়া হয়। ধানমন্ডিতে থাকা শেখ হাসিনার আরেকটি বাসভবন সুধাসদনেও হামলা চালানো হয়। এছাড়া খুলনা, কুষ্টিয়া, ভোলা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রংপুর, ত্রিশাল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি এলাকায় ভাংচর চালানো হয়েছে। মূলত এর অধিকাংশ ছিল শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্যাল।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বরসহ সারাদেশে ভাঙচুরের ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, গড়ার তাকত আছে আমাদের?” শিরোনামে একটি ফেসবুক পোস্ট দেন। লম্বা পোস্টের একটি অংশে তিনি লিখেছেন, ভাঙ্গার পরে গড়ার সুযোগ এসেছে, কিন্তু অনন্ত ভাঙ্গা প্রকল্প আমাদের জন্য ভালো ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবহ না। গড়ার প্রকল্পগুলো খুব দ্রুতই শুরু ও বাস্তবায়ন হবে। আপনারা গড়ার কাজে সক্রিয় হোন।
বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে হাসনাত আব্দুল্লাহ নিজের ফেসবুক পেইজে লেখেন, আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি লেখেন, ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ। রাত ১১টার দিকে দেয়া এক পোস্টে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম লেখেন, আবু জাহেলের বাড়ি এখন পাবলিক টয়লেট!
ঢাকার ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলার সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা কয়েকজন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে ফেলবে এই শক্তি তাদের হয়নি। তারা একটি দালান ভেঙে ফেলতে পারবে, কিন্তু ইতিহাস মুছতে পারবে না।বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তার বক্তব্য সরাসরি প্রচার করা হয়। আন্দোলনের স্মৃতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ওই বাড়িটাকে কেন ভেঙে ফেলা হচ্ছে? কারা ভাঙে, দেশের মানুষের কাছে বিচার চাই।
এদিকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শক্তভাবে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার এ ধরনের কর্মকাণ্ড শক্তভাবে প্রতিহত করবে।ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনা অনভিপ্রেত ও অনাকাংখিত বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে, পলাতক অবস্থায় ভারতে বসে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে জনমনে গভীর ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে এবং এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এদিকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখার জন্য ভারতকে লিখিতভাবে বলা হয়েছে এবং তাদের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে তা বলে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুতির পর ভারতে পালিয়ে থাকা শেখ হাসিনার অনলাইন ভাষণের ঘোষণায় উত্তেজিত ছাত্র-জনতা রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত শেখ মুজিবের বাড়িতে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে। এমনটি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ পরিবারের নাম মুছে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। বুধবার রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে তিনি একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসে জামায়াতের আমির সার্বিক পরিস্থিতির জন্য পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উস্কানিই মূলত দায়ী বলে উল্লেখ করেন। এতে ডা. শফিকুর রহমান লিখেছেন, মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা কখনোই বাংলাদেশের মানুষকে অন্তরে ধারন করে না। এটি তার ঘৃণিত স্বভাব। দেশবাসীকে কোনো ধরনের উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
স্ট্যাটাসে জামায়াত আশীর আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল নাগরিকবৃন্দের আহ্বান- কোনো উস্কানিতে পা না দিয়ে ধৈর্য ধরুন এবং প্রিয় দেশকে ভালোবাসার নমুনা প্রদর্শন করুন।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আজকে ছাত্রলীগের ব্যানারে জাতির সামনে ভাষণ দিয়েছে। যে আমাদের ভাইদের গুলি করে দেশ থেকে পালিয়েছে, সে কী করে কর্মসূচি ঘোষণা করে। আমরা এ দেশে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনার কোনো অস্তিত্ব রাখব না। যারা ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল সেসব ফ্যাসিবাদীদের কোনো চিহ্ন বাংলাদেশের মাটিতে রাখতে চাই না। অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরত এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
পতিত স্বৈরাচারের উস্কানিমূলক বক্তব্যে জনমনে তীব্রক্ষোভে সারাদেশে সংঘটিত ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। শুক্রবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়।
বিবৃতিতে বিএনপি বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমাদের আহবান, পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করুন। অন্যথায় দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির প্রসার ঘটবে। সুতরাং কঠোরভাবে আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে রাষ্ট্র ও সরকারের ভূমিকা দৃশ্যমান করা এখন সময়ের দাবি।
বিবৃতিতে বলা হয়,আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, হাজারো শহীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বিতাড়িত পতিত পরাজিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের উস্কানিমূলক আচরণ, জুলাই আগস্টের রক্তক্ষয়ী ছাত্র গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কে অশালীন এবং আপত্তিকর বক্তব্য মন্তব্য দেশের জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ এবং ক্রোধের জন্ম দিয়েছে। এরই ফলশ্রুতিতে গত বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের স্মৃতি, মূর্তি, স্থাপনা ও নামফলকসমূহ ভেঙ্গে ফেলার মতো জনস্পৃহা দৃশ্যমান হয়েছে। বিএনপি মনে করে, পতিত ফ্যাসিস্ট এবং স্বৈরাচারের স্মৃতিচিহ্ন নিশ্চিহ্ন কিংবা নির্মূলের মধ্যেই ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন নিহিত নয় বরং ফ্যাসিবাদবিরোধী আদর্শিক চিন্তা, শক্তি ও প্রভাবের আদর্শিক রাজনীতি প্রতিষ্ঠা এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী গণঐক্যকে দৃঢ় ভিত্তি দেয়া এবং জাতীয় ঐক্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতির চর্চাই উত্তম পন্থা। জনগণের মধ্যে এই ধরণের বার্তা ছড়িয়ে দিতে আমাদের সকলেরই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
বিএনপি’র উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, সরকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা প্রকাশ করতে না পারলে রাষ্ট্র ও সরকারের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়বে। এই পরিস্থিতিতে উগ্র নৈরাজ্যবাদী গণতন্ত্র বিরোধী দেশী বিদেশী অপশক্তির পাশাপাশি পরাজিত ফ্যাসিস্টদের পুনরুত্থানের সম্ভাবনা দেখা দিতে পাওে, যার উপসর্গ ইতিমধ্যেই দৃশ্যমান। বিবৃতিতে গত ছয় মাসে নেয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলা হয়, বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার গত ৬ মাসেও পলাতক স্বৈরাচার এবং তাদের দোসরদেরকে আইনের আওতায় আনতে যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ জনসম্মুখে দৃশ্যমান করতে সফল হয়নি বলে জনমনে প্রতিভাত হয়েছে। ফলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো বেআইনী কর্মকান্ডে উৎসাহিত হচ্ছে। একটি সরকার বহাল থাকা অবস্থায় জনগণ এভাবে নিজের হাতে আইন তুলে নিলে দেশে বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে। অথচ জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা অনুযায়ী জনগণের প্রত্যাশা ছিল দেশে আইনের শাসন পুন:প্রতিষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল।
বিএনপি মনে করে , বর্তমানে দেশে বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ নানান ধরণের দাবিদাওয়া নিয়ে যখন তখন সড়কে ‘মব কালচারের’ মাধ্যমে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করছে যা সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে মুন্সিয়ানা দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। জুলাই আগস্টের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারদের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা এবং আহতদের যথাযথ চিকিৎসা ও পুনর্বাসন, নিন্দিত ঘৃণিত পলাতক স্বৈরাচার এবং তার দোসরদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা, পরাজিত ফ্যাসিস্টদের উস্কানিমূলক তৎপরতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ অতি জরুরী অগ্রাধিকার’ উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, অথচ এসব বিষয়ে দৃশ্যমান এবং উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই।
জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে পতিত স্বৈরাচারের দোসররা কর্মরত থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে বিএনপি তার বিবৃতিতে বলেছে, এখনও প্রশাসনকে পতিত ফ্যাসিস্ট শাসকের দোসরমুক্ত করা হয়নি, বিচার বিভাগে কর্মরত ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনও বিদ্যমান, পুলিশ প্রশাসনে গণঅভ্যুত্থানবিরোধী সক্রিয় সদস্যরা এখনও কর্মরত। এমতাবস্থায় সরকার জনআকাঙ্খা পূরণে সফলতা অর্জন করতে পারবে কিনা তা যথেষ্ট সন্দেহের উদ্রেক করে। বিবৃতিতে বলা হয়, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে জনগণের নিত্যদিনের দু:খ দুর্দশা লাঘব করা জরুরী, দীর্ঘ ষোল বছরের ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সকল শ্রেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা গায়েবী মামলার কোন সুরাহা এখনও হয়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ ফ্যাসিবাদী আমলের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় এখনও হয়রানীর শিকার হচ্ছে, অথচ এ বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কার্য্কর কোনো ভূমিকা রাখেনি।
দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবি পুনরুল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে ধারণ করে মানুষের হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, মানবাধিকারসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাশীঘ্র সম্ভব একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করাই এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। নির্বাচনমুখী জরুরী সংস্কার সাধন করে দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন করাই বর্তমান সরকারের প্রধানতম ম্যান্ডেট। অথচ জনআকাঙ্খা উপেক্ষা করে অন্তর্র্বতীকালীন সরকার নিজেরাই এই অগ্রাধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে অন্যান্য বিষয়ে অধিক মনোযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
ধানমন্ডির ৩২ নং সড়কে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ সারাদেশে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনাবলী ‘কোনোভাবে কাঙ্খিত নয়’ বলেছে গণসংহতি আন্দোলন। শুক্রবার দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এক যৌথ বিবৃতিতে এই মন্তব্য করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, জনগণের অভ্যুত্থানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যে জনগণের ভেতরে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তার ফলে এসব ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ক্ষোভ প্রকাশের এই প্রক্রিয়া আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে সুগম না করে বরং তাকে জটিল করে তুলতে পারে। আমরা জনগণের কাছে আহ্বান জানাই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ফ্যাসিবাদকে রাজনৈতিক আদর্শিক ভাবে মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করতে।
ভারতে বসে শেখ হাসিনা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ষড়যন্ত্র করছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে বসে এদেশকে আনস্টেবল সিচ্যুয়েশনে নেবার জন্য, এদেশকে ধবংস করতে যেটুকু তিনি বাকি েের্খছেন সেটি পূর্ণ করার জন্যে নতুন ভাবে এই ফ্যাসিস্ট দল(আওয়ামী লীগ) কে নিয়ে মাঠে নামতে চান। অবিলম্বে এখন প্রয়োজন বাংলাদেশে সকল দেশপ্রেমিক শক্তির ঐক্য। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে চাই। বিশেষ করে যে ছাত্র সমাজ অংশ গ্রহন করেছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে তাদের এবং হাসিনা বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে ঈস্পাত কঠিন ঐক্য আমরা গড়ে তুলতে চাই।
জা ই / এনজি