সকাল ৯:১৭ | শনিবার | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ২০শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

খাল দখলের আদেশ : ট্রাম্পের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে নালিশ পানামার প্রেসিডেন্টের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ জানুয়ারি ২০২৫

বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যপথ পানামা খাল দখল সংক্রান্ত একটি নির্বাহী আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বাক্ষর করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নালিশ জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বরাবর চিঠি দিয়েছেন পানামার প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো।

চিঠিতে মুলিনো রেফারেন্স হিসেবে জাতিসংঘ সনদের একটি অনুচ্ছেদ উল্লেখ করেছেন। সেই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের কোনো সদস্য রাষ্ট্র অপর সদস্যরাষ্ট্রের ভৌগলিক অখণ্ডতা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে হুমকি-ধামকি বা বলপ্রয়োগ করতে পারবে না।

পাশাপাশি এ বিষয়টি জাতিসংঘের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর অঙ্গসংস্থা নিরাপত্তা পরিষদের উত্থাপনের জন্যও মহাসচিবকে অনুরোধ করেছেন পানামার প্রেসিডেন্ট।

মধ্য আমেরিকার দেশ পানামা ভৌগলিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত। ৭৫ হাজার ৪১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতেই রয়েছে পানামা খাল, যা মিসরের সুয়েজ খালের পর বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচল উপযোগী বাণিজ্যপথ। প্রায় ৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১১০ ফুট প্রশস্ত এই খালটি আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরকে সংযুক্ত করেছে।

পানামা খাল না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব থেকে পশ্চিম উপকূল অভিমুখে যাত্রাকারী যেকোনো জাহাজকে দক্ষিণ আমেরিকার কেইপ হর্ন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে অতিরিক্ত ১৫ হাজার কিলোমিটার (৮ হাজার নটিক্যাল মাইল) পথ অতিক্রম করতে হতো। এছাড়া উত্তর আমেরিকার এক দিকের উপকূল থেকে দক্ষিণ আমেরিকার অন্য দিকের উপকূলে যাওয়ার ক্ষেত্রেও পানামা খালের কারণে ৬৫০০ কিলোমিটার কম পথ পাড়ি দিতে হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত এ খালটি ১৯১৪ সালে চালু করা হয়। এরপর ১৯৭৭ সালে দেশটি পানামার সঙ্গে একটি চুক্তি করে খালটি তাদের কাছে হস্তান্তরের জন্য। তবে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত দুই দেশ যৌথভাবে পানামা খাল নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।

লাতিন আমেরিকার দেশ পানামার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠই ছিল। তবে ২০২৩ সালে পানামার সাথে চীন নতুন করে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের আলোচনা শুরুর পরই পানামার সাথে সম্পর্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে ভাবনা তৈরি হয়েছে। আর ট্রাম্প এখন অভিযোগ তুলছেন, মধ্য আমেরিকান দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ ও অন্য নৌযান থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করছে।

প্রসঙ্গত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রই পানামা খাল সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে।

গত ২৩ ডিসেম্বর প্রথমবার পানামা খাল দখলের হুমকি দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেদিন অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, “ওই খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ পানামা এবং তার জনগণের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং সেটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বদান্যতা। কিছু শর্তে পানামার তৎকালীন সরকার রাজি হয়েছিল বলেই খালের নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।”

“কিন্তু সেটির নিয়ন্ত্রণ পানামাকে প্রদানের আগে ওয়াশিংটন বলেছিল— যেসব শর্তের ভিত্তিতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যদি পূর্ণ না হয়, তাহলে খালের নিয়ন্ত্রণ ফের যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ফিরে আসবে।”

পরে ওই দিনই ট্রুথ সোশ্যালে একটি ছবি পোস্ট করেন ট্রাম্প। সেই ছবিতে খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ছবি রয়েছে।ছবির নিচে ট্রাম্প লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের খালে সবাইকে স্বাগতম।”

তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পের এ দাবির পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জোসে রাউল মুলিনো বলেছিলেন, এই খালের মালিক পানামা এবং কোনো কিছুর বিনিময়েই এই মালিকানা ছাড়বে না পানামার জনগণ।”

সোমবার দায়িত্ব গ্রহনের প্রথম দিন বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। এসব আদেশের মধ্যে পানামা খাল দখল সংক্রান্ত আদেশও ছিল। সেই আদেশে ট্রাম্প লেখেন, “পানামা খালে আমেরিকান জাহাজের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া হচ্ছে এবং আমাদের জাহাজকে ভালো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। আমরা পানামা খাল ফিরিয়ে নিচ্ছি।”

এর পরেই এ ইস্যুতে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবর চিঠি দেন পানামার প্রেসিডেন্ট।

 

সূত্র : এএফপি, এনডিটিভি অনলাইন/ এনজি

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *