সকাল ১১:২৫ | মঙ্গলবার | ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৫শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বসন্তকাল | ৯ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

কড়া নাড়ছে ঈদ : পোশাক জুতা সুগন্ধি কসমেটিকসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার ধুম

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ মার্চ ২০২৫

 

 

দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। আগামী সোমবার অথবা  মঙ্গলবার ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। ঈদ উপলক্ষে মার্কেট ও শপিংমলগুলো এখনও জমজমাট। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন রাজধানীবাসী। ক্রেতা সমাগম বাড়ায় বিক্রেতারাও খুশি। ঈদের মার্কেট গুলোতে ভীড়ের পাশাপাশি লোক সমাগম বেড়েছে সেমাই-চিনির দোকানেও। ঈদের দিন নামজ পড়তে যাওয়ার আগে একটু মিস্টি, সেমাই বা পায়েস খাওয়ার রীতি সেই দীর্ঘ দিনের। তাই এসব কিনতে এখন মুদি দোকানেও ভীড় লক্ষ করা গেছে।

ঈদের আগে মার্কেট ও শপিংমলগুলোগুলোতে পোশাক, জুতা, অলঙ্কার ও কসমেটিকসসহ প্রয়োজনীয় নানা জিনিসপত্র কেনাকাটার ধুম লেগেছে। পছন্দের পণ্যটি কিনতে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলগুলোর বিভিন্ন দোকান ঘুরছেন ও দরদাম করছেন ক্রেতারা। এদিকে, ফুটপাতে থাকা ছোট ছোট দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের অনেক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কেনাবেচা হচ্ছে জমজমাট।

শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর কৃষিমার্কেট, মিরপুর, খিলগাঁও, মৌচাক, সিদ্ধেশ্বরী, শান্তিনগর, নিউমার্কেট, ইস্কাটন, মগবাজার ও বায়তুল মোকাররম ও তার আশপাশের এলাকার কয়েকটি মার্কেট ও শপিংমলগুলো ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে বৃহস্পতিবার শেষ অফিস করেছেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই মধ্যে অনেকেই সেরে ফেলেছেন কেনাকাটা। যারা বাকি রয়েছে তারাও ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। শনিবার রাজধানীর সব এলাকায় সকাল থেকেই ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে শপিংমলের দোকানের চেয়ে ফুটপাত থেকে ক্রেতারা পছন্দের জিনিপত্র বেশি কিনতে দেখা গেছে।

সিদ্ধেশ্বরী আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের মায়িদা কালেকশনের কর্ণধার রমজান আলী বলেন, এবার ঈদে ভালো কেনাবেচা হচ্ছে। গতবারের তুলনায় এবার অনেক ভালো। ক্রেতারা সাচ্ছন্দে পোশাক কিনছেন। আর এক দিন বা দুই দিন হতে রয়েছে। আশা করা যায় এবার বেচাবিক্রি ভালো হবে।

মৌচাক মার্কেটের গলিতে বাচ্চাদের পোশাক বিক্রেতা মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। গত শুক্রবার ক্রেতাদের প্রচুর ভিড় ছিল। সে অনুযায়ী ভালো কেনাবেচা হচ্ছে। সকাল বা দুপুরের চেয়ে রাতে মার্কেটে ক্রেতারা বেশি আসছেন। মেয়ের জন্য জামা কিনতে আসা রফিকুল ইসলাম বলেন,এবার ঈদ ঢাকায় করব, তাই একটু দেরিতে কেনাকাটা করতে এসেছি। মেয়ের বয়স ৭ বছর। তার জন্য ৫৫০ টাকায় একটি ফ্রক কিনেছি। ফর্চুন শপিংমলের আলভি ফ্যাশনের বিক্রেতা সুমন বলেন, এবার ঈদে পাকিস্তানি থ্রি পিস ভালো বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা পচ্ছন্দসই পণ্য বেছে বেছে কিনছেন।

বায়তুল মোকাররমের সামনে থেকে জুতা কিনেছেন মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ঈদে নিজের জন্য জুতা কিনেছি।দাম বেশি চাইলেও দামাদামি করে কেনা লাগছে। দাম সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে।

