রাত ৪:৪১ | শুক্রবার | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, গ্রীষ্মকাল | ১৯শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ সামনে রেখে বাড়ছে মুরগির দাম : সিন্ডিকেটকে দুষছেন খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
২৯ মার্চ ২০২৫

 

আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মুরগির দাম বাড়ার জন্য কর্পোরেট সিন্ডিকেটের কারসাজিকে দায়ী করেছেন খামারিরা। তারা বলছেন, বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে এক চরম সংকটের মুখে রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির দাম বাড়ার পেছনে কর্পোরেট কোম্পানির সিন্ডিকেট ও প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির একটি জটিল সম্পর্ক রয়েছে। ডিম-মুরগির দাম বাড়লেই সবাই সজাগ হয়। কিন্তু ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়লেও সরকার নীরব থাকে।

শনিবার (২৯ মার্চ) বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব অভিযোগ করা হয়েছে।

এতে সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, বড় কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেট করে ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যদি ডিম-মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলে, তবে ফিড ও বাচ্চার বাজারেও একইভাবে অভিযান চালিয়ে উৎপাদন খরচ কমানো উচিত। না হলে সাধারণ খামারিরা টিকে থাকতে পারবে না।

তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিরা বর্তমানে ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদনে খরচ করছেন ১৭০-১৮০ টাকা। যেখানে কর্পোরেট কোম্পানির উৎপাদন খরচ ১৩০-১৩৫ টাকা। এর ফলে প্রতি কেজিতে প্রায় ৩০-৪০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে খামারিদের। উৎপাদন খরচের এই বৈষম্যের কারণে তারা বাজারে প্রতিযোগিতা করতে পারছেন না এবং প্রতিনিয়ত লোকসানের মুখে পড়ছেন। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে মুরগির বাচ্চার দাম ছিল ৪৫-৫৫ টাকা। তখন ১ কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ছিল ১৫৫ টাকা, আর বাজারদর ছিল ১৮০-১৯০ টাকা। বর্তমানে মুরগির বাচ্চার দাম বেড়ে ৭০-৮০ টাকা হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ ১৭০-১৮০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। আর বাজারে মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৩০ টাকায়। যা অনেকের কাছে ন্যায্য মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রান্তিক খামারিরা লাভবান হচ্ছেন না।

অভিযোগ করে সুমন হাওলাদার বলেন, মুরগির বাচ্চার অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি পোল্ট্রি শিল্পে সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ। ঈদের আগে হঠাৎ করেই বাচ্চার দাম ৪৫-৫৫ টাকা থেকে ৭০-৮০ টাকায় বেড়ে গেছে। এর ফলে খামারিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অথচ কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তুলনামূলকভাবে কম দামে উৎপাদন করতে পারছে। কোম্পানিগুলো নিজেদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য বাচ্চার দাম বাড়িয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করেছে, যা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক খামারিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সিন্ডিকেটের আরেকটি বড় কৌশল হলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা। যখন প্রান্তিক খামারিরা মুরগি উৎপাদন করে বাজারে সরবরাহ বাড়ান, তখন কর্পোরেট কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে দাম কমিয়ে দেয়, ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা লোকসানের মুখে পড়েন। কিন্তু যখন প্রান্তিক খামারিরা লোকসানের কারণে উৎপাদন কমিয়ে দেন, তখন বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এতে একচেটিয়া সুবিধা পায় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো।

তিনি বলেন, ঈদুল ফিতর ও শবে কদরের সময় দেশে মাংসের চাহিদা বাড়ে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাচ্চা, খাদ্য ও উৎপাদন সামগ্রীর দাম বাড়িয়ে দেয়। এতে খামারিরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি সাধারণ ভোক্তার ওপরও এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কর্পোরেট কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব খামার ও চুক্তিভিত্তিক খামারের মাধ্যমে তুলনামূলকভাবে কম দামে মুরগি উৎপাদন করলেও বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে মুনাফা করে। বড় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো প্রায়ই লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে মুরগির বাচ্চার দাম বাড়ায়। কিন্তু এগুলো পরিকল্পিত কারসাজি।

দ্রুত সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে। ফলে সাধারণ খামারিরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারছেন না। এটি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যদি এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা না হয়, তাহলে দেশের পোল্ট্রি শিল্পের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়ে যাবে। যার প্রভাব পড়বে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর। তাই এই সংকট নিরসনে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন বলেও তিনি বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন।

 

 

টি আই / এনজি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *