নিজস্ব প্রতিবেদক
৩১ আগস্ট ২০২৪
ক্ষমতার পালাবদলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও দখলদারির অভিযোগ আসছে। এসবের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কেউ বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করতে এলে তাকে ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে দিন। আজ শনিবার দুপুরে কুমিল্লার লালমাই উপজেলার ছোট শরীফপুর এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণকালে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
স্থানীয়দের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনাদের এলাকায় কেউ যদি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে তাহলে তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিন। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার মতো খবর প্রকাশ হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান দলটির মহাসচিব। যারা বিশৃঙ্খলা করবে তাদের ঠাঁই বিএনপিতে হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
ষড়যন্ত্র চলছে দাবি করে ফখরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, সেই বিজয়কে নস্যাৎ করার চেষ্টা চলছে। আজ আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে আলাদা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা সবাই সজাগ থাকবেন।
সরকারকে বিএনপি সময় দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন যে সরকার সেটি মাত্র ২০-২২ দিন হলো। আমরা তাদের সময় দিতে চাই। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তারা তৈরি করতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা যদি ভালো একটা নির্বাচন করতে পারি, যদি জনগণের মনোনীত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া যায়, তবেই জনগণের আস্থা ফিরবে। তাই আমরা এই সরকারকে বলেছি, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে জনগণের মনোনীত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়কআমিনুর রশিদ ইয়াছিন প্রমুখ।
এছাড়া আজ বিকেলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, হাসিনার মন্ত্রী-এমপিরা কোথায়? ওরা আজ পালিয়েছে। আমরা কি পালিয়েছি, বেগম জিয়া কি পালিয়েছেন? কিন্তু ওরা পালিয়েছে। ওদের পালিয়ে যেতে হয়েছে। কেন? আমাদের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের মুখে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আওয়ামী লীগ পালিয়ে চলে গেছে, কিন্তু ওদের ভূত-প্রেতাত্মারা এখনো পালায়নি। তারা আবারও চেষ্টা করবে কী করে তারা ফিরে আসতে পারে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ১৫-১৬ বছর ধরে অত্যাচারিত হয়েছি। আমাদের প্রায় ৭০০ মানুষকে গুম করে দিয়েছে। লাকসামের পারভেজ, হিরুকে গুম করে দিয়েছে। ঢাকায় প্রায় ৭০০ লোককে গুলি করেছে। আমাদের কয়েক হাজার লোককে গুলি করে হত্যা করেছে। এমনকি এই আন্দোলনে তারা রাস্তার মধ্যে আমাদের ছেলে-মেয়েদের পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে। এদের হাত থেকে আমরা এখন মুক্ত হলেও এই যে এখন স্বাধীনতা, এই স্বাধীনতাকে সংহত করতে হবে। এটাকে এখন জোরদার করতে হবে। ছাত্র-জনতার যে ঐক্য তৈরি হয়েছে সেই ঐক্যকে আরও শক্ত করে ধরতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা এখানে কোনো নির্বাচনের ক্যাম্পেইন করতে আসিনি। আমরা এসেছি আমাদের অনেক ভাইবোন বন্যায় কষ্ট পেয়েছেন, দুর্গত হয়েছেন, তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য। বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা এখানে এসেছি। আজকে আমরা কোনো নির্বাচনের কথা বলব না, আমরা বাংলাদেশের কথা বলতে চাই। যে ফ্যাসিবাদ ফিরে গেছে তারা যাতে আবার ফিরে আসতে না পারে। সেজন্য বর্তমানে যে সরকার আছে, তাদেরকে আমাদের সহযোগিতা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই স্বাধীনতাকে সুসংহত করতে হবে। আজকে ওরা চলে গেছে বলে আমরা একেবারে স্থায়ী হয়ে গেছি, যা কিছু করতে পারি… না, যা খুশি তা করতে গেলে আমাদের এই স্বাধীনতা থাকবে না। ওরা আবার ফিরে আসবে। আবার আমাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করবে। এই মুহূর্তে আমরা যেটা চিন্তা করব সেটা হচ্ছে আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করব। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে সহযোগিতা করব। প্রশাসনকে সহযোগিতা করব। ঐক্য দৃঢ় রেখে একসঙ্গে কাজ করব।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা ৩১ দফা দিয়েছিলাম সংস্কার করার জন্য। এখন যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা আছে এভাবে রাষ্ট্র চলতে পারে না। এজন্য আমাদের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে হবে। বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের পুলিশ প্রশাসনকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমাদের মিডিয়াকে ঢেলে সাজাতে হবে। সর্বোপরি ইলেকশন কমিশনকে ঢেলে সাজাতে হবে। আমরা যেন ভোট দিতে পারি, আমার ভোট আমি দিতে পারি, যাকে খুশি তাকে দিতে পারি সেই ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য তো সময় লাগবে। সেই সময় পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। আমরা তৈরি হব। আমরা নিজেদের মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাব। আমাদের যাতে মানুষ খারাপ না বলে।
এ সময় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, বিএনপির কুমিল্লা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, বিএনপির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দাউদকান্দি (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, শনিবার কুমিল্লার লালমাই এলাকায় বন্যা দূর্গতদের দেখতে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অভ্যর্থনা জানান বিএনপি নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন। সকাল সাড়ে দশটায় চট্টগ্রাম বিভাগের স্বাগতিক দাউদকান্দি টোল প্লাজায় তাকে স্বাগত জানানো হয়। এসময় কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ আক্তারুজ্জামান সরকার,দাউদকান্দি উপজেলা বিএনপি আহবায়ক আব্দুল লতিফ ভুইয়া, গৌরীপুরে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হাশেম ও রায়পুরে ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন বিএনপি আহবায়ক মোঃ ইব্রাহিম খলিল স্বাগত জানান।
জা ই / এনজি