রাজধানীর নিউ মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও তার আশপাশের এলাকার কয়েকটি মার্কেট ঘুরে জুতার দোকানে প্রচুর ভিড় দেখা যায়। এখন ক্রেতারা শেষ সময়ের কেনাকাটা করছেন। কেউ নিজের জন্য কিনছেন, কেউ তার সন্তানের জন্য কিনছেন। নুরজাহান মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ দোকানে রয়েছে ক্রেতাদের ভিড়। কেউ দামাদামি করছেন, কেউ পছন্দের পোশাক কিনে খুশি মনে বাড়ি যাচ্ছেন।

নিউমার্কেটের বেস্ট কালেকশনের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এখানে ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, গেঞ্জি, ফতুয়া বিক্রি করে থাকি। এই মার্কেটে দামও তেমনটা বেশি না। সব শ্রেণির মানুষের হাতের নাগালেই পোশাকের দাম।
উৎসবের এ দিনকে আরও রঙিন ও সুরভিত করে তুলতে শেষ সময়ের কেনাকাটায় যোগ হয়েছে আতর-টুপি আর জায়নামাজ। তবে এবার অন্যসব জিনিসের মতই আতরের বাজারেও পড়েছে বাড়তি দাম নেওয়ার হিড়িক। দোকানিরা বলছেন, হরেক রকম সুগন্ধির দাম অন্তত দেড়গুণ বেড়েছে, বেড়েছে বেচাকেনাও। লালবাগ থেকে হোসেন আলীর সঙ্গে টুপি আতর কিনতে মার্কেটে এসেছেন ছেলে রেজোয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, ঘরের সবার জন্য জামা-কাপড়সহ অন্যান্য সব কেনাকাটা শেষ। তবে ঈদের জন্য নতুন করে টুপি এবং আতর কেনা বাকি ছিল। বাবাকে নিয়ে আতর- টুপি কিনতে এসেছি। বাবার পছন্দ কড়া সুবাসের আতর। আমি নেব হালকা সুবাসের। এরপর পছন্দমতো টুপি আর জায়নামাজ কিনব। ফাহমিদ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাবার জন্য জায়নামাজ কিনতে এসেছি। ঈদের দিন আমাদের দুই-তিন প্রজন্মের মিলন হয়।

বায়তুল মোকারমে মার্কেটের আল হারমাইনের সহকারী ম্যানেজার রাকিব হোসাইন বলেন, বরাবরের মতো এবারো আল হারামাইন পারফিউমস ব্যতিক্রমী কিছু করছে। ০% ইএমআই এবারের ঈদের সেরা আকর্ষণ। ফ্রেগনেন্সের ধরন বিবেচনায় আমাদের কাছে সুইট, ফ্লোরাল, ফ্রুটি এবং উড বেজড পারফিউম রয়েছে। তিনি বলেন, অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে আসা পারফিউমগুলো আমাদের কালেকশনে রয়েছে, এর মধ্যে ফ্লোরাল ফেয়ার, লাভেঞ্চার সিরিজ, ব্ল্যাক উড এবং ফারাসা অতি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

আতর টুপির সঙ্গে তসবি কেনা শুরু হয়। অন্যসময় টুকটাক বিক্রি হলেও রমজানে আতর তসবির দোকানে ভিড় বাড়ে। নানা পদের তসবি আছে বাজারে। কাঠের তৈরি, পাথরের তৈরি ও ক্রিস্টালের তৈরি তসবিও আছে বাজারে। বৈচিত্র্যময় নকশা ও ম্যাটেরিয়ালের জায়নামাজেও ভরপুর দেখা গেছে ওখানকার দোকানগুলো। সুতি, মখমল, সিলিকন, পশমিসহ বিভিন্ন রকম জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটে। বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, কাশ্মীর, বেলজিয়াম, চীন, সৌদি আরব ও কাতারের জায়নামাজ পাওয়া যাচ্ছে।

 

জা ই / এনজি

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